শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

আপনি কি অহংকারী? যেভাবে বুঝবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

আপনি কি অহংকারী? যেভাবে বুঝবেন

অহংকার নেক আমল ও সওয়াবকে নষ্ট করে দেয়। যার অন্তরে অহংকার আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না বলে একাধিক সহিহ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত। সহিহ মুসলিমে ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে আছে—لا يدخلُ الجنَّةَ من كانَ في قلبِه مثقالُ ذرَّةٍ مِن كِبرِ ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’

অনেকে অন্তরে অহংকার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অহংকারমুক্ত মনে করে থাকেন। তিনি উপলব্ধিই করতে পারছেন না যে, তার মনে অহংকার বাসা বেঁধেছে। নিজের মধ্যে অহংকার আছে কিনা তা যাচাই করবেন যেভাবে—


বিজ্ঞাপন


১. নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্যকে তুচ্ছ ভাবার বদভ্যাস থাকলে বুঝে নেবেন আপনি নিশ্চিত অহংকারী। ঠিক এই দোষেই অভিশপ্ত হয়েছিল ইবলিস। 

হজরত আদম (আ.)-কে সিজদা দেওয়ার নির্দেশের বিরোধিতায় সে আল্লাহ তাআলাকে যুক্তি দেখিয়েছিল, ‘আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’ (সূরা আরাফ: ১২)। অতএব, ‘আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন?’ (সূরা ইসরা: ৬১)। এই অহংকারের প্রতিউত্তর আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে এভাবে দিয়েছেন— ‘বের হয়ে যাও এখান থেকে। কেননা তুমি অভিশপ্ত। ’ (সূরা সোয়াদ: ৭৬)

২. সত্যকে অস্বীকার করা। নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা, আরও অসংখ্য দাম্ভিক সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফেরাউন বলেছিল, আমি তোমাদের বড় রব। সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা থাকলে বুঝে নিতে হবে যে, ভেতরে লালিত হচ্ছে ঘৃণ্য অহংকার। রাসুল (সা.) বলেছেন—

‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। তখন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকেরা চায় যে, তাদের পোশাক সুন্দর হোক, জুতা জোড়া সুন্দর হোক। জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্যকে দম্ভের সঙ্গে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। ’ (মুসলিম: ৯১)

৩. হাঁটাচলায় বড়ত্ব প্রকাশ করা অহংকারীদের কাজ। বর্তমান সমাজে দেখা যায়—পেছনে দলবল নিয়ে কিছু মানুষ এমনভাবে চলেন যেন আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ। এধরণের সামান্য লক্ষণ দেখেই হজরত ওমর (রা.) সাবধান করেছিলেন উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে। হজরত উবাই (রা.)-এর পেছন পেছন একদল লোককে চলতে দেখে খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁকে চাবুক দিয়ে আঘাত করলেন। এতে চমকে উঠে তিনি জিজ্ঞেস করলেন—

ব্যাপার কী হে আমিরুল মুমিনিন! জবাবে খলিফা বলেন, ‘এটা অনুসরণকারীর জন্যে লাঞ্ছনাকর এবং অনুসৃত ব্যক্তিকে ফিতনায় (অহংকারে) নিক্ষেপকারী। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩১২৪৪)

৪. অর্থ-সম্পদ ও সৌন্দর্যের কারণে অন্যের প্রতি অন্তরে তুচ্ছভাব উদ্রেক হওয়াটা অহংকারের লক্ষণ। একদিন সাহাবি আবু জর গিফারি (রা.) হাবশি বেলাল (রা.)-কে তাঁর কালো মায়ের দিকে ইঙ্গিত করে তাচ্ছিল্য করলে রাসুল (সা.) তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন—

 ‘হে আবু জর! তুমি তাকে তার মায়ের নামে তাচ্ছিল্য করলে? তোমার মধ্যে জাহেলিয়াত রয়েছে। ’ (বুখারি: ৩০)

৫. দরিদ্র মানুষ ও অধীনস্থদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা অহংকারের একটি বড় আলামত। প্রভাব খাটিয়ে যারা এদের হক নষ্ট করে তাদের শাস্তি অত্যন্ত লাঞ্ছনাকর। এধরণের ব্যক্তিতে কিয়ামতের দিন পিঁপড়াসদৃশ করে লাঞ্ছনাকর অবস্থায় হাঁটানো হবে। (তিরমিজি: ২৪৯২)

৬. ভুল স্বীকার না করা এবং নিজের ভুল অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অহংকারীদের কাজ। আবদুর রহমান বিন মাহদি (রহ.) বলেন, আমরা এক জানাজায় ছিলাম। সেখানে ওবায়দুল্লাহ বিন হাসান উপস্থিত ছিলেন, যিনি তখন রাজধানী বাগদাদের বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। আমি তাঁকে একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করলে তিনি ভুল জবাব দেন। তখন আমি বললাম, ‘আল্লাহ আপনাকে সংশোধন হওয়ার তাওফিক দিন! এ মাসআলার সঠিক জবাব হলো এই, এই। তখন তিনি কিছুক্ষণ দৃষ্টি অবনত রাখেন। অতঃপর মাথা উঁচু করে দুই বার বলেন, ‘এখন আমি প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি লজ্জিত।’ অতঃপর বলেন, ‘ভুল স্বীকার করে হকের লেজ হওয়া বাতিলের মাথা হওয়ার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়। ’ (তারিখু বাগদাদ: ১০/৩০৮)

৭. নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবা অহংকারের বড় আলামত। মানুষ ও সকল প্রাণী আল্লাহর দয়ায় চলে। কাউকেই আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ করেননি। তাই যারা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে অন্যকে অবজ্ঞা করে তাদের ব্যাপারে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—

‘মানুষ অবশ্যই সীমা লঙ্ঘন করে। কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। ’ (সূরা আলাক: ৬-৭)

উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটি প্রতিয়মান হয় যে, অহংকারীরা চূড়ান্তভাবেই বিফল। মনের কোণে ঠাঁই নেওয়া সুপ্ত অহংকার দূর করতে না পারলে সকল পূণ্যের কাজই বৃথা। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত অহংকার দূর করার প্রাকটিস করা। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত তাবিঈ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু হানযালা রাহমাতুল্লাহি আলাইহ একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম মাথায় এক বোঝা খড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে বলা হলো, আপনি কেন এ কাজ করছেন? আল্লাহ তো আপনাকে সচ্চলতা দিয়েছেন, যাতে এমন না করলেও আপনার চলে। তিনি বলেন, অন্তরের অহংকার ও অহংকারবোধকে আহত করতে চাই। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যার অন্তরে শরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (হায়সামি, মুসতাদরাকে হাকেম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অহংকারমুক্ত জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএ/

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর