ইসলামে সুন্দর চরিত্রের চেয়ে উত্তম কিছু নেই। সচ্চরিত্র বা ইসলামি দৃষ্টিতে প্রশংসিত চরিত্র হলো উত্তম ও সুন্দর চরিত্র, যা মানুষের কাজে-কর্মে প্রকাশ পায়। মুহাদ্দিসগণের মতে, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, ক্ষমা ও উদারতা, বিনয় ও নম্রতা, দানশীলতা, সহনশীলতা, হারাম থেকে বিরত থাকা, হালাল অন্বেষণ করা, পরিবারের জন্য সানন্দে খরচ করা, শত্রুতা না করা, গোপনে ও প্রকাশ্যে অন্যের জন্য কল্যাণ কামনা করা ইত্যাদি সচ্চরিত্রের অন্যতম গুণাবলী। এক কথায় ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিনয়ের সবগুলো দিকই সচ্চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত।
ঈমানের পূর্ণতার জন্য, মানুষকে হকের পথে দাওয়াত দিতে, সর্বোপরি সুন্দর সমাজ গঠনে সচ্চরিত্রের বিকল্প নেই। এ কারণে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলকে সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা ক্বলাম: ৪)
বিজ্ঞাপন
সাহাবিরাও ছিলেন অনুপম চরিত্রের অধিকারী। নবীজির সবচেয়ে যোগ্য উত্তরসূরী। যাদের ওপর আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট। মূলত যার চরিত্র যত সুন্দর, সে আল্লাহর কাছে তত বেশি প্রিয়। যুগে যুগে আল্লাহর যত প্রিয় বান্দা দুনিয়াতে এসেছেন এবং পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের সবচেয়ে বড় গুণটি ছিল উত্তম চরিত্র। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (জামিউস সগির: ২১৮)
আরও পড়ুন: নবীজির চরিত্র সম্পর্কে আয়েশা (রা.) যা বলেছেন
মহৎ চরিত্র বা ইসলামে প্রশংসিত চরিত্র কী—এর অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি অভিমত আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহৎ চরিত্রের অর্থ মহৎ দ্বীন। কেননা আল্লাহ তাআলার কাছে ইসলামের চেয়ে বেশি প্রিয় কোনো দ্বীন নেই। আয়েশা (রা.) বলেন, স্বয়ং কোরআন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মহৎ চরিত্র। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন যেসব উত্তম কর্ম ও চরিত্র শিক্ষা দেয়, তিনি সেসবের বাস্তব নমুনা। আলী (রা.) বলেন, মহৎ চরিত্র হলো কোরআনে বর্ণিত শিষ্টাচার। (কুরতুবি)
চরিত্রবান মানুষ আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তাদের মহান আল্লাহ এতই ভালোবাসেন যে তাদের দিনের বেলায় রোজা ও রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের সমপরিমাণ মর্যাদা দান করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) সাওম পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ: ৪৭৯৮)
বিজ্ঞাপন
বিশিষ্ট তাবেয়ি মাসরুক (রহ.) বলেন, একবার আমরা আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বলেন, রাসুল (স.) স্বভাবগতভাবে অশালীন ছিলেন না এবং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অশালীন কথা বলতেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। (বুখারি: ৬০৩৫)
আরও পড়ুন: বেশি মানুষ জান্নাতে যাবে যে দুই কারণে
জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো উত্তম চরিত্রবান হওয়া। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আল্লাহভীতি, সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিজি: ২০০৪)
অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মিজানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই।’ (আবু দাউদ: ৪৭৯৯)
তাই আমাদের উচিত, উত্তম চরিত্র গঠনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। রাসুল (স.) যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবে চলা। সত্যবাদী হওয়া, আমানতের ব্যাপারে সচেতন হওয়া, নম্র হওয়া, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, কারো সঙ্গে অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করা, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, বিপদে ধৈর্য ধারণ করা, লজ্জাশীল হওয়া, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, দয়ালু হওয়া, অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা।
খারাপ চরিত্রের অনুষঙ্গ যেমন মিথ্যা, ঠকানো, ধোঁকা, খেয়ানত, প্রতারণা, হিংসা, খারাপ ষড়যন্ত্র, চুরি, সীমালঙ্ঘন, জুলুম ইত্যাদি থেকে ইসলাম নিষেধ করে। সচ্চরিত্র মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব অটুট রাখে এবং কল্যাণকর সমাজ গঠনে উৎসাহিত করে। একটি রাষ্ট্রের প্রত্যেক মানুষ যদি চরিত্রবান হয় তাহলে সমাজ হবে শান্তিময়। দুনিয়া-আখেরাত সব কল্যাণ অর্জিত হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উত্তম চরিত্র গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

