বিশ্ব দ্রুত এক নতুন ধর্মীয় বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও জনসংখ্যাগত তথ্য অনুযায়ী, ইসলাম এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। পিউ রিচার্স সেন্টারসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, আগামী কয়েক দশকে ইসলাম বিশ্বে সবচেয়ে বড় ধর্মে পরিণত হতে পারে।
মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৪ কোটি৭০ লাখ—যা অন্য যেকোনো ধর্মের তুলনায় অনেক বেশি। পিউ রিচার্স জানায়, ২০৫০ সালের মধ্যে খ্রিস্টান ও মুসলমানের জনসংখ্যা সমান হতে পারে। ২০৭০ সালের মধ্যে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম।
খ্রিস্ট ধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম, অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি। তবে ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীদের ব্যবধান দিন দিন কমছে। ২০১০ সাল থেকে ইসলাম ধর্মে প্রায় ৩৫ কোটি নতুন মানুষ বেড়েছে। এই সংখ্যা খ্রিস্ট ধর্মের বৃদ্ধির চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি এবং অন্যসব ধর্মের সম্মিলিত বৃদ্ধির চেয়েও বেশি। ইসলাম এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এক কোটি ৮৬ লাখ কমেছে। বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে।

বিজ্ঞাপন
বৃদ্ধির মূল কারণ
মুসলিম জনগোষ্ঠীর উচ্চ জন্মহার, তুলনামূলকভাবে নিম্ন বয়সসীমা (গড় বয়স ২৪.১ বছর), কিছু অঞ্চলে ধর্মান্তর হারের ইতিবাচক প্রভাব, আফ্রিকা ও এশিয়ায় ইসলামের দ্রুত প্রসার। তবে, বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে ধর্মান্তরের ভূমিকা সামান্য।
যেসব দেশে মুসলিম বেড়েছে বেশি
সবচেয়ে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে কাজাখস্তান, বেনিন ও লেবাননে। বিশ্বের প্রধান মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলো হলো- ইন্দোনেশিয়া ২৩ কোটি ৮৯ লাখ, পাকিস্তান ২২ কোটি ৪৮ লাখ, ভারত ২১ কোটি ৩০ লাখ, বাংলাদেশ ১৫ কোটি ১৪ লাখ, নাইজেরিয়া ১১ কোটি ৯৯ লাখ (পিউ রিচার্স, ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ: ২০২০)

আরও পড়ুন: রাসুলুল্লাহ (স.) রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের মতামত নিতেন যেভাবে
চ্যালেঞ্জ কী
ইসলামের এই প্রসার যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে, তেমনি সৃষ্টি করছে কিছু চ্যালেঞ্জ। যেমন-
১. ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার জন্য প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা ও নেতৃত্বের উৎকর্ষতা
২. ইসলাফোবিয়া ও ইসলাম-ভীতি দূর করতে প্রয়োজন বিশ্বজুড়ে দাওয়াহ
৩. ভারসাম্যপূর্ণ তরবিয়াহ ও গণসচেতনতা
৪. আর্থসামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন
৫. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও ইসলামের সত্যিকারের পরিচয় তুলে ধরা
করণীয় কী
🔹 আধুনিক ও বিশুদ্ধ ইসলামি শিক্ষা বিস্তার
🔹 বিশ্বব্যাপী ইসলামি ঐক্য, সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদার
🔹 ইসলামি অর্থনীতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি
🔹 সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমে মুসলিমদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা
🔹 শান্তি, মানবতা ও উন্নয়নের বার্তাকে সামনে রেখে দাওয়াহ কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে মুসলমানদের হার ৯০% এর বেশি। এই বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত ইসলামি শিক্ষা, প্রযুক্তি ও অর্থনীতিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা গেলে বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। ইসলামি ব্যাংকিং, হালাল শিল্প, ওমরাহ-হজ ব্যবস্থাপনা—বিশেষত এধরনের খাতগুলোতে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা ভবিষ্যতের পথ দেখায়।
ইসলামের বিস্তার কেবল একটি পরিসংখ্যানগত অগ্রগতি নয়; এটি একটি আদর্শিক, নৈতিক ও সভ্যতাভিত্তিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস। এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে রূপ দিতে হলে চ্যালেঞ্জগুলো বুঝে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ, সচেতন ও দূরদর্শী হতে হবে।
(সূত্র: মিডল ইস্ট আই, পিউ রিসার্চ সেন্টার, দ্য গার্ডিয়ান)

