ধর্ম ডেস্ক
০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৪২ পিএম
ইসলামফোবিয়া বা ইসলামভীতির অর্থ হলো ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি অমূলক ভয়, বিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক আচরণ। এটি শুধু ব্যক্তিগত পক্ষপাত নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা, যা বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সহাবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই প্রতিবেদনে ইসলামফোবিয়ার ঐতিহাসিক পটভূমি, আধুনিক প্রেক্ষাপট, প্রভাব ও সমাধানের উপায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি
মধ্যযুগীয় ক্রুসেড ও ঔপনিবেশিকতা: ইউরোপে ইসলামকে ‘হুমকি’ হিসেবে চিত্রিত করার প্রবণতা প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। ক্রুসেডের সময় থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক শাসনামলে মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমা শক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করা হতো।
প্রাচ্যবাদ: পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের লেখনিতে ইসলামকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘সহিংস’ ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
আরও পড়ুন: ইসলামের প্রসার দ্রুত বাড়ছে, মুসলমানদের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
আধুনিক যুগে ইসলামফোবিয়ার তীব্রতা
৯/১১-পরবর্তী বিশ্ব: ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে স্টেরিওটাইপ করা হয়। পশ্চিমা মিডিয়া ও রাজনীতিবিদরা ইসলামকে সহিংসতার সাথে জড়িত করে উপস্থাপন করেন।
রাজনৈতিক অপব্যবহার: কিছু রাজনৈতিক দল অভিবাসন ও জাতীয় নিরাপত্তার নামে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা চালায়। উদাহরণস্বরূপ: ফ্রান্সে হিজাব নিষিদ্ধকরণ, যুক্তরাষ্ট্রে ‘মুসলিম ব্যান’ প্রস্তাব।
সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা: ফেইক নিউজ ও অপপ্রচারের মাধ্যমে ইসলামফোবিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
ক) সামাজিক বৈষম্য
চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে: মুসলিমরা প্রায়শই তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে চাকরি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধার সম্মুখীন হন।
হিজাব পরিহিত নারীদের প্রতি বৈষম্য: ফ্রান্স, জার্মানি ও ভারতে হিজাব পরা নারীদের প্রকাশ্যে হয়রানি করা হয়।
খ) সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
মসজিদে হামলা: ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ৫১ জন নিহত হন।
কোরআন অবমাননা: সুইডেন, ডেনমার্কসহ কিছু দেশে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে।
গ) মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
মুসলিম যুবক-যুবতীরা উদ্বেগ, হতাশা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন: ইসলামের স্বর্ণযুগ কখন ছিল, আবার আসবে কি?
ক) শিক্ষা ও সচেতনতা
ইসলামের সঠিক বার্তা প্রচার: ইসলাম শান্তি, সহিষ্ণুতা ও সাম্যের ধর্ম—এটি স্কুল-কলেজে শেখানো প্রয়োজন।
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সম্প্রীতি বাড়ানো।
খ) মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা
ইসলাম ও মুসলিমদের সম্পর্কে ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ প্রচার করতে হবে।
গ) আইনি পদক্ষেপ
ঘৃণামূলক অপরাধের কঠোর শাস্তি: ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসলামফোবিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, তবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
মুক্তবাক স্বাধীনতার সীমা নির্ধারণ: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার ‘মুক্তবাক স্বাধীনতা’ নামে গ্রহণযোগ্য নয়।
ঘ) রাজনৈতিক সদিচ্ছা
রাজনৈতিক নেতাদের মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য এড়িয়ে চলতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ইসলামফোবিয়া কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়; এটি সমগ্র মানবতার জন্য হুমকি। এই সমস্যা দূর করতে শিক্ষা, সংলাপ ও আইনের সমন্বয় প্রয়োজন। মুসলিমরা যেমন তাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালন করবে, অন্যদেরও উচিত তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। ‘ঘৃণা নয়, সহাবস্থানই সভ্যতার মাপকাঠি’—এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাস রেখেই আমরা একটি সমতাপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।