রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আশুরার দিনে কেবল ২ ঘটনা প্রমাণিত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৩, ০১:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

আশুরার দিনে কেবল ২ ঘটনা প্রমাণিত

মহররমের দশম দিবসকে ‘আশুরা’ বলা হয়। এই দিবসকে কেন্দ্র করে ইতিহাসে রচিত হয়েছে নানা ঘটনাপ্রবাহ। এসব ঘটনা-উপাখ্যানের অধিকাংশই মওজু তথা জাল, আর কিছু সহিহ সূত্রে বর্ণিত নয়। 

যেমন- আশুরার দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে। নির্ভরযোগ্য কোনো রেওয়ায়েতে এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই আসেনি। এছাড়াও আশুরার দিনে হজরত নূহ (আ.)-এর কিশতি জুদি পাহাড়ে থেমেছিল—সম্পর্কিত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে মুসনাদে আহমদে। এই বর্ণনাটির সনদ খুবই দুর্বল। (দেখুন- মুসনাদে আহমদ: ১৪/৩৩৫, হাদিস: ৮৭১৭, শায়েখ শুয়াইব আরনাউতকৃত হাশিয়াযুক্ত নুসখা) আশুরা কি, ১০ মহররমের ফজিলত, দশই মহররমের ফজিলত


বিজ্ঞাপন


কোনো রেওয়ায়েতে দেখা যায় যে, আশুরার দিনেই হজরত আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল হয়েছে। এ কথাটি মূলত আবুল কাসিম ইস্পাহানী (রহ) কর্তৃক সংকলিত ‘আত-তারগিব ওয়াত তারহিব’-এর ১৮৬৮ নং রেওয়ায়েতে এসেছে। কিন্তু এই রেওয়ায়েতের সনদ খুবই দুর্বল। এছাড়া আরও কিছু রেওয়ায়েতে ঘটনাটি এসেছে, সেগুলো মওজু। ইস্পাহানী (রহ) বর্ণিত ওই রেওয়ায়েতের সনদে দিরার ইবনে আমর নামে একজন রাবি আছেন, যার সম্পর্কে ইমাম ইবনে মায়ীন (রহ) বলেছেন, لا شيء তথা ‘কিছুই না’ ইংরেজিতে ‘নাথিং’। (লিসানুল মিজান: ৪/৩৪০)

আরও পড়ুন: আশুরার যে আমলে সারাবছর রিজিক প্রশস্ত থাকে

অবশ্য কোনো কোনো তাবেয়ি থেকে এ কথা বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরা আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল হওয়া সম্পর্কে আশুরার দিনের কথা বলতেন। (লাতাইফুল মাআরিফ, ইবনে রজব, পৃষ্ঠা: ১১৩-১১৫; আল-ইলাল ওয়া মারিফাতির রিজাল, আবদুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমদ, নম্বর: ৩৭৯৫)

একটি ঘটনায় দেখা যায়, ঈসা (আ.)-এর জন্ম আশুরার দিন হয়েছে। এ কথাটিও প্রমাণিত নয়। আবুল কাসিম ইস্পাহানি (রহ)-এর কিতাব ‘আত-তারগিব ওয়াত তারহিব’-এর পূর্বোক্ত রেওয়ায়েতেই এ কথাটি এসেছে। আগেই বলা হয়েছে, এর সনদ খুবই দুর্বল। এ ধরণের আরও অনেক কাহিনি সমাজে প্রচলিত রয়েছে। প্রায় সবগুলো ঘটনাই সহিহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। ১০ ই মহররম, ৯ মহরম, ১০ই মহররম এর তাৎপর্য


বিজ্ঞাপন


তাহলে কোন ঘটনা আশুরার দিন ঘটেছে বলে প্রমাণিত? এর উত্তর হলো—নবী-রাসুলদের মধ্যে কেবল মুসা (আ.)-এর ঘটনাই সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আশুরার দিনে মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা ফেরাউন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, দরিয়ায় রাস্তা বানিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে নিরাপদে অপর প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং এই রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার সময় ফেরাউন ও তার সৈন্যদেরকে দরিয়ায় ডুবিয়ে ধ্বংস করার ঘটনাটিও একই দিনে অর্থাৎ আশুরার দিনেই ঘটেছিল।

এই ঘটনা সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিমসহ হাদিসের অনেক কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। মহররম মাসের ইতিহাস, মহররমের আলোচনা

আশুরার দিনটিতে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। সেটি হলো— রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররমে কারবালায় হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা। তিনি নবী না হলেও সম্মানিত সাহাবি ছিলেন এবং তিনি ছিলেন বিশ্বনবী (স.)-এর নাতি। হাদিসে নবীজির নাতিদ্বয়ের ব্যাপারে এসেছে, ‘হাসান-হুসাইন হবেন জান্নাতের যুবকদের সরদার।’ (তিরমিজি: ৩৭৮১) ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের করুণ ঘটনাটি মানুষ ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারে না।

তবে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো আমল করা যাবে না। ইসলামি শরিয়তে নবীজির ইন্তেকালের পরের কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন বিধান আবিষ্কার করা বিদআত তথা দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজিত আমল। ইসলামে নতুন আবিষ্কৃত আমল গ্রহণযোগ্য নয়। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭) 

পড়ুন: বিদআত কেন প্রত্যাখ্যাত, পরিণাম কী?

প্রসঙ্গত, আশুরার দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (স.) যখন মক্কা মুকাররমায় ছিলেন তখনও আশুরার দিন রোজা রাখতেন। এরপর যখন মদিনা মুনাওয়ারায় গেলেন তখন নিজেও রোজা রাখতেন অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। তাছাড়া রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এই রোজা ফরজ ছিল। যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন আশুরার রোজা কেবল নফল রোজা হিসেবে নির্ধারিত হলো। তবে সাধারণ নফল রোজার চেয়ে এই রোজার গুরুত্ব বেশি। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (স.)-এর কাছে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। নবী (স.) বললেন- أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ ‘আল্লাহর কাছে আমার আশা, তিনি এই রোজার মাধ্যমে বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২, তিরমিজি: ৭৫২)

নবীজির হাদিস থেকে এই বিষয়টিও জানা যায় যে, আশুরার সঙ্গে মিলিয়ে দুটি রোজা রাখা ভালো। আশুরার সঙ্গে যদি ৯ বা ১১ মহাররমে রোজা রাখা যায় তাহলে আরও ভালো। (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪; সহিহ মুসলিম: ১/৩৫৯)

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের পবিত্র আশুরার দিনটি হলো- ২৯ জুলাই, শনিবার। যারা দুইটি রোজা রাখার নিয়ত করেছেন, তারা ২৮ ও ২৯ জুলাই তথা শুক্রবার ও শনিবার রোজা রাখবেন অথবা ২৯ ও ৩০ জুলাই তথা শনিবার ও রোববারে রোজা রাখবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র আশুরা ও আশুরার রোজা সম্পর্কে সচেতনতা দান করুন। আশুরার দিনের মর্যাদা রক্ষা করার, বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তথ্যসূত্র: মাসিক আলকাউসার আশুরার দিনের ঘটনা, আশুরা কবে ২০২৩, আশুরার ইতিহাস pdf আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য, আশুরা উপলক্ষে আলোচনা আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা, আশুরার দশটি ঘটনা, আশুরা সম্পর্কে হাদিস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর