ধর্ম ডেস্ক
০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
ইসলামের মূল ভিত্তি হলো তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ। এর বিপরীত হলো শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা। শিরক শুধু একটি বড় গুনাহই নয়, বরং ঈমান ধ্বংসকারী অপরাধ, যা মানুষকে ইসলামের সীমানার বাইরে ঠেলে দেয়। কোরআন ও হাদিসে শিরকের ভয়াবহতা এবং তার পরিণতি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
র্শিক অর্থ অংশীদার হওয়া, অংশীদার করা বা সহযোগী বানানো। শিরক হলো আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে তাঁর বিশেষ অধিকারগুলোতে শরিক করা। এটি প্রধানত দুই প্রকার: ১. বড় শিরক: যা ঈমান নষ্ট করে এবং মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। ২. ছোট শিরক: যা সরাসরি ঈমান নষ্ট না করলেও অত্যন্ত ভয়ংকর গুনাহ এবং বড় শিরকের দিকে নিয়ে যায়।
পবিত্র কোরআনে বারবার শিরকের গুরুতর পরিণতির কথা এসেছে।
১. ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করা ক্ষমা করেন না; তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।’ (সুরা নিসা: ৪৮)
২. ‘কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা: ৭২)
৩. ‘আপনি বলুন: আমি তো শুধু আমার রবকেই ডাকি এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’ (সুরা জিন: ২০)
আরও পড়ুন: না বুঝে শিরক করলে আল্লাহ শাস্তি দেবেন?
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন
১. ‘সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো, তুমি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সহিহ বুখারি: ৪৪৭৭)
২. ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল।’ (সহিহ বুখারি: ১২৩৮; সহিহ মুসলিম: ৯৩)
৩. ‘যদি আপনি শিরক করেন তবে আপনার সমস্ত আমল নিস্ফল হবে এবং অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।’ (সুরা জুমার: ৬৫)
আজকের সমাজে শিরক নানা আকারে দেখা যায়, যেমন—
শিরক ও হারাম উপার্জন: ঈমান ও আমল নষ্টকারী দুই মহাবিপদ
১. ইলম অর্জন: তাওহিদ ও শিরক সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা।
২. ইখলাস: সব ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য করা।
৩. দোয়া: শিরক থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া- ‘ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أشْرِكَ بِكَ وَاَنَا أَعْلَمُ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ ‘হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে আপনার সঙ্গে শিরক করা থেকে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত, তার থেকেও ক্ষমা চাই।’
৪. আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক: আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সৎকাজে অটল থাকা।
শিরক হলো ঈমান বিধ্বংসী সবচেয়ে বড় অপরাধ। এটি আধ্যাত্মিক ক্যান্সারের মতো, যা মানুষের সমস্ত নেক আমল ধ্বংস করে দেয় এবং মুক্তির দরজা বন্ধ করে দেয়। যদি কেউ তাওবা ছাড়া শিরক অবস্থায় মারা যায়, তার জন্য জান্নাত হারাম এবং জাহান্নামই হবে চিরস্থায়ী আবাস। তাই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হলো তাওহিদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা এবং ঈমানকে শিরকমুক্ত রাখার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে শিরক থেকে হেফাজত করুন এবং খাঁটি তাওহিদের আলোতে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন।