ধর্ম ডেস্ক
২৬ জুন ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
মহররম মাস এবং বিশেষ করে ১০ মহররম—আশুরা ইসলামি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আর ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনাও এই দিনেই সংঘটিত হয়েছিল যে—নবী দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-এর কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ কিছু বিদআতমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, যা সওয়াবের আশায় করা হলেও ইসলামে তা বড় গুনাহের কাজ হিসেবে চিহ্নিত। ইসলাম শরিয়তসিদ্ধ আমলের পাশাপাশি বিদআত থেকে দূরে থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে।
মাতম ও নিজেকে আঘাত করা: কারবালার শোক পালনের নামে নিজের শরীরকে চাবুক মারা, রক্ত বের করা, মিছিল করা বা মাতম করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ও বিদআত। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি বিদায় নিচ্ছি এমন অবস্থায় যে, তোমাদের মধ্যে কেউ জাহেলিয়াতের মতো গাল চাপড়াবে, কাপড় ছিঁড়বে, আর জাহেলিয়াতের আহ্বান জানাবে।’ (সহিহ মুসলিম)
সওয়াবের আশায় খাবার আয়োজন করা: অনেক এলাকায় আশুরার দিন বিশেষভাবে হালুয়া-রুটি, খিচুড়ি বা বিশেষ খাবার রান্না করা হয়, যাকে সওয়াবের কাজ মনে করা হয়। অথচ এ ব্যাপারে কোনো সহিহ হাদিস নেই। এমন কিছু আমল যা রাসুল (স.) এবং সাহাবায়ে কেরাম করেননি, তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।
আলোকসজ্জা ও আতশবাজি: কিছু স্থানে আশুরাকে কেন্দ্র করে ঘর বা মসজিদে আলোকসজ্জা ও আতশবাজির আয়োজন করা হয়, যা ইসলামি রীতি নয়। বরং তা অপচয় ও অনুচিত আনন্দ প্রকাশের নামান্তর।
আরও পড়ুন: বিদআত হতে দেখলে সাহাবিরা যা করতেন
তাজিয়া বানানো ও শোভাযাত্রা: ইমাম হুসাইনের (রা.) স্মরণে তাজিয়া বানিয়ে শোক মিছিল করা, পুঁথি পাঠ করা, ‘আলম’ বহন করা ইত্যাদি বিদআতি ও ভ্রান্ত কাজ। এগুলোর কোনো শরয়ি ভিত্তি নেই।
সুরমা, তেল, মেহেদি লাগানো ইত্যাদি নির্দিষ্ট করা: কেউ কেউ বিশ্বাস করে, আশুরার দিন সুরমা বা মেহেদি ব্যবহার করলে নাকি সওয়াব হবে। এটি ভিত্তিহীন এবং বিদআত।
আলেমরা বলেন, মূলত হুসাইন (রা.)-এর বিরোধীরাই আশুরাকেন্দ্রিক বিদআতগুলো আবিষ্কার করেছে। যার ব্যাপারে শরিয়তের কোনো দলিল নেই। জমহুর আলেমদের মতে, আশুরা উপলক্ষে রোজা রাখাই মোস্তাহাব আমল। (ইসলাহুল মাসাজিদ, খণ্ড-১, পৃ-১৬৭)
আশুরা উপলক্ষে ইসলামে যে আমলটি সুন্নত হিসেবে প্রমাণিত, তা হলো-
আশুরার রোজা রাখা: নবীজি (স.) বলেছেন- ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছরের (সগিরা) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম)
আরও পড়ুন: বিদআতি লোককে আশ্রয় দিলে যে গুনাহ হবে
৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ রোজা রাখা: এককভাবে ১০ তারিখের রোজা না রেখে আগে-পরে একদিন মিলিয়ে রোজা রাখা উত্তম। কারণ, রাসুল (স.) বলেছেন— ‘আমি বেঁচে থাকলে আগামী বছর ৯ তারিখেও রোজা রাখব।’ (সহিহ মুসলিম)
নবীজির নিষেধাজ্ঞা: নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। নব-উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)
বিদআতিদের পানি পান করাবেন না নবীজি: কেয়ামতের দিন রাসুল (স.) বিদআতি লোকদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। তিনি তাদের বলবেন, ‘যারা আমার দ্বীন পরিবর্তন করেছ, তারা দূর হও, দূর হও।’ (বুখারি: ৬৬৪৩)
আল্লাহ আমাদের সব কাজে সুন্নাহ মেনে চলার তাওফিক দিন এবং গোমরাহি ও বিদআত থেকে রক্ষা করুন। আশুরা আমাদের চোখে অশ্রু আনে, হৃদয়ে শিক্ষা দেয়; তবে শরিয়তের সীমা লঙ্ঘনের নয়।