শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। এই গুনাহ আল্লাহ তাআলা সাধারণত মাফ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে লোক আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করে; সে যেন অপবাদ আরোপ করে।’ (সুরা নিসা: ৪৮)
তাই শিরক সম্পর্কে জানতে হবে। আল্লাহর সত্তা, গুণ বা কোনো কর্মের সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করাকে ইসলামি পরিভাষায় শিরক বলা হয়। শিরক ভালোভাবে বুঝার জন্য তাওহিদের শিক্ষা গ্রহণ জরুরি। কেউ অজ্ঞতাবশত শিরক করলে তাকে সরাসরি মুশরিক বলা না গেলেও হাদিস অনুযায়ী, সে বড় গুনাহগার হবে। কারণ, তাওহিদের শিক্ষা নেওয়া তার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। এ অবস্থায় অজ্ঞাতবশত শিরককারীকে আল্লাহ তাআলা মাফ করতেও পারেন, নাও করতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা জেনেশুনে শিরক করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- فَلَا تَجۡعَلُوۡا لِلّٰهِ اَنۡدَادًا وَّ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ‘অতএব তোমরা জেনে-শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করো না।’ (সুরা বাকারা: ২২)
আরও পড়ুন: যে ২ আমলে গুনাহ নেকিতে পরিণত হয়
সুতরাং যখনই সে শিরকের বিষয় জানবে তখনই তাকে তাওবা করতে হবে। আন্তরিক তাওবায় আল্লাহ তাআলা যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আলেমদের বড় একটি অংশ মনে করেন, তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা শিরকের গুনাহও ক্ষমা করবেন। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার: ৫৩) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- اَفَلَا یَتُوۡبُوۡنَ اِلَی اللّٰهِ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَهٗ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ‘তবে কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না ও তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা মায়েদা: ৭৪)
অজান্তে শিরক করা হয়েছে—বিষয়টি জানার পর তাওবা না করলে তার ক্ষমা নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন- اِنَّهٗ مَنۡ یُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىهُ النَّارُ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে, তার জন্য অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা: ৭২)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বারবার গুনাহ করেও বান্দা যে কারণে ক্ষমা পায়
নবীজির শিক্ষা হলো- শিরক সম্পর্কে জানার পরও এ বিষয়ে সদা সজাগ থাকা চাই। সাহাবায়ে কেরাম সবকিছু জানার পরও অজান্তে শিরক হয়ে যাচ্ছে কি না সে বিষয়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। এ মর্মে নবীজির শেখানো একটি দোয়া হলো- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊজুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লামু, ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আ’লামু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি জেনে-শুনে শিরক করা থেকে এবং সেই শিরক থেকে ক্ষমা চাচ্ছি যে সম্পর্কে আমি জ্ঞাত নই।’ (আদাবুল মুফরাদ: ২৬৬; সহিহুত তারগিব: ৩৬)