ধর্ম ডেস্ক
২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মুমিনদের জন্য জান্নাতের শ্রেষ্ঠ নেয়ামতসমূহ
জান্নাত মুমিনদের পরম আকাঙ্ক্ষার ঠিকানা, যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত ও চিরস্থায়ী শান্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের যে মনোমুগ্ধকর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা এতটাই অলৌকিক যে মানুষের কল্পনাও সেখানে পৌঁছাতে পারে না। আল্লাহ নিজেই বলেছেন- ‘সেখানে তারা যা চাইবে, তাই পাবে এবং আমার পক্ষ থেকে আরও অধিক কিছু পাবে।’ (সুরা ক্বাফ: ৩৫)
এই প্রতিবেদনে জান্নাতের এমন ছয়টি আকর্ষণীয় নেয়ামত তুলে ধরা হলো, যা মুমিনদের হৃদয়কে আল্লাহর পথে চলতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করবে।
জান্নাতের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো চিরস্থায়ী নিরাপত্তা ও শান্তি। দুনিয়ার সব ক্লান্তি, ভয়, দুঃখ এবং হতাশা থেকে মুক্ত এক জীবন। জান্নাতে প্রবেশ করার সময় ফেরেশতারা মুমিনদের অভ্যর্থনা জানাবেন ‘সালামুন আলাইকুম’ বলে। আল্লাহ তাআলা বলেন- আর ফেরেশতাগণ তাদের কাছে প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে (এবং বলবে), “তোমাদের প্রতি সালাম! কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে, সুতরাং কত চমৎকার এই চূড়ান্ত আবাস!” (সুরা রাদ: ২৩-২৪)। এই শান্তির পরিবেশে শুধু প্রশান্তিময়, নিরাপদ ও চিরস্থায়ী জীবনই থাকবে।
আরও পড়ুন: জান্নাত ওয়াজিব যাদের জন্য
জান্নাতের সৌন্দর্য হবে অপার্থিব। সেখানে থাকবে দুধ, মধু, পানির এবং শরাবের ঝরনা, যা কখনো নষ্ট হবে না এবং কোনো প্রকার ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্নাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্নাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।’ (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহর, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতে পবিত্র বাসগৃহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসফলতা।’ (সুরা তাওবা: ৭২)
জান্নাতবাসীদের জন্য থাকবে অফুরন্ত ও অতুলনীয় স্বাদের খাবার এবং ফলমূল। এই নেয়ামতগুলো মৌসুমি নয়; বরং যখনই তারা চাইবে, তা তাদের হাতের নাগালে চলে আসবে। আল্লাহ বলেছেন- ‘সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা যত খুশি ফলমূল ও পানীয়ের জন্য আদেশ দেবে।’ (সুরা সাদ: ৫১)। এই খাবারগুলো হবে এত সুস্বাদু যে তা দেহ ও মনকে পুরোপুরি তৃপ্ত করবে, কিন্তু কোনো ধরনের অসুস্থতা বা অতৃপ্তি দেবে না।
আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি
জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার সবচেয়ে দামি পোশাক ও অলংকার পরিধান করবেন। তাদের পরনে থাকবে সবুজ রেশমি ও দামি পাজামা, আর হাতে থাকবে সোনা-রূপার চুড়ি ও মুক্তার অলংকার। কোরআনে বলা হয়েছে- ‘তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা রেশম, আর তাদেরকে অলংকারে সজ্জিত করা হবে রুপার কঙ্কণ দ্বারা, আর তাদের রবব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পরিচ্ছন্ন পানীয়।’ (সুরা ইনসান: ২১)। এছাড়া তারা ব্যবহার করবেন জান্নাতি সুগন্ধি, যার ঘ্রাণ এতটাই চমৎকার ও দীর্ঘস্থায়ী হবে যে বহু দূর থেকেও তা অনুভব করা যাবে।
জান্নাত মুমিনদের মিলনমেলা, যেখানে তারা তাদের প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হবেন। সেখানে মুমিন পুরুষদের জন্য থাকবেন হুর এবং দুনিয়ার নেককার স্ত্রীরা, যারা জান্নাতে আরও সুন্দর ও পরিশুদ্ধ হয়ে ফিরে পাবেন তাদের স্বামীদের। ‘আর তাদের জন্য থাকবে বিশুদ্ধ সঙ্গিনীরা, এবং তারা জান্নাতে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ২৫)। এই সঙ্গিনীরা হবেন লজ্জাশীলা, সৌন্দর্যে অতুলনীয় এবং বয়সে সমবয়স্ক, যা তাদের জীবনকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।
আরও পড়ুন: জান্নাকের হুর দেখতে কেমন হবে
জান্নাতের সব নেয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় হলো মহান আল্লাহ তাআলার দিদার বা দর্শন লাভ। দুনিয়ার জীবনে কেউ আল্লাহকে দেখতে পায় না। কিন্তু জান্নাতে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের এই সৌভাগ্য দান করবেন। আল্লাহ বলেন- ‘সেদিন কিছু মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল; তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’ (সুরা কিয়ামাহ: ২২-২৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) এই নেয়ামত সম্পর্কে বলেন- ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে (জান্নাতে) এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন করে পূর্ণিমার চাঁদ দেখ — একে দেখতে কারো কোনো কষ্ট হবে না।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। এই সাক্ষাৎ হবে জান্নাতবাসীদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান ও অতুলনীয় আনন্দের উৎস, যা জান্নাতের সব জৌলুসকেও তুচ্ছ করে দেবে।
আমাদের কর্তব্য হলো ঈমান ও আমলের মাধ্যমে সেই অনন্ত জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, যেখানে থাকবে চিরস্থায়ী শান্তি, অপার্থিব সৌন্দর্য এবং সর্বোপরি আল্লাহর দিদার।