বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

জান্নাত ওয়াজিব যাদের জন্য

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

জান্নাত ওয়াজিব যাদের জন্য

বান্দার আমলের বিনিময় হিসেবে জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারিত হয়। নিজ আমলগুণে মানুষ যেমন জান্নাতি হতে পারেন, তেমনি কর্মদোষে হতে পারেন জাহান্নামি। জান্নাত লাভের জন্যে বিভিন্ন আমলের কথা বলা হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। আবার একদল মানুষ এমন রয়েছেন, যাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী (স.) বলেছেন, তাদের ওপর জান্নাত ওয়াজিব। হাদিস অনুযায়ী, যাদের জন্য জান্নাত অবধারিত, তারা হলেন—

১. কন্যা-সন্তান পালনকারী


বিজ্ঞাপন


হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ يُؤويهنَّ ويَكْفِيهنَّ ويَرْحَمَهُنَّ فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ الْبَتَّةَ

যে তার তিন কন্যাকে আশ্রয় দান করে, সকল ব্যয়ভার বহন করে এবং তাদের সঙ্গে দয়াসুলভ আচরণ করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। উপস্থিত জনতার মধ্য হতে একজন প্রশ্ন করল, যদি কারও দুটি কন্যা সন্তান হয় ইয়া রাসূলুল্লাহ! জবাবে তিনি বললেন, দুটি কন্যা হলেও। (আদাবুল মুফরাদ:৭৮)

২. পরিপূর্ণ অজুসহ একাগ্রচিতত্তে সালাত আদায়কারী

হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন-


বিজ্ঞাপন


 مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ، إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

যে মুসলমান সুন্দররূপে অজু করে, তারপর দাঁড়িয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়:২৩৪)

৩. যে মৃতব্যক্তির প্রশংসা করা হয়

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একটি জানাযা বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা প্রশংসা করলেন। নবী করিম (স.) ‘ওয়াজাবাত’ বললেন। অর্থাৎ ওয়াজিব হয়ে গেছে। অতঃপর দ্বিতীয় আর একটি জানাযা নিয়ে পার হলে লোকেরা তার দুর্নাম করতে লাগল। নবী (স.) বললেন, ‘ওয়াজাবাত’। অর্থাৎ অবধারিত হয়ে গেল।

উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) বললেন, কী অবধারিত হয়ে গেল? তিনি বললেন,

 هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْراً فَوَجَبتْ لَهُ الجَنَّةُ وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرّاً فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الأَرضِ

তোমরা যে এর প্রশংসা করলে তার জন্য জান্নাত, আর ওর দুর্নাম করলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। তোমরা হলে পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী। (বুখারি: ১৩৬৭, ২৬৪২ মুসলিম: ২২৪৩)

৪. আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ এবং ইসলামের প্রতি যে সন্তুষ্ট

হজরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বললেন, হে আবু সাঈদ!

مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে এবং মুহাম্মদ (স.) কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ:১৮৮৪)

অন্য হাদিসে এসেছে—

مَنْ قَالَ: رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

যে ব্যক্তি বলবে- আমি আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দ্বিন এবং মুহাম্মদ (স.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত: ১৫২৯)

৫. বারো বছর আজান দেওয়া ব্যক্তি

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন—

مَنْ أَذَّنَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِينِهِ فِي كُلِّ يَوْمٍ سِتُّونَ حَسَنَةً، وَلِكُلِّ إِقَامَةٍ ثَلَاثُونَ حَسَنَةً

যে ব্যক্তি বারো বছর আজান দেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আজানের বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকি এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকি লেখা হয়। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুল আজান:৭২৮)

৬. সামান্য সময় হলেও যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (স.) কে বলতে শুনেছেন-

مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فُوَاقَ نَاقَةٍ، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

কোনো মুসলমান মহামহিম আল্লাহর পথে একটি উষ্ট্রী দোহনের সময় পরিমাণ যুদ্ধ করলে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুল জিহাদ: ২৭৯২)

৭. সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠকারী

হজরত শদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (স.) একদিন তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফারের সন্ধান দিব না? তা হল-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، وَأَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَعْتَرِفُ بِذُنُوبِي، فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ

হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তো তোমারই বান্দা। আমি যথাসম্ভব তোমার সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ও ওয়াদার উপর আছি। আমি তোমার পানাহ চাই আমার কৃতকর্মের অনিষ্ঠ থেকে। আমার প্রতি তোমার নিয়ামত আমি স্বীকার করছি। আমি আমার সব অপরাধও স্বীকার করছি। তুমি মাফ করে দাও আমার সব আপরাধ। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার তো কেউ নেই।

তোমাদের কেউ যদি সন্ধ্যায় এটি পাঠ করে আর ভোরের আগেই যদি তাকদির অনুসারে তার মৃত্যু এসে যায়, তবে জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব। অনুরুপ তোমাদের কেউ যদি সকালে এটি পাঠ করে আর সন্ধ্যার আগেই তাকদীর অনুসারে তার মৃত্যু এসে যায়, তবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (তিরমিজি, দোয়া অধ্যায়: ৩৩৯৩)

৮. যে ব্যক্তি বলবেলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

হজরত আবু উমামা বিন সাহল বিন হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন—

بَشِّرِ النَّاسَ أَنَّهُ مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

মানুষকে সুসংবাদ প্রদান কর। যে ব্যক্তি বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (নাসাঈ আস সুনানুল কুবরা, কিতাব আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলি: ১০৮৮৫)

উপরোক্ত ভাগ্যবানদের একজন হতে পারার জন্য মুমিন মুসলমানের উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি দোয়া ও আমল করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন ও সুন্নাহ যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর