ধর্ম ডেস্ক
০২ আগস্ট ২০২২, ০৩:৫৬ পিএম
ঐতিহাসিক নানা ঘটনাপ্রবাহের নির্যাস পবিত্র আশুরা। আরবি ‘আশারা’ শব্দ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। আশারা অর্থ দশ, আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায় আরবি বর্ষপঞ্জি হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে। এছাড়াও এ মাসের ১০ তারিখে ১০টি বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে ইতিহাসের বিভিন্ন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সেরকম ১০টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হলো।
১) আল্লাহ তাআলা এই দিন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তার ইচ্ছায় এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।
২) মানবজাতির পিতা হজরত আদম (আ.)-কে এই দিন জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। আবার এই দিন আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেন। এছাড়াও এ দিনে মানবজাতির মা হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফার ময়দানে পৃথিবীতে প্রথম সাক্ষাৎ হয় আদম (আ.)-এর।
৩) আল্লাহর নবী নুহ (আ.)-এর জাতির লোকেরা আল্লাহর নাফরমানি করেছিল। বারবার সতর্ক করার পরও তারা আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায়, আল্লাহর শাস্তি মহাপ্লাবনে নিপতিত হয়। দীর্ঘ প্লাবন শেষে মহররমের ১০ তারিখে তিনি নৌকা থেকে ঈমানদারদের নিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসেন।
৪) আল্লাহর প্রিয়নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে অত্যাচারী বাদশাহ নমরুদ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। তিনি অগ্নিকুণ্ডে ৪০ দিন থাকার পর মহররমের ১০ তারিখ মুক্তি লাভ করেন।
৫) আল্লাহর নবী আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি এই দিনে মহান আল্লাহর রহমতে পূর্ণ সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য লাভ করেন।
আরও পড়ুন: আশুরা মানে কারবালা নয়
৬) হজরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন ইয়াকুব (আ.)-এর ১২ সন্তানের একজন। ১১ ভাই ষড়যন্ত্র করে তাঁকে কূপে ফেলে দেয়। মহান আল্লাহর অনুগ্রহে এক বণিক দল তাঁকে উদ্ধার করে। এরপর বণিকদলের প্রধান মিশরে গিয়ে তাঁকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেন।
পরবর্তীতে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। এরপর ১০ মহররম দীর্ঘ ৪০ বছর পর তিনি পিতা আইয়ুব (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
৭) আল্লাহ তাআলার আরেক নবী হজরত ইউনুস (আ.)। তিনি জাতির লোকদের প্রতি হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর নদী অতিক্রম করে দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান। পথিমধ্যে মাঝ নদীতে পতিত হন। আর তখন তাকে একটি বড় মাছ গিলে ফেলে। মাছের পেটে তিনি ৪০ দিন ছিলেন। এরপর ১০ মহররম আল্লাহর রহমতে মাছ তাকে নদীর তীরে ফেলে দেয় এবং তিনি মুক্তি লাভ করেন।
পড়ুন: আশুরায় মাতম: মনীষীদের মতামত
৮) বনি ইসরাইলের নবী হজরত মুসা (আ.)। তিনি ফেরাউনের জুলুম থেকে বাঁচতে সঙ্গী-অনুসারীসহ অন্যত্র চলে যান। নীল নদ পার হয়ে নিরাপদে পৌঁছে যান। আর অত্যাচারী ফেরাউন তার দলবলসহ নদীরে পানিতে ডুবে মারা যায়।
৯) ঈসা (আ.)-কে তাঁর জাতির লোকেরা হত্যা করার চেষ্টা করে। মহররমের ১০ তারিখ মহান আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন।
১০) কারবালার মর্মান্তিক বিয়োগান্তক ঘটনা। মহররম মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর নবী (স.)-এর প্রিয় নাতি হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন।
যদিও এসব ঘটনা-উপাখ্যানের অধিকাংশই সহিহ সূত্রে বর্ণিত নয়। কিছু ঘটনা দুর্বল হাদিসের মাধ্যমে ইতিহাসসিদ্ধ হয়েছে, আর কিছু মওজু। তবে নবী মুসা (আ.)-এর ঘটনা, ফেরাউন ও তার সৈন্যরা পানিতে ডুবে ধ্বংস হওয়ার ঘটনা এবং কারবালায় ইমাম হোসাইনের (রা.) হৃদয়বিদারক ঘটনাটি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত।