পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও ফজর, আছর ও এশার নামাজের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে কোরআন-হাদিসে। চলুন জেনে নিই- এই তিন ওয়াক্তের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত।
ফজর
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজ অধিক গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে ‘ফজর’ নামে একটি সুরাও রয়েছে। এমনকি মহান আল্লাহ শপথ করেছেন ফজরের। (সুরা ফজর: ১) ফজরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল সে মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো...।’ (মুসলিম: ১৩৭৯)
বিজ্ঞাপন
অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি: ৬৫৭)
ফজর নামাজের ১০ পুরস্কার
ফজরের সুন্নত নামাজের কাজা আদায়ের নিয়ম
জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য ফজরের নামাজ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিখ্যাত তাবেয়ি আবু বকর বিন উমারাহ তাঁর পিতা রুআয়বাহ থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের আগের এবং সূর্যাস্তের আগের অর্থাৎ ফজর ও আছরের নামাজ আদায় করে।’ (মুসলিম: ১৩২২) ফজরের সুন্নত নামাজ সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)
আছর
আছর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আছর নামে একটি সুরা রয়েছে। পবিত্র কোরআনে আছরের নামাজকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ আছর নামাজ ফজর-জোহর এবং মাগরিব-এশার মধ্যবর্তী নামাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সকল নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের (আছর) ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও।’ (সুরা বাকারা: ২৩৮)
বিজ্ঞাপন
মুফাসসিরগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, আছরের নামাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হলো— সাধারণত এ সময় মানুষ কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে। ফলে নামাজ আদায়ে গাফিলতি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। আছরের নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে এসেছ, ‘ফেরেশতারা পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আছর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্র হয়। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যায়। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। উত্তরে তারা বলে, আমরা তাদের নামাজে রেখে এসেছি এবং আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনো তারা নামাজ আদায়রত অবস্থায় ছিল। (সহিহ বুখারি: ৫৫৫)
আছরের পর কাজা নামাজ পড়া যাবে?
জোহর-আছর নামাজে কিরাত নিম্নস্বরে পড়তে হয় কেন?
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আছরের নামাজের এক সেজদা পায়, তাহলে সে যেন নামাজ পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হওয়ার আগে ফজরের নামাজের এক সেজদা পায়, তাহলে সে যেন নামাজ পূর্ণ করে নেয়। (সহিহ বুখারি: ৫৫৬)
এশা
এশার নামাজের বিশেষ আলোচনা উঠে এসেছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত।’ (বুখারি: ৬৫৭) রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম: ১৩৭৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম: ৬৫৬)
উল্লেখ্য, কোনো নামাজই গুরুত্বহীন নয়, বরং দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। তাই কোনো নামাজের ব্যাপারেই অবহেলা করা যাবে না। তবে উল্লেখিত তিন ওয়াক্তের বিশেষত্ব ফুটে উঠেছে হাদিসে। তাই এখানে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথানিয়মে যথাসময়ে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

