ধর্ম ডেস্ক
২৪ জুন ২০২৫, ০৬:৫৬ পিএম
আল্লাহর ভয় এটি এমন একটি গুণ, যা চরিত্রকে শুদ্ধ করে আর জীবনকে করে তোলে আলোকিত। ইসলামি পরিভাষায় তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় বলতে এমনভাবে সচেতন ও সতর্ক থাকাকে বোঝায়, যেন কোনো গুনাহের ধারে-কাছেও না যাওয়া হয় এবং কোনো নেক আমল থেকে পিছিয়ে না থাকা হয়।
আল্লাহ তাআলা তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলেন- یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে সেভাবে ভয় করো যেভাবে ভয় করা উচিত। আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মরো না’ (সুরা আলে ইমরান: ১০২)
১. কোরআন শিক্ষা ও অধ্যয়ন
আল্লাহ বলেন— ‘নিশ্চয়ই আমি এ কোরআনে মানুষের জন্য সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে... যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা জুমার: ২৭-২৮)
২. আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তা
রাত-দিনের পরিবর্তন, আকাশ-জমিনের বিস্ময়কর সৃষ্টিজগত সম্পর্কে ভাবনার মধ্য দিয়ে একজন মুমিনের অন্তরে জন্ম নেয় আল্লাহর ভীতি। ‘এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস: ৬)
৩. একাগ্রতা ও ইখলাস নিয়ে ইবাদত করা
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো... যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা বাকারা: ২১)
আরও পড়ুন: তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
৪. রোজা পালন
তাকওয়া অর্জনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো রোজা পালন। আল্লাহ বলেন- ‘রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে... যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)
৫. পরকাল সম্পর্কে চিন্তা
আখেরাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন অন্তরে আল্লাহর ভয় প্রতিষ্ঠা করে। ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা আমাকে ভয় করো।’ (সুরা জুমার: ১৬)
৬. সুবিচার বা ইনসাফ করা
‘তোমরা সুবিচার করো। কেননা তা তাকওয়ার নিকটবর্তী।’ (সুরা মায়িদা: ৮)
৭. রাসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রতি প্রেম
‘যারা রাসুলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নিচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরিশোধিত করেছেন।’ (সুরা হুজরাত: ৩)
যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদের জন্য আখেরাতের পাশাপাশি দুনিয়াতেও সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তাদের সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ বলেন- ‘যারা ঈমান এনেছে ও তাকওয়া অবলম্বন করেছে, দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় জীবনে তাদের জন্য সুসংবাদ! (সুরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)
আরও পড়ুন: ইসলামে প্রশংসিত চরিত্রের অধিকারী যারা
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করবেন এবং রিজিক দান করবেন যেখান থেকে সে ধারণাও করতে পারবে না।’ (সুরা তালাক: ২-৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন- (হে নবী!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে সেই বস্তুর কথা বলবো, যা তাবৎ পৃথিবীর সমুদয় কাম্য বস্তু হতেও উত্তম? শোনো তাহলে, এমন জান্নাত ও বাগানবাড়িসমূহ, যা তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রস্তুত রয়েছে, যার পাদদেশ দিয়ে নহরমালা প্রবহমান। মুত্তাকীরা অনন্তকাল সেখানে অবস্থান করবে। সেখানে থাকবে তাদের জন্য পূতপবিত্র সঙ্গিনী, আর থাকবে আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে বিশেষ রেজা ও সন্তুষ্টি। আর বান্দাদের তাকওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা খুবই অবগত। (সুরা আলে ইমরান: ১৫)
আজকের এ গুনাহভরা দুনিয়ায় আত্মশুদ্ধির সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো তাকওয়া। আল্লাহর ভয় অন্তরে না থাকলে আমল টিকবে না, চরিত্র গড়বে না, আর পরকালীন মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আসুন, আমাদের অন্তরে সেই বাস্তব ও জীবন্ত আল্লাহভীতি প্রতিষ্ঠা করি, যাতে আমরা প্রকৃত মুত্তাকি হয়ে উঠতে পারি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ভয় ও ভালোবাসায় বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।