images

ইসলাম

দুনিয়াতেও শাস্তি পেতে হয় অহংকারী ব্যক্তিকে

ধর্ম ডেস্ক

০৭ আগস্ট ২০২২, ০৩:৪৫ পিএম

`অহংকার পতনের মূল’—কথাটির সত্যতা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রমাণিত। ‘নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের ভালোবাসেন না’ (সুরা নাহল: ২৩)। ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম গুনাহ হলো অহংকার। মহান আল্লাহ বলেন—

‘যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সেজদা করো, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল। সে শুধু অহংকারবশত সেজদা করতে অস্বীকার করল। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা: ৩৪)

অহংকারী ব্যক্তিকে সবাই নিকৃষ্ট মানুষ মনে করে এবং ঘৃণা করে। এটি হলো একজন অহংকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ শাস্তি। তার পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬৭)

এছাড়াও অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে লাভবান হতে পারে না। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন থেকে নসিহত লাভ করার সুযোগ দেওয়া হয় না অহংকারী ব্যক্তিকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা অন্যায়ভাবে জমিনে অহংকার করে আমার আয়াতসমূহ থেকে তাদেরকে আমি অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব...।’ (সুরা আল-আরাফ: ১৪৬)

নবীজি (স.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি এক জোড়া জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে (রাস্তা দিয়ে) চলছিল। তা নিয়ে খুব গর্ব বোধ হচ্ছিল তার। তার জমকালো লম্বা চুলগুলো সে খুব যত্নসহকারে আঁচড়ে রেখেছিল। হঠাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে ভূমিতে ধসিয়ে দেন এবং সে কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই নিচের দিকে নামতে থাকবে।’ (বুখারি: ৫৭৮৯)

আরও পড়ুন: আপনার মধ্যে অহংকার আছে কি না বুঝবেন যেভাবে

সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘একজন মানুষ সর্বদা অহংকার করতে থাকে, অতঃপর একটি সময় আসে, তার নাম জাব্বারিনদের (অহংকারী জালেম) খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তখন তাকে এমন আজাব গ্রাস করে, যা অহংকারীদের গ্রাস করেছিল’। (তিরমিজি: ২০০০, হাদিসটি হাসান)

এই হাদিসের বাস্তব নমুনা হলো- মানুষ প্রথমেই বড় ধরণের জালেম হয় না। বরং তা হলো চলমান প্রক্রিয়া। এক পর্যায়ে সে জাব্বারিনদের কাতারে অর্থাৎ অহংকারী ফেরাউন, হামান ও কারূনের কাতারে শামিল হয়।

অহংকারীর পরিণাম বর্ণনায় সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) বলেন, ‘একদিন এক লোক রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দরবারে বাম হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করলে আল্লাহর রাসুল (স.) তাকে বললেন, তুমি ডান হাত দিয়ে খাও। উত্তরে লোকটি বলল, আমি পারছি না। তার কথার প্রেক্ষাপটে রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে প্রশ্ন করলেন—

তুমি পারবে না? মূলত রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কথা অমান্য করতে তাকে অহংকারই বিরত রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি আর কখনোই তার হাতকে তার মুখ পর্যন্ত ওঠাতে পারেনি। (সহিহ মুসলিম: ২০২১)

আরও পড়ুন: সুন্দর মৃত্যুর ১০ আমল

ওসব অহংকারী কি ভয় করে না যে, তাকে দেওয়া সকল নেয়ামত আল্লাহ তুলে নিতে পারেন? এবং তাকে কেয়ামত পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ করে ফেলতে পারেন? অথচ অহংকার করার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে আমারই পোশাক এবং গর্ব-অহংকার হচ্ছে আমারই চাদর। তাই যে ব্যক্তি এ দুয়ের কোনোটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেবো। (রিয়াজুস সালেহিন: ৬২৩; মুসলিম: ২৬২০; আবু দাউদ: ৪০৯০, ইবনু মাজাহ: ৪১৭৪, আহমদ: ৭৩৩৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অহংকারমুক্ত এবং সুন্নত অনুযায়ী জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।