ধর্ম ডেস্ক
১১ জুন ২০২৫, ০১:৩১ পিএম
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এই সময়ে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। দুপুরের রোদের তীব্রতা, ঘামের অস্বস্তি ও ক্লান্তি অনেককে নামাজের প্রতি অনীহাশীল করে তোলে। বিশেষ করে মসজিদে গিয়ে জামাআতে অংশগ্রহণ বা সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ব্যাপারে অনেকের মধ্যে অবহেলা দেখা যায়। অথচ ইসলামে গরমসহ কষ্টকর অবস্থায়ও নামাজ আদায়ে বিশেষ সওয়াবের কথা এসেছে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমার কষ্ট ও খরচ অনুযায়ী তোমাকে সওয়াব দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ১৭৮৭)
অর্থাৎ যদি কেউ প্রচণ্ড গরমেও ঘাম ঝরিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে নামাজ পড়েন, তার এই কষ্ট পাপ মোচনের ও সওয়াব অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠবে।
পবিত্র কোরআনেও ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের ভেতর এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আত্মবিক্রয় (উৎসর্গ) করে থাকে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ২০৭)
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ (মেশকাত: ৫৯১)
আরও পড়ুন: ফজর-আছর-এশা নামাজের বিশেষত্ব
হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন- ‘গরম ও কষ্টের সময় আমরা নামাজ আদায়ে আরও উৎসাহী হয়ে যেতাম, কারণ আমরা জানতাম—এ সময়ের ইবাদতে আলাদা ফজিলত আছে।’ (তাবারানি ও বায়হাকি বর্ণনা করেছেন)
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি সময়ে সুখে-দুঃখে, গরমে-শীতে, ব্যস্ততায়-অবসরে নামাজের গুরুত্ব অপরিবর্তনীয়। আর যখন পরিবেশ প্রতিকূল থাকে, তখন সেই নামাজই আপনার জান্নাতের মূল পাথেয় হয়ে উঠতে পারে।’
তাই আমাদের করণীয় হলো- গরমকে অজুহাত না বানিয়ে বরং ইবাদতের প্রতি ধৈর্য দেখাতে হবে। চেষ্টা করতে হবে গরম ও ঠাণ্ডা উভয় সময়ে নামাজ আদায় করতে। জামাআতের ফজিলতের কথা ভেবে জামাত পরিত্যাগ যেন না করা হয় সেই চেষ্টা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: ইশরাক ও চাশতের নামাজ কখন পড়তে হয়, ফজিলত কী?
তবে বেশি গরমের মৌসুমে জোহর নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত। আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে ছিলাম। একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবীজি (স.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবীজি (স.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। এরপর নবীজি (স.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো।’ (বুখারি: ৫৩৯)
গরম হোক বা ঠাণ্ডা, অনুকুল পরিবেশ কিং প্রতিকূল, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এই দোয়াটি পড়া অভ্যাসে পরিণত করুন। দোয়াটি হলো- اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আ'ইন্নী আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার জিকির, তোমার শুকরিয়া ও তোমার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করো।’ (আবু দাউদ: ১৫২২)
গরমের কারণে যদি কেউ নামাজে অলসতা করে, তবে তিনি নিজেরই ক্ষতি করেন। কিন্তু যিনি গরম উপেক্ষা করে কষ্ট করে নামাজ আদায় করেন, আল্লাহ তাকে তার দ্বিগুণ প্রতিদান দেন। এ গ্রীষ্মেই আমরা নামাজকে জীবনপ্রবাহের অংশ বানিয়ে নিতে পারি, যেন তা হয়ে ওঠে জান্নাতের টিকিট। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।