রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিদআত দেখলে সাহাবি-তাবেয়িরা যা করতেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

বিদআত দেখলে সাহাবি-তাবেয়িরা যা করতেন

সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িদের অভিন্ন নীতি ছিল বিদআতকে প্রশ্রয় না দেওয়া। তাঁরা সর্বাবস্থায় বিদআত থেকে বেঁচে থাকতেন, অন্যদেরও বিদআতের খারাবি থেকে সতর্ক করতেন। সলফে সালেহিনরা এ ব্যাপারে এতই কঠিন ছিলেন যে বিদআতের পক্ষে কাউকে কোনো যুক্তি দাঁড় করানোরও সুযোগ দিতেন না।

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসুলুল্লাহ (স.) একটি গাছের নিচে বসে সাহাবিদের বাইয়াত নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে দেখা গেল- লোকেরা গাছটিকে সম্মান করছে। আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.) বিষয়টি খেয়াল করলেন এবং গাছটি কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। (মাজালিসুল আবরার পৃ. ১২১)


বিজ্ঞাপন


তাবেয়ি হজরত মুজাহিদ (রহ) বলেন, আমি সাহাবি হজরত ইবনে উমর (রা.)-এর সঙ্গে এক মসজিদে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি জোহর, কিংবা বলেছেন, আছর নামাজের জন্য ডাকাডাকি করছিল। তখন ইবনে উমর (রা.) বললেন, এই মসজিদ থেকে বেরিয়ে চল। এখানে বিদআত চলে। (আবু দাউদ: ৪৫৩)

আরও পড়ুন: বিদআত কেন প্রত্যাখ্যাত, পরিণাম কী?

লক্ষ্য করুন, কোথাও বিদআত হলে সেখানে সাহাবিরা উপস্থিত থাকতেন না। এমনকি মসজিদ থেকেই বের হয়ে গেলেন, যেন তাঁদের উপস্থিতির কারণে অন্যরা দলিল হিসাবে পেশ করার সুযোগ না পায়।

পরবর্তী যুগে এ ব্যাপারে সচেতনতা কমে যাওয়ায় শিরক-বিদআত মাথা চাড়া দিয়েছে এবং ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে। অবশ্য এ ব্যাপারে নবীজি আগেই সতর্ক করেছেন যে শেষ যুগে সুন্নতের ওপর টিকে থাকা কঠিন হবে। হাদিসের বর্ণনায় ‘...সে যুগে যে ব্যক্তি শরিয়ত ও সুন্নতের উপর নিজের আমল পূর্ণাঙ্গ রাখবে তাকে দেওয়া হবে পঞ্চাশ জন আমলকারীর সওয়াব। সাহাবিরা বললেন-ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাদেরই পঞ্চাশ জনের সমপরিমাণ? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, না। বরং তোমাদের (সাহাবিদের) পঞ্চাশ জনের সমপরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হবে। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মেশকাত পৃ. ৪৩৭)


বিজ্ঞাপন


আরেক হাদিসে নবীজি বলেন, (হে আমার সাহাবিগণ) তোমরা এমন যুগে বাস করছ যে, তোমাদের কেউ (সৎকাজের আদেশ দান  ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার) এই বিধান থেকে যদি দশভাগের একভাগও ছেড়ে দেয় তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে তোমাদের পরে আসবে আরেক যুগ যখন তাদের কেউ ওই বিধানের দশভাগের একভাগও পালন করবে সে নাজাত পেয়ে যাবে। (তিরমিজি, মেশকাত: ৩১)

আরও পড়ুন: বিদআতি লোককে আশ্রয় দেওয়া ইসলামে নিষেধ

জলিলুল কদর সাহাবিরা শিরক বিদআতের ব্যাপারে খুবই সতর্ক ছিলেন। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার সময় হজরত ওমরের মতো সাহাবি বলতে থাকেন, ‘আমি সুনিশ্চিত জানি, তুমি একটি পাথরমাত্র। তোমার মধ্যে না কোনো উপকার করার ক্ষমতা আছে আর না কোনো অপকার করার। যদি আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে চুম্বন করতে না দেখতাম তাহলে কস্মিনকালেও আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। (বুখারি, মুসলিম, সূত্র: আলমুনজিরি: ৬৭)

দেখুন, পরবর্তীদের জন্য কী শিক্ষা তিনি দিয়ে গেলেন। অথচ দুঃখজনকভাবে বলতে হয়-বর্তমানে কিছু মানুষ শিরক-বিদআতের পক্ষে যুক্তি দেখায় এবং যারা বিদআত থেকে মানুষকে সতর্ক করেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বিষোদগার করে। 

এটি খুবই নিকৃষ্ট আচরণ। কেননা সাহাবা ও তাবেয়িনের জীবনাদর্শ তাদের সঙ্গেই মিলে। বিদআতের সমর্থকরা মূলত শয়তানের ফাঁদে বন্দী। তারা বুঝতে পারছে না, শয়তান বিদআতকে কত পছন্দ করে। কোনো মুসলমান জেনা-ব্যভিচার, খুন-খারাবি করলে সে যতটা খুশি হয় তার চেয়ে বেশি খুশি হয় সুন্নত ছেড়ে বিদআতে লিপ্ত হলে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ি সুফিয়ান সাওরি (রহ) বলেন- ‘ইবলিসের নিকট নাফরমানির চেয়েও বিদআত বেশি প্রিয়। কারণ নাফরমানি থেকে তাওবা করার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিদআত থেকে তাওবা করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’ (শাতিবি, আলইতিসাম: ১/১১; ইমাম সুয়ুতি, আলআমরু বিল ইত্তিবা পৃ-১৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিদআতের বিপরীতে সুন্নতের অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। শিরক-বিদআত থেকে নিজে বেঁচে থাকা ও অন্যদের সতর্ক করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর