পরকালের জীবন চিরস্থায়ী। দুনিয়ার জীবন খুবই সীমিত সময়ের। পরকালে মানুষের মনে হবে, দুনিয়ায় তারা দিনের সামান্য সময় অতিবাহিত করেছে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
‘তিনি যখন (কেয়ামতের দিন) তাদের একত্রিত করবেন, তাদের মনে হবে, (পৃথিবীতে) তারা যেন দিনের সামান্য সময় অতিবাহিত করেছে। (সেখানে) তারা একে অন্যকে চিনতে পারবে। আল্লাহর সাক্ষাৎ যারা অস্বীকার করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না। (সুরা ইউনুস: ৪৫)
অবিশ্বাসীরা সেসময় উপলব্ধি করতে পারবে যে, তারা দুনিয়ার জীবনের সামান্য স্বাদ ও লাভের বিনিময়ে নিজেদের চিরন্তন ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। ‘এ পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়। নিশ্চয় পরকালের জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৪)
সেই অনন্ত জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই ক্ষুদ্র। এ কথা পবিত্র কোরআনে অনেক স্থানে এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা দুনিয়ায় কত বছর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন বা দিনের কিছু অংশ’।’’ (সুরা মুমিনুন: ১১৩)
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহর শপথ! ইহকাল-পরকালের তুলনা অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখল যে, কতটুকু পরিমাণ এতে পানি লেগেছে। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন।’(সহিহ মুসলিম: হা/২৮৫৮)
এ সংক্ষিপ্ত জীবনের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে পরকালের কথা ভেবে বেশি বেশি নেক আমল করলেই মিলবে চূড়ান্ত সার্থকতা। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তোমরা তো পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক’(সুরা আলা: ১৬)।
বিজ্ঞাপন
সুরা আনআমে বর্ণিত হয়েছে, ‘পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়; সুতরাং যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয়।’ (সুরা আনআম: ৩২)
পরকালে জান্নাতের পুরস্কার রয়েছে, তা ভুলে দুনিয়ার মোহে বিভ্রান্ত হওয়া বোকামি বৈ কিছু নয়। কারণ মানুষের আসল ও চিরস্থায়ী জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন। আল্লাহ বলেন—
‘নারী, সন্তান, সোনা-রুপার অঢেল ধনসম্পদ, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু, খেত-খামার এসব জিনিসের প্রতি মানুষের ভালোবাসা শোভনীয় করে তোলা হয়েছে। এসব মূলত দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। স্থায়ী জীবনের উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে।’(সুরা আলে ইমরান: ১৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় বের হও, তখন তোমরা মাটি জড়িয়ে ধরো? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য’(সুরা তাওবা: ৩৮)
অর্থ-সম্পদের দিক থেকে দুনিয়া একেবারেই নগণ্য। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) আলিয়া অঞ্চল থেকে মদিনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এসময় রাসুল (স.)-এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে এর কান ধরে বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী’? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোনো কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কী করব? তখন রাসুল (স.) বললেন: ‘বিনা পয়সায় তোমরা কি এটি নিতে আগ্রহী?’ তারা বললেন, এ যদি জীবিত হত, তবুও তো এটি ত্রুটিযুক্ত। কেননা এর কান ছোট। আর এখন সেটা তো মৃত, আমরা কীভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! এটা তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশী নগণ্য।’ (সহিহ মুসলিম: ২৯৫৭)
আয়তনের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতে চাবুক পরিমাণ জায়গাও দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে, তার থেকে উত্তম।’(সহিহ বুখারি: ৩২৫০, সহিহ মুসলিম: ১৮৮১)
এই সংক্ষিপ্ত ও নগণ্য দুনিয়ায় কাফেরদের মতো ধোঁকায় না পড়তে বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
‘যারা কুফরি করেছে, নগরসমূহে তাদের বিচরণ তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। (এগুলো) অল্প ভোগ্যসামগ্রী। এরপর তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম আর তা কতইনা মন্দ বিছানা’(সুরা আলে ইমরান: ১৯৬-১৯৭)
সুতরাং পৃথিবীর ধন-সম্পদের প্রতি অতি মনোনিবেশ না করে পরকালে সম্পদশালী হওয়ার জন্য মুমিন মুসলমানের সদা সচেষ্ট হওয়া উচিত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। তারা মুমিনদের উপহাস করে। অথচ কেয়ামতের দিন মুত্তাকিরাই তাদের ওপর থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অপরিমিত রিজিক দান করেন।’(সুরা বাকারা: ২১২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার পেছনে অতিরিক্ত লালায়িত না হয়ে পরকালীন জীবনকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।