শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

হাশরের দিন আমলনামা পেয়ে কার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২২, ০৫:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

হাশরের দিন আমলনামা পেয়ে কার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে

হাশরের মাঠে আমলনামা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সবাই উৎকণ্ঠিত থাকবে কী যেন পরিস্থিতি হয়! আমলনামা ডান দিকে (হাতে) আসে, না বাম দিক থেকে আসে, তা না জানা পর্যন্ত বিচলিত থাকবে প্রত্যেকে। পরে নিজ নিজ আমলনামা সবার হাতে দেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘আমি প্রত্যেকের আমলনামা তার ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। কেয়ামতের দিন আমি তার জন্য আমলনামা বের করব। সে তা উন্মুক্ত অবস্থায় পাবে। আমি তাকে বলব, পাঠ করো তোমার আমলনামা। তোমার হিসাব নেওয়ার জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৫-১৬)

পৃথিবীতে মানুষ যা করেছে, তার সবকিছুই লিপিবদ্ধ থাকবে সেখানে। ছোট-বড়, ভালো-মন্দ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনোকিছুই সেই আমলনামা থেকে বাদ যাবে না। দুনিয়ায় যারা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখেনি, জান্নাত-জাহান্নাম বিশ্বাস করেনি, তারা আমলনামায় জীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেখে হতবাক হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তাদের সেই অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে—

‘আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে- হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট-বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি। সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করবেন না।’ (সুরা কাহাফ: ৪৯)

নেককার বান্দারা আমলনামা গ্রহণ করবেন ডান হাতে, আর বদকারদেরকে পেছন দিক থেকে বাম হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। সেদিন নেককাররা আনন্দে আত্মহারা হবেন এবং অন্যদের ডেকে ডেকে নিজের আমলনামা দেখাবেন। বিষয়টি কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—

‘যাকে আমলনামা দেওয়া হবে তার ডান হাতে, সে বলবে, হে লোকজন! এই যে আমার আমলনামা তোমরা পড়ে দেখো; আমি আগেই বিশ্বাস করেছিলাম যে, আমাকে অবশ্যই হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে!’ (সুরা হাক্কাহ: ১৯-২০)

‘আর যার আমলনামা দেওয়া হবে তার বাম হাতে, সে বলবে, হায়! আমাকে যদি আমলনামা দেওয়াই না হতো! আমি যদি জানতেই না পারতাম আমার হিসাব কী? হায়! মৃত্যুতেই যদি আমার সব শেষ হয়ে যেত। আমার অর্থ-সম্পদ আমার কোনো কাজে আসল না। আমার থেকে আমার সব ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেছে!’ (সুরা হাক্কাহ: ২৫-২৯)

বদকারদের এই আফসোসের সময়েই আল্লাহ তাআলার হুঙ্কার ভেসে আসবে—

‘ধরো ওকে এবং গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। তাকে এমন শিকলে গেঁথে দাও, যার পরিমাণ ৭০ হাত। সে মহান আল্লাহর ওপর ঈমান রাখত না।’(সুরা হাক্কাহ: ৩০-৩৩)

অন্যদিকে জান্নাতিরা আনন্দ ও পরিতৃপ্তির জীবন লাভে ধন্য হবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘সুতরাং সে থাকবে মনোরম জীবনানন্দে। সেই সমুন্নত জান্নাতে যার ফল ঝুঁকে থাকবে। (জান্নাতিদের বলা হবে) তোমরা বিগত দিনগুলোতে যে কাজ করেছিলে, তার বিনিময়ে খাও ও পান করো সানন্দে।’(সুরা হাক্কাহ: ২১-২৪)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হাশরের মাঠে এক ব্যক্তিকে ডাকা হবে। অতঃপর তার আমলনামা প্রদান করা হবে ডান দিক দিয়ে। তার শরীর হবে ৬০ হাত দীর্ঘ, চেহারা হবে উজ্জ্বল, তার মাথায় থাকবে মণিমুক্তা খচিত মুকুট, যা ঝলমল করতে থাকবে; এভাবে সে তার স্বজনদের কাছে ফিরে যাবে। সবাই তখন বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকেও এমন আমলনামা প্রদান করুন, এতে আমাদের জন্য বরকত দান করুন।

আর কাফের ও অবিশ্বাসীদেরকেও এভাবে আমলনামা দেওয়া হবে যে, তার শরীর ৬০ হাত দীর্ঘ, চেহারা কালো হয়ে গেছে, মাথায় আগুনের টুপি পরানো; তার আত্মীয়-স্বজন এই অবস্থা দেখে বলবে, হে আল্লাহ! আমরা এ থেকে পানাহ চাই, হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন পরিণাম দেবেন না। হে আল্লাহ! একে আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিন!’ (তিরমিজি: ৩১৩৬; ইবনে হিব্বান: ৭৩৪৯)।

সেদিন কারো মা-বাবা জাহান্নামে যাবে, সন্তানরা যাবে জান্নাতে। স্ত্রী জান্নাতে যাবে, স্বামী জাহান্নামে। স্বামী জান্নাতে, স্ত্রী জাহান্নামে। কর্মচারী জান্নাতে, মালিক জাহান্নামে। এভাবে যারা জাহান্নাম থেকে অন্যদেরকে জান্নাতে দেখবে, তখন তাদের পরিতাপের অন্ত থাকবে না। এমনকি জাহান্নামিরা জান্নাতিদের ডেকে সামান্য পানি চাইবে। সেই দৃশ্যের বর্ণনা কোরআনে এসেছে এভাবে—

‘জাহান্নামিরা জান্নাতিদের ডেকে বলবে, আমাদের ওপর সামান্য পানি নিক্ষেপ করো অথবা আল্লাহ তাআলা তোমাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে কিছু দাও। তারা উত্তরে বলবে, আল্লাহ এই উভয় বস্তু কাফেরদের জন্য হারাম করেছেন।’(সুরা আরাফ: ৫০)

সুতরাং ওই দিন আসার আগে অর্থাৎ বেঁচে থাকতেই মুমিন মুসলমানের সাবধান হওয়া উচিত। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়ে লক্ষ্য রেখে আমল করা উচিত। দুনিয়াতে যারা মুমিনদের নিয়ে উপহাস করেছিল, পরকালে তারা যখন জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তাদেরকে ডেকে মুমিনগণ বিদ্রুপ করবেন। জান্নাতিরা জাহান্নামিদের ডেকে বলবে—

 ‘আমাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা সত্য পেয়েছি। অতএব তোমরা কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা (হতাশ গলায়) বলবে, হ্যাঁ হ্যাঁ; পেয়েছি! অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবেন, আল্লাহর অভিশাপ জালেমদের ওপর।’ (সুরা আরাফ: ৪৪)।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ডানহাতে আমলনামা পাওয়ার জন্য বেঁচে থাকতে সতর্ক হওয়ার এবং কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী নেক আমলে মশগুল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর