ধর্ম ডেস্ক
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
সময় মুমিনের জীবনের শ্রেষ্ঠ ও মহামূল্যবান সম্পদ। প্রত্যেক সচেতন বান্দা মাত্রই সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে সচেষ্ট থাকেন। প্রতি মুহূর্তের ভাবনা এই যে, সময়কে কীভাবে আরও অর্থবহ করে তোলা যায়। কেননা পরকালের তুলনায় দুনিয়াবি জীবন খুবই ছোট। দুনিয়ার ছোট্ট সময়ের আমল নিয়ে জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা হবে। পরকালে মানুষের মনে হবে, দুনিয়ায় তারা দিনের সামান্য সময় অতিবাহিত করেছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
‘তিনি যখন (কেয়ামতের দিন) তাদের একত্র করবেন, তাদের মনে হবে, (পৃথিবীতে) তারা যেন দিনের সামান্য সময় অতিবাহিত করেছে। (সেখানে) তারা একে অন্যকে চিনতে পারবে। আল্লাহর সাক্ষাৎ যারা অস্বীকার করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না। (সুরা ইউনুস: ৪৫)
অবিশ্বাসীরা সেসময় উপলব্ধি করতে পারবে যে, তারা দুনিয়ার জীবনের সামান্য স্বাদ ও লাভের বিনিময়ে নিজেদের চিরন্তন ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। ‘এ পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়। নিশ্চয় পরকালের জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত’ (সুরা আনকাবুত: ৬৪)। আরও ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা দুনিয়ায় কত বছর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন বা দিনের কিছু অংশ’।’’ (সুরা মুমিনুন: ১১৩)
আরও পড়ুন: মসিবত যেভাবে জান্নাতের ওসিলা
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহর শপথ! ইহকাল-পরকালের তুলনা অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখল যে, কতটুকু পরিমাণ এতে পানি লেগেছে। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন।’(সহিহ মুসলিম: ২৮৫৮)
এ সংক্ষিপ্ত জীবনের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে পরকালের কথা ভেবে সময়ের সদ্ব্যবহার করা উচিত। বেশি বেশি নেক আমল করলেই মিলবে চূড়ান্ত সার্থকতা। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তোমরা তো পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক’(সুরা আলা: ১৬)।
সুরা আনআমে বর্ণিত হয়েছে, ‘পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতূক ছাড়া কিছুই নয়; সুতরাং যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই শ্রেয়’ (সুরা আনআম: ৩২)। পরকালে জান্নাতের পুরস্কার রয়েছে, তা ভুলে দুনিয়ার মোহে বিভ্রান্ত হওয়া বোকামি বৈ কিছু নয়। কারণ মানুষের আসল ও চিরস্থায়ী জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন। আল্লাহ বলেন—
‘নারী, সন্তান, সোনা-রুপার অঢেল ধনসম্পদ, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু, খেত-খামার এসব জিনিসের প্রতি মানুষের ভালোবাসা শোভনীয় করে তোলা হয়েছে। এসব মূলত দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। স্থায়ী জীবনের উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে।’(সুরা আলে ইমরান: ১৪)
আরও পড়ুন: পরকালের তুলনায় দুনিয়া ‘এক বিন্দু পানি’
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় বের হও, তখন তোমরা মাটি জড়িয়ে ধরো? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য’(সুরা তাওবা: ৩৮)
হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতে চাবুক পরিমাণ জায়গাও দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে, তার থেকে উত্তম’(সহিহ বুখারি: ৩২৫০, সহিহ মুসলিম: ১৮৮১)। এই সংক্ষিপ্ত ও নগণ্য দুনিয়ায় কাফেরদের মতো ধোঁকায় না পড়তে বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
‘যারা কুফরি করেছে, নগরসমূহে তাদের বিচরণ তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। (এগুলো) অল্প ভোগ্যসামগ্রী। এরপর তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম আর তা কতইনা মন্দ বিছানা।’(সুরা আলে ইমরান: ১৯৬-১৯৭)
অতএব, পৃথিবীর ধন-সম্পদের প্রতি অতি মনোনিবেশ না করে পরকালে সম্পদশালী হওয়ার জন্য মুমিন মুসলমানের সদা সচেষ্ট হওয়া উচিত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। তারা মুমিনদের উপহাস করে। অথচ কেয়ামতের দিন মুত্তাকিরাই তাদের ওপর থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অপরিমিত রিজিক দান করেন।’(সুরা বাকারা: ২১২)
আরও পড়ুন: দাজ্জালের কঠিন ফিতনা, বাঁচার উপায়
মানুষের জীবন আসলে কিছু দিনের সমষ্টি মাত্র। একটি দিন চলে যাওয়ার অর্থ জীবনের একটি অংশ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। অসংখ্য হাদিসে সময়কে মূল্য দেওয়ার এবং জীবনের গুরুত্ব প্রদানের তাগিদ রয়েছে। এক হাদিসে নবীজি (স.) বলেন, ‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের আগমনের আগে গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩৫৪৬০)
এমনকি জান্নাতের অনন্ত সুখের জায়গায় গিয়েও মানুষ অবহেলায় হারিয়ে ফেলা সময়ের কারণে আফসোস করবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘জান্নাতের অধিবাসীগণ দুনিয়ার কোনো কিছুর জন্য আফসোস করবে না। শুধু সেই সময়গুলো জন্য আফসোস করবে, যা আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে।’ (তাবারানি: ২০/৯৩; তারগিব: ২/৩৭৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময়ের গুরুত্ব বোঝার ও সদ্ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।