মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শিরক ও হারাম উপার্জন: ঈমান ও আমল নষ্টকারী দুই মহাবিপদ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

শিরক ও হারাম উপার্জন: ঈমান ও আমল নষ্টকারী দুই মহাবিপদ

ইসলামি বিশ্বাস ও শরিয়তের দুটি মৌলিক ভিত্তি হলো- এক. তাওহিদের প্রতি অটল বিশ্বাস ও দুই. হালাল রিজিক আহরণের নিরলস চেষ্টা। নিম্নোক্ত আলোচনায় কোরআন-সুন্নাহর দলিলের পরিপ্রেক্ষিতে শিরকের মারাত্মক পরিণতি, যা একজন মুমিনের ঈমান নষ্ট করে দেয় এবং হারাম উপার্জনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব, যা তার সকল নেক আমল ও দোয়া কবুলের পথে অদৃশ্য প্রাচীর সৃষ্টি করে, তা বিশদভাবে উপস্থাপন করা হবে।

শিরক: ঈমান ধ্বংসকারী মহাপাপ

শিরক হলো আল্লাহর সাথে কাউকে বা কিছু অংশীদার সাব্যস্ত করা। এটি দুই প্রকার: ১. শিরকে আকবর (বড় শিরক): যা মানুষকে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে। যেমন, আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করা ইত্যাদি। ২. শিরকে আসগর (ছোট শিরক): যা পূর্ণাঙ্গ তাওহিদে আঘাত করে, কিন্তু ইসলাম থেকে বের করে না। যেমন, রিয়া (লোক দেখানো আমল) ইত্যাদি।

শিরক ঈমান ধ্বংস করে—এর প্রমাণ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করা ক্ষমা করবেন না; এছাড়া অন্য সকল পাপ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন। যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে, সে এক মহাপাপ রচনা করল।’ (সুরা নিসা: ৪৮) ‘বস্ততু যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরিক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার জন্যে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হলো জাহান্নাম। (সুরা মায়েদা: ৭২)
হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো শিরক করা ছাড়া আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে (মৃত্যুবরণ করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৩)

আরও পড়ুন: শিরক না করলে যেসব প্রতিদান পাবেন


বিজ্ঞাপন


হারাম উপার্জন: আমল ও দোয়া কবুলে অন্তরায়

মহান আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো পন্থায় উপার্জিত অর্থ সম্পদকে হারাম উপার্জন বলে। যেমন সুদ, ঘুষ, চুরি, প্রতারণা, জুয়া ইত্যাদির মাধ্যমে রোজগার করা অর্থ, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ ইত্যাদি হারাম উপার্জন।

হারাম উপার্জন আমল নষ্ট করে ও দোয়া কবুলে বাধা দেয়—এর দলিল

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘হে মানবমন্ডলী! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র, সেসব বস্তু আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)
রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম: ২২৩৬) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এ অবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি: ২৯৮৯)

আরও পড়ুন: নেক আমল নষ্টকারী ৬ গুনাহ থেকে সাবধান

অতএব, শিরক ও হারাম উপার্জন উভয়ই মুমিনের জীবনের ও পরকালীন সৌভাগ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। শিরক ঈমানের ভিত্তি নষ্ট করে আর হারাম উপার্জনের কারণে আমল ও দোয়া গৃহীত হয় না।

সুপারিশ

১. তাওহিদ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন: আকিদা সম্পর্কিত গ্রন্থ পাঠ ও আলেমদের থেকে শিক্ষা নিয়ে শিরকের সব প্রকারভেদ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন।
২. হালাল রিজিক অনুসন্ধান: আয়য়ের উৎস সম্পর্কে সতর্ক থাকুন এবং সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকুন। (নবী (স.) বলেন- ‘যা সন্দেহজনক, তা পরিহার করো।’ তিরমিজি: ২৫১৮)
৩. তাওবা ও ইস্তেগফার: অতীতে শিরক বা হারাম উপার্জনের জন্য আন্তরিকভাবে তাওবা করুন এবং ভবিষ্যতে তা পরিহার করার দৃঢ় সংকল্প করুন।
৪. সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার ও সমাজে এই দু’টি বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করুন।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সব রকমের শিরক থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের রিজিককে হালাল ও পবিত্র করুন যাতে আমাদের আমল ও দোয়া কবুল হয়। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর