ধর্ম ডেস্ক
২৮ আগস্ট ২০২৫, ০২:০০ পিএম
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানবজীবনের প্রতিটি পর্ব ও প্রেক্ষাপটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো হায়েজ বা পিরিয়ড। এই সময়ে নারীর শরীরে কিছু জৈবিক পরিবর্তন ঘটে, যার কারণে কিছু ইবাদতে সাময়িক বিরতি দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। অনেক নারীই এ সময়টি নিয়ে দ্বিধা ও সংশয়ে ভোগেন যে, তারা কী করতে পারবেন আর কী থেকে বিরত থাকতে হবে? এই প্রতিবেদন সেই প্রশ্নেরই সুস্পষ্ট, সহিহ ও ফিকহসম্মত জবাব প্রদান করা হয়েছে।
১. নামাজ আদায়: এই সময়ে ফরজ, সুন্নত, নফল—কোনো নামাজই আদায় করা জায়েজ নয়। তবে এই সময় ছুটে যাওয়া নামাজগুলো কাজা করতে হয় না।
২. রোজা রাখা: রমজানসহ যেকোনো ফরজ রোজা পিরিয়ড অবস্থায় রাখা যাবে না। তবে ছুটে যাওয়া রোজাগুলো পরে কাজা করা ফরজ।
৩. কোরআন তেলাওয়াত: অধিকাংশ আলেমের মতে, পবিত্রতা ছাড়া মুসহাফ স্পর্শ করে কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ নয়। তবে মুখস্থ আয়াতগুলো দোয়া বা জিকির হিসেবে পড়া যায়।
৪. তাওয়াফ (কাবা শরিফের চারপাশে ঘোরা): তাওয়াফ এমন ইবাদত, যাতে পবিত্রতা শর্ত। তাই পিরিয়ড অবস্থায় এটি জায়েজ নয়।
আরও পড়ুন: গোসল ফরজ অবস্থায় কোরআন শোনা যাবে?
১. জিকির ও তাসবিহ: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লা', আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ—এসব জিকির যেকোনো সময়, যেকোনো অবস্থায় করা যায়। এটি হৃদয় প্রশান্ত করে এবং সওয়াব বৃদ্ধি করে।
২. দোয়া করা: খাওয়া, ঘুম, ভ্রমণসহ প্রতিদিনকার জীবনের সব দোয়া পড়া জায়েজ। এমনকি নিজের মন থেকে আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তাও দোয়ার অন্তর্ভুক্ত এবং এই সময়ে তা করাই উচিত।
৩. দরুদ শরিফ পড়া: নবীজি (স.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ (যেমন: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ) সর্বাবস্থায় বৈধ এবং অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
৪. ইস্তেগফার ও তাওবা: আস্তাগফিরুল্লাহ বা আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম ওয়া আতুবু ইলাইহ—এসব পড়া অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও গুনাহ মোচনের মাধ্যম।
৫. ইসলামি জ্ঞানচর্চা: কোরআনের তাফসির, হাদিস, ইসলামি বই-পুস্তক পড়া, ইসলামিক লেকচার ও বয়ান শোনা—সবই এই সময়ে জায়েজ এবং উপকারী। এটি ইবাদতের একটি প্রকারও বটে।
আরও পড়ুন: সহবাসে সাড়া না দিলে স্ত্রী কি গুনাহগার হবেন?
দোয়া ইউনুস: لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِين উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ-জালিমীন। এটি হজরত ইউনুস (আ.) এর দোয়া, যা দুঃসময়ে পাঠ করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। (সুরা আম্বিয়া: ৮৭ )
ইস্তেগফার: আস্তাগফিরুল্লাহ বারবার পড়া হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে, মানসিক প্রশান্তি দেয়, গুনাহ মোচন করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের দোয়া: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّار উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনিয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আজাবান নার। এই দোয়া দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ অর্জনের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম। (সুরা বাকারা: ২০১)
পিরিয়ড শরিয়তের দৃষ্টিতে একটি স্বাভাবিক ও সাময়িক অবস্থা, যা নারীকে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত থেকে সাময়িক বিরতি দেয়। এর অর্থ এই নয় যে, এই সময়ে নারী 'ইবাদতহীন' হয়ে পড়বেন। বরং জিকির, দোয়া, দরুদ, ইস্তিগফার এবং জ্ঞানচর্চা—এসব আমলের মাধ্যমে এই সময়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বড় সুযোগ। তাই এই সময়টিকে অলসতা বা হতাশার সময় না ভেবে আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে কাজে লাগানো উচিত।
(সহিহ বুখারি, কিতাবুল হায়েজ; সহিহ মুসলিম, কিতাবুল হায়েজ; সুনানে তিরমিজি; হায়াতুল মুসলিমাত; আল-আজহার)