ধর্ম ডেস্ক
১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫১ পিএম
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কার মুশরিকদের নির্যাতনের মুখে সাহাবিরা যেভাবে অটল ঈমান নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তা মানব ইতিহাসে সাহস, ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের অনন্য দৃষ্টান্ত। শত্রুর বন্দিত্ব ও নির্যাতনের মধ্যেও আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্যে তাঁদের মুক্তির ঘটনা মুসলমানদের জন্য এক চিরন্তন প্রেরণা হয়ে আছে। নিচে এমন তিন সাহাবির অবিশ্বাস্য মুক্তির কাহিনি তুলে ধরা হলো—
ইসলামের প্রথম যুগের সাহাবি হজরত খাব্বাব (রা.)-কে তাঁর মালকিন উম্মু আম্মার ইসলাম গ্রহণের কারণে ভয়াবহ নির্যাতন করতেন। তিনি কখনো জ্বলন্ত কয়লার উপর শুইয়ে রাখতেন, কখনো গরম লোহার পাত দিয়ে পিঠ পুড়িয়ে দিতেন। অসহ্য কষ্টে তিনি নবী কারিম (স.)-এর কাছে অভিযোগ করলে নবীজি তাঁকে ধৈর্যের পরামর্শ দেন এবং আল্লাহর সাহায্যের আশ্বাস দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই উম্মু আম্মার ভয়াবহ মাথার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার জন্য সে নিজেই আগুনে গরম করা লোহার স্পর্শ নিতে বাধ্য হয়, যা ছিল তারই প্রদত্ত নির্যাতনের প্রতিফলন। এভাবেই আল্লাহর বিধানে নির্যাতক নিজের কর্মফল ভোগ করে, আর খাব্বাব (রা.) মুক্তি লাভ করেন। সূত্র: ইবনে হিশাম, সিরাতুন্নবী (প্রথম খণ্ড)
আরও পড়ুন: ইসলামের প্রথম শহীদ সুমাইয়া (রা.): যার ত্যাগের গাথা চিরস্মরণীয়
ইসলাম গ্রহণের অপরাধে উমাইয়া ইবন খালাফ বিলাল (রা.)-কে মরুর গরম বালুর ওপর ফেলে বুকে ভারী পাথর চাপিয়ে দিত। তবুও তিনি উচ্চারণ করতেন একটাই শব্দ- ‘আহাদ, আহাদ’ (আল্লাহ এক)। এই অটল ঈমান দেখে হজরত আবু বকর (রা.) গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তিনি উমাইয়ার কাছ থেকে বিলাল (রা.)-এর দাসত্বের মূল্য পরিশোধ করে তাঁকে মুক্ত করেন। এই মুক্তি ছিল কেবল মানবিক পদক্ষেপ নয়; বরং আল্লাহর অনুগ্রহে ঈমান ও তাওয়াক্কুলের এমন অদম্য শক্তি, যা তাকে ইতিহাসের প্রথম মুয়াজ্জিনে পরিণত করে। সূত্র: ইবনে ইসহাক, সিরাতুন্নবী; সহিহ বুখারি, কিতাবুল ফাজায়েল
আরও পড়ুন: ধৈর্য ও ঈমানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হজরত বিলাল (রা.)
‘সাইফুল্লাহ’ (আল্লাহর তরবারি) উপাধিপ্রাপ্ত খালিদ (রা.) ইসলামের ইতিহাসে বীরত্ব ও সামরিক কৌশলের প্রতীক। মুতার যুদ্ধে রোমান বাহিনি মুসলমানদের ঘেরাও করলে তিনি রাতের অন্ধকারে সৈন্য পুনর্বিন্যাস করেন। ফলে শত্রুরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং মুসলমানরা নিরাপদে সরে আসে। ইয়ারমুকের যুদ্ধে, তিনি ৫০০ নির্বাচিত অশ্বারোহী নিয়ে শত্রুর পেছন দিক থেকে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে রোমানদের মনোবল ভেঙে দেন। ওয়ালাজার যুদ্ধে, শত্রুর দুর্বলতম স্থান চিহ্নিত করে ঝটিকা আক্রমণের মাধ্যমে মুসলমানদের বিজয় নিশ্চিত করেন। এই ধারাবাহিক সাফল্যেই নবী কারিম (স.)তাঁকে ‘আল্লাহর তরবারি’ উপাধিতে ভূষিত করেন, যা আজও বীরত্বের প্রতীক হিসেবে অম্লান। সূত্র: সহিহ বুখারি, কিতাবুল জিহাদ; তারিখে তাবারি; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির
আরও পড়ুন: খুবাইব ইবনে আদি (রা.)-এর জান্নাতি আঙ্গুর খাওয়ার ঘটনা
এই তিন সাহাবির জীবন থেকে আমরা শিখি—
এই ঘটনাগুলো কেবল অতীতের স্মৃতি নয়; বরং আজও মুসলমানদের জন্য প্রেরণার অফুরান উৎস। বিপদের সময় ঈমান, ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলই যে মুক্তির প্রকৃত উপায়—এই তিন সাহাবির জীবন তার প্রমাণ রেখে গেছে চিরকালের জন্য।