শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নেতার যোগ্যতা সম্পর্কে কোরআন-হাদিস

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

নেতার যোগ্যতা নিয়ে কোরআন-হাদিস

ইসলাম যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা নির্বাচনে উৎসাহিত করে। কিন্তু কোন কোন যোগ্যতার আলোকে নেতা নির্বাচন করতে হবে? কোরআন-হাদিসে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। মূলত নেতৃত্ব একটি কঠিন জবাবদিহিতামূলক বিষয়। নবী-রাসুলরা নেতৃত্বে সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন। কেননা তাঁরা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োজিত ও প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত ছিলেন। এরপরের অবস্থানে তাঁরাই, যাঁরা নবী-রাসুলের অনুসরণে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উম্মতে মুহাম্মদির ক্ষেত্রে যাঁরা ব্যক্তিগত জীবনে মহানবী (স.)-এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করেছেন এবং সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলেছেন।

‘নেতা’ শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘ইমাম’। সেই অর্থে দেশ ও জাতির নেতৃস্থানীয় প্রত্যেক ব্যক্তিই একেক জন ইমাম। ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, যোগ্য নেতা বা ইমামের গুণাবলী নিচে তুলে ধরা হলো। 


বিজ্ঞাপন


১.  সৎকর্মশীল হওয়া
একজন ইমাম বা নেতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- তিনি নিজে সৎকর্মশীল হবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তাদেরকে নেতা করলাম। তারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করত। আমি তাদের প্রতি ওহি নাজিল করলাম সৎকর্ম করার, নামাজ কায়েম করার এবং জাকাত দান করার। তারা আমার ইবাদতে ব্যাপৃত ছিল। (সুরা আম্বিয়া: ৭৩) 

উপরোক্ত আয়াতে একজন ইমাম বা নেতার প্রাথমিক ও প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, একজন নেতা নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কখনোই নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না; বরং নেতৃত্বের সকল পর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশকেই সর্বাগ্রে রাখবেন। এটি নেতার প্রথম যোগ্যতা।

২. ন্যায় প্রতিষ্ঠা
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা একজন ইমাম বা নেতার প্রধান কর্তব্য। নেতা কোনো অবস্থায়ই তার অধীনস্থ লোকদের মধ্যে বৈষম্য করবেন না। সবার সঙ্গে ইনসাফভিত্তিক আচরণ করবেন। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাতীয়তা বা অঞ্চল নির্বিশেষে সবাই নেতার কাছ থেকে ইনসাফ পাবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না।’ (সুরা নিসা: ১৩৫)

আরও ঘোষণা হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহর (বিধিবিধানের) পূর্ণ প্রতিষ্ঠাকারী ও ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হও। আর কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার কর, এটাই তাকওয়ার বেশি কাছাকাছি। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত।’ (সুরা মায়েদা : ৮)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ইসলামে নির্যাতিতের পাশে থাকার নির্দেশ

৩. সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতা
সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতা ছাড়া ইসলামে নেতা হয় না। আমানতদারিতার ব্যাপারে যার সচেতনতা নেই, সে নেতার যোগ্য নয়। কেননা তার মধ্যে নেফাক রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তা হলো- মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি: ৩৩)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা আমানত হকদারের কাছে অর্পণ করো। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে, আল্লাহ তোমাদের কতই না উত্তম উপদেশ দেন, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা নিসা: ৫৮)

নেতৃত্ব একদিকে আল্লাহর দেওয়া আমানত অপরদিকে জনগণেরও আমানত। নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (তিরিমিজি: ১২৪)। আবু জর গিফারি (রা.) নবীজির কাছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব তলব করলে তিনি বললেন, আবু জর! তুমি দুর্বল প্রকৃতির লোক। আর এটা হচ্ছে একটি আমানত। কেয়ামতের দিন এটা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। তবে যে ব্যক্তি তা তার দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালন করেছে তার বিষয়টি ভিন্ন।’ ওমর (রা.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে বললেন, ‘আমার রাষ্ট্রের একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় এর জন্য আমি দায়ী হব।’ তিনি রাতের আঁধারে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের খোঁজখবর নিতেন।

অতএব, দায়-দায়িত্ব অর্পণের ক্ষেত্রে যোগ্য, কর্মদক্ষ এবং আমানতদার ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা উচিত। অযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে আসা কেয়ামতের লক্ষণ। এ মর্মে নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আমানত নষ্ট করা হবে তখন কেয়ামতের অপেক্ষায় থাক। জিজ্ঞাসা করা হলো, আমানত কীভাবে নষ্ট করা হবে? তিনি বললেন, অযোগ্য ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব অর্পণ করা আমানত নষ্ট করণের শামিল। আর এমনটি করা হলে বুঝবে কেয়ামত সন্নিকটে।’ (বুখারি: ৫৯)

আরও পড়ুন: ক্ষমতাসীনদের যে গুনাহটি সবচেয়ে ভয়ানক

৪. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ
মুসলিম উম্মাহর ইমাম বা নেতা সবসময় সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবেন। যারা অবাধ্য হবে তাদের উপযুক্ত শাস্তির বিধান কার্যকর করবেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণে তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং নিষেধ করবে মন্দ কাজ থেকে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)

৫. প্রতিশ্রুতি রক্ষা
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ফলে রাষ্ট্র, সমাজে সম্পর্কের অবনতি হয় কিংবা টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়। ইসলামে নেতৃত্বের গুণাবলীর মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার নেয়ামতকে স্মরণ করো, যে নেয়ামত আমি তোমাদের দিয়েছি এবং তোমরা আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করো, তাহলে আমি তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর কেবল আমাকেই ভয় করো।’ (সুরা বাকারা: ৪০) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়েদা: ০১)

যাদের ওয়াদা ভঙ্গের মাধ্যমে পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের পরিবেশ সৃষ্টি হবে, কেয়ামত দিবসে ওই ব্যক্তিরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং আল্লাহ তাআলা ওয়াদা ভঙ্গকারীর কাছে কেয়ামত দিবসে কৈফিয়ত তবল করবেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অথচ এর আগে আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আর আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা আহজাব: ১৫)

পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে, আর যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং জমিনের উপর ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায় তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা বাকারা: ২৭)

আনাস (রা.) বলেন, ‘এমন খুব কম হয়েছে যে, নবীজি (স.) ভাষণ দিয়েছেন অথচ তাতে এ কথা বলেননি যে, ‘যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই তার ধর্ম নেই।’ (মুসনাদে আহমদ: ১২৪০৬)

আরও পড়ুন: মুসলমানদের অনৈক্যের পরিণাম

৬. মানুষের প্রতি ভালোবাসা
একজন নেতার মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকবে। আওফ ইবনে মালিক রাসুলুল্লাহ (স.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের উত্তম নেতা হলো তারা, যাদেরকে তোমরা ভালোবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালোবাসে। তারা তোমাদের জন্য দোয়া করে, তোমরাও তাদের জন্য দোয়া কর। আর তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা হলো তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং যারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে আর তোমরা যাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ কর। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসুল! আমরা কি তলোয়ারের সাহায্যে তাদের মোকাবেলা করব? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ না তারা তোমাদের মধ্যে নামাজ কায়েম করতে থাকবে। তোমাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের মধ্যে যদি তোমরা এমন কোনো জিনিস দেখতে পাও যা তোমরা অপছন্দ কর, তবে তোমরা তার কাজ ঘৃণা করতে থাক। কিন্তু তার আনুগত্য থেকে হাত টেনে নিও না। (মুসলিম)

৭. উদার ও দায়িত্বশীল
নেতারা উদার, মহৎ ও ক্ষমাশীল হবেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! এটা আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহের বিষয় যে, আপনি এসব লোকের জন্য খুবই নম্র স্বভাবের হয়েছেন। আপনি যদি উগ্র স্বভাব ও পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তবে এসব লোক আপনার চারপাশ থেকে দূরে সরে যেত, অতএব তাদের ক্ষমা করে দিন। তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করুন এবং ইসলামের কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। অবশ্য কোনো বিষয়ে আপনার মতো সুদৃঢ় হয়ে গেলে আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। বস্তুত আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তার ওপর ভরসা করে কাজ করে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)। মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (স.) ক্ষমার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, ইতিহাসে এমন আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

নেতারা দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ হবেন। তাদের ওপর দায়িত্ব এলে তিনি সর্বোত্তমভাবে তা পালনের চেষ্টা করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার এ ঘরে রাসুলুল্লাহকে (স.) দোয়া করতে শুনেছি, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের যেকোনো কাজের দায়িত্বশীল নিযুক্ত হয়, এরপর সে লোকদের কষ্টের মধ্যে ফেলে, আপনিও তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিন। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের যেকোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল নিযুক্ত হয় এবং লোকদের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করে, আপনিও তার সঙ্গে নম্র ব্যবহার করুন।’ (মুসলিম: ৪৭২২)

আরও পড়ুন: সাহসীরা আল্লাহর প্রিয়

৮. উন্নত চরিত্রের অধিকারী
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম হলেন- বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.)। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিচ্ছেন- ‘আর নিশ্চয় আপনি মহৎ চরিত্রের ওপর রয়েছেন।’ (সুরা কলাম: ৪) তাছাড়া উত্তম চরিত্র মানুষকে সবার প্রিয় করে তোলে। আল্লাহর কাছেও তারাই সর্বাধিক প্রিয়। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী। (জামিউস সগির: ২১৮)

৯. প্রজ্ঞাবান বা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া
একজন নেতাকে অবশ্যই জ্ঞানবান হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর তাকে (তালুতকে) (নেতা হিসেবে) পছন্দ করেছেন এবং সুন্দর শারীরিক গঠন ও জ্ঞানের প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত। (সুরা বাকারা: ২৪৭)

আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা নেতা হিসেবে তালুতকে দুটি গুণ দান করেছেন: একটি হলো জ্ঞান, আর অপরটি সুঠাম শারীরিক গঠন। এখান থেকে বোঝা যায়, একজন নেতা প্রথমে তার আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞান ও মেধা ব্যবহার করে বিরাজমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক সিদ্ধান্ত নেবেন, অতঃপর নিজের প্রভাব খাটিয়ে তা বাস্তবায়ন করবেন। এক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রভাব ও জ্ঞান একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। একজন নেতা যার শুধু ক্ষমতা আছে; কিন্তু জ্ঞান নেই, সে যেমন তার জ্ঞানহীনতার কারণে সঠিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। তেমনি ক্ষমতাহীন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হলেও ক্ষমতা না থাকার কারণে তা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

১০. দৃঢ়চিত্ত ও সৎসাহসের অধিকারী
একসময় পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুসলিম শাসকরা। সেদিনকার খ্যাতনামা বীরদের মেধা, রণকৌশল আধুনিক যুগের বীরযোদ্ধাদেরও বিস্মিত করে। তাঁরা নিন্দুকের নিন্দার ভয় করতেন না। যা করতেন আল্লাহর জন্যই করতেন। আল্লাহর পথে সত্যবাদিতা, অটল-অবিচল থাকাকেই নিজেদের জন্য আবশ্যক করে নিয়েছিলেন তাঁরা। উবাদাহ ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যেখানেই থাকি না কেন, সত্যের ওপর দৃঢ় থাকব কিংবা বলেছিলেন, সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর কাজে কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করব না।’ (বুখারি: ৭২০০)

মহান আল্লাহ শক্তিশালী ও দৃঢ় মানসিকতার মুমিনদের বেশি ভালোবাসেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেন, ‘শক্তিমান মুমিন দুর্বল মুমিনের তুলনায় উত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। অবশ্য উভয়ের মধ্যে কল্যাণ আছে। তোমাদের জন্য উপকারী প্রতিটি উত্তম কাজের প্রতি আগ্রহী হও এবং অলস বা গাফেল হয়ো না। কোনো কাজ তোমাকে পরাভূত করলে তুমি বলো, আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন এবং নিজ মর্জিমাফিক করে রেখেছেন। ‘যদি’ শব্দ সম্পর্কে সাবধান থাকো। কেননা ‘যদি’ শয়তানের কর্মের পথ উন্মুক্ত করে।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৬৮)

যারা আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিংবা দেবেন, তারা ইসলাম প্রদত্ত গুণাবলি অর্জন করলে এবং যথাযথ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এলে দেশের আরও উন্নতি ও সমৃদ্ধি আসবে ইনশাল্লাহ।

উল্লেখ্য, ন্যায়পরায়ণ শাসকদের জন্য ইহকাল ও পরকালে সুসংবাদ রয়েছে। ইয়াদ বিন হিমার আল-মুজাশেয়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, জান্নাতে তিন শ্রেণির লোক থাকবে। ক্ষমতাসীন ন্যায়পরায়ণ শাসক, মুসলিম ও আত্মীয়দের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ এবং বড় পরিবার নিয়ে যিনি নিষ্কলুষ পবিত্র জীবন যাপন করেন। (মুসলিম: ২৮৬৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর ন্যায়পরায়ণ শাসকদের কবুল করুন। সব নেতা-নেতৃত্বকে সত্যবাদী ও আমানতদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর