ধর্ম ডেস্ক
০২ জুন ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম
কোরবানি ঈদুল আজহার বিশেষ ইবাদত, যা আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দের আমল। কিন্তু কোরবানি যেন কবুল হয়, তার জন্য কিছু শর্ত মেনে চলা দরকার। চলুন, সহজ ভাষায় দেখি কোরবানি কীভাবে সম্পন্ন করলে আল্লাহর নিকট তা কবুল হবে।
কোরবানি করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর খুশি করার জন্য। কাউকে শোনানো বা দেখানো কিংবা অন্যকোনো উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। অর্থাৎ কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে। লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে অথবা কম টাকায় অধিক গোশত পাওয়া যাবে—এধরণের নিয়তে কোরবানি করলে ওই কোরবানি শুদ্ধ হবে না; কবুলও হবে না। তবে যদি আপনার অন্তরে এ ধরনের ইচ্ছা থাকে যে কোরবানি শেষে গোশত খাবো—এ ধরনের আকাঙ্খার কারণে আপনার কোরবানি অশুদ্ধ হবে না। (সুরা হজ: ৩৭; মুসনাদে আহমদ: ২২৯৮৪; আল ফতোয়াল কুবরা, সদরুশ শহিদ: ১/২১৪; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩১৩)
কোরবানির পশু কিনতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে। হারাম টাকায় কোরবানি করলে ওই কোরবানি শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না।’ (সুরা বাকারা: ৪২) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ (সহিহ মুসলিম: ১০১৫)
আরও পড়ুন: হারাম টাকা দান করলে সওয়াব হবে?
ইসলামি শরিয়তে কোরবানির পশুর নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে। যেমন- উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। ছাগলের বয়স একবছর হতে হবে। ভেড়া ও দুম্বার বয়সও এক বছর হতে হবে, তবে সংকটের সময় বা মোটাতাজা হলে ৬ মাসের হলেও সমস্যা নেই। (সহিহ মুসলিম: ১৯৬৩; আবু দাউদ: ২৭৯৭; ইবনে মাজাহ: ৩১৭৯)
কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য পশু হতে হবে বড় ধরনের দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। হাদিসে এসেছে, ‘চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি হবে না। অন্ধ, যার অন্ধত্ব স্পষ্ট। রোগাক্রান্ত, যার রোগ স্পষ্ট। পঙ্গু, যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট ও আহত, যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে।’ ( ইবনে মাজাহ: ৩১৪৪)
কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ না বললে কোরবানি হবে না। কিন্তু যদি ভুলে বিসমিল্লাহ না বলে, তাহলে কোরবানি হয়ে যাবে। (সুরা আনআম: ১২১; ইবনে মাজাহ: ২০৪০; মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক: ৮৫৪০)
আরও পড়ুন: বাবার হারাম উপার্জনের টাকা গ্রহণ করা কি জায়েজ?
পশুর গলা দ্রুত কাটা উচিত যাতে সে কম কষ্ট পায়। ধারালো ছুরি ব্যবহার করা জরুরি, যেন পশু অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা না পায়। (সহিহ বুখারি) আর জবাই সহিহভাবে করতে হবে। পশু জবাই শুদ্ধ হওয়ার জন্য গলার চারটি রগ কাটা জরুরি: ১. কণ্ঠনালি, ২. খাদ্যনালী, ৩. দুই পাশের মোটা রগ, যাকে ওয়াজদান বলা হয়। এই চারটি রগের মধ্যে যেকোনো তিনটি কাটা হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি কাটা হয় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (হেদায়া: ৪/৪৩৭)
কোরবানি করতে হবে ঈদের দিনের ফজরের নামাজের পর থেকে জিলহজ মাসের ১৩ তারিখের মধ্যে। এর আগে বা পরে করলে তা কবুল হবে না। (সুনানে তিরমিজি: ১৫৩৭)
আরও পড়ুন: ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার বিধান
আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘সেখানে থেকে নিজেরাও খাও এবং নিঃস্ব দরিদ্রদেরও খাওয়াও।’ (সুরা হজ: ২৮) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছে- ‘তোমরা (কোরবানির গোশত) খাও, জমা রাখো ও সদকা করো।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৭১) এসব দলিল থেকে বোঝা যায়, কোরবানির গোশত আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের দেওয়া উত্তম। তবে, কোরবানির পুরো মাংস যদি কেউ নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই; কোরবানি শুদ্ধ হবে। তবে, (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) একতৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২২৪; আলমগিরি: ৫/৩০০)
কোরবানি একটি মহান ইবাদত। এই ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হবে যদি আমরা সঠিক নিয়ম অনুসরণ করি, আন্তরিক হই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি। আল্লাহ আমাদের সবার কোরবানি কবুল করুন। আমিন।