ভালো চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি দেশে এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ইসলামে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দুটোই হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশে শাসক কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত।’ (ইবনে মাজাহ: ২৩১৩; আবু দাউদ: ৩৫৮০; সুনানে তিরমিজি: ১৩৩৬)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি।’ (মু’জামুল আউসাত: ২০২৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ঘুষ খাওয়ার কঠিন পরিণতি
এরপরও অনন্যোপায় হলে বা চাকরির বিশেষ প্রয়োজনে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়াকে বৈধ বলেন ফুকাহায়ে কেরাম। এক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করেন তারা। শর্তগুলো হলো। ১. অন্য কাজের সুযোগ না থাকলেই কেবল ওই চাকরি করা যাবে। ২. যথার্থ ও সঠিকভাবে উক্ত চাকরি করার যোগ্যতা ও মানসিকতা থাকতে হবে; কাজের অযোগ্য হলে এবং ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করলে ওই বেতন বৈধ হবে না। ৩. মূল বিলের চেয়ে বেশি বিল কর্মস্থলের তহবিল থেকে গ্রহণ করা যাবে না। ৪. ওই চাকরি করা অবস্থায় অন্য (ঘুষহীন ও হালাল) কাজের সুযোগ খুঁজতে হবে।
উপরোক্ত শর্তসাপেক্ষে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া জায়েজ হতে পারে এবং সেই উপার্জনও হালাল হবে। অন্যথায় উক্ত চাকরি ও সেই উপার্জন হালাল হবে না।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, ঘুষদাতা এবং ঘুষগ্রহীতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঘুষদাতা অনেকসময় বাধ্য হয়েই ঘুষ দেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে অন্যকোনো উপায় না দেখে ঘুষ দিয়ে হলেও তাকে চাকরি নিতে হয়। কিন্তু ঘুষগ্রহীতা সবসময়ই ধোঁকাবাজ হয়। আর ধোঁকা দিয়ে উপার্জন অবৈধ এবং ধোঁকাবাজরা হাদিস অনুযায়ী নবীজির উম্মত নয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৩১৪৭; সহিহ মুসলিম: ১৬৪; ইবনে মাজাহ: ২২২৫; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪৯০৫)
অতএব, ঘুষগ্রহীতারা হলো হারাম উপার্জনকারী। আর তাদের জন্য জাহান্নামের আগুনই হলো উপযুক্ত শাস্তি। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে, তার জন্য দোজখের আগুনই উত্তম।’ (তিরমিজি: ৬১৪)
(তথ্যসূত্র: রদ্দুল মুখতার: ০৮/৩৪; ইলাউস সুনান: ১৫/৬১; রদ্দুল মুখতার: ০৯/৬০৭; ফাতহুল কাদির: ০৭/২৫৫; আল-বাহরুর রায়েক: ০৬/২৬২)

