ধর্ম ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
সুবিশাল ময়দানে হাশর। মানুষ দলে দলে উপস্থিত। প্রতিটি দলকে ডাকা হবে তাদের নেতার নামে। সেদিন সত্যিকার নেতৃত্বের পরিচয় প্রকাশ হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো সেই দিনকে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ ডাকা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭১)
মুজাহিদ ও কাতাদা (রহ.)-এর মতে, এখানে ‘ইমাম’ বা নেতা বলতে নবী-রাসুলদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক উম্মতকে তার নবীর নামে ডাকা হবে। পক্ষান্তরে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এখানে ইমাম বলতে ভালো-মন্দ উভয় প্রকার নেতাকে বুঝানো হয়েছে।
পথভ্রষ্ট নেতারা ও তাদের অনুসারীরা সেদিন পরস্পরকে দোষারোপ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের আনুগত্য করতাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।’ (সুরা আহজাব: ৬৭) অনুসারীরা নেতাদের দ্বিগুণ শাস্তি দাবি করবে- ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের দিন মহা অভিশাপ।’ (সুরা আহজাব: ৬৮)
আরও পড়ুন: হাশরের দিন আমলনামা পেয়ে কার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাপ কাজের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের কথা শোনা ও তাঁর আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কাজের আদেশ করা হলে তা শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না।’ (সহিহ বুখারি: ২৯৫৫) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসুলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের।’ (সুরা নিসা: ৫৯)
মূলত ‘বিধান দেওয়ার অধিকার শুধু আল্লাহরই।’ (ইউসুফ: ৪০) কিন্তু রাসুল (স.) যেহেতু মহান আল্লাহর প্রতিনিধি, এ জন্যই মহান আল্লাহর স্বীয় আনুগত্যের সাথে সাথে রাসুল (স.)-এর আনুগত্য ওয়াজিব এবং একই কারণে আমির বা সৎ নেতার অনুগত হওয়াও জরুরি। কারণ, এতে করে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য করা হয়।
যাদের নেতা সত্যপন্থী, কেয়ামতের দিন তারা মুক্তি পাবে। তাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। অপরদিকে, পাপী ও ভ্রষ্ট নেতাদের আমলনামা বাঁ হাতে দেওয়া হবে এবং তারা অভিশপ্ত হয়ে থাকবে। (সুরা হাককাহ: ১৯-২৭)
আরও পড়ুন: নেতার যোগ্যতা সম্পর্কে কোরআন-হাদিস
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধশালীদের ভালো কাজের নির্দেশ দিই। কিন্তু তারা সেখানে অসৎকর্ম করে। ফলে তাদের প্রতি দণ্ডাদেশ বৈধ হয়ে যায় এবং আমি তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৬)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তথাপিও।’ (সূরা নিসা: ১৩৫)। আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যাবতীয় আমানত তার উপযুক্ত লোকদের নিকট অর্পণ করো।’ (সূরা নিসা: ৫৮)
তাই, ন্যায়নিষ্ঠ ও যোগ্য ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচন করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব। যোগ্যতার মানদণ্ডে প্রার্থী হবার যোগ্য নয়—এমন ফাসিক, অসৎ ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচন করা ইসলামে নিষেধ। এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে নবীজি (স.) বলেন, ‘হে লোক সকল! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আর আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা একই রকম’। (তিরমিজি: ২২৯৯)
শেষ কথা, নেতৃত্ব হলো আমানত। দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা নির্ভর করে সৎ নেতৃত্বের ওপর। তাই নেতা নির্বাচনে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত ব্যক্তিকেই করতে হবে। কেননা কেয়ামতের দিন প্রতিটি দলকে তার নেতাসহ ডাকা হবে এবং নেতার অনুসরণের ফল ভোগ করতে হবে।