images

ইসলাম

সময়ের মূল্য: কোরআন ও হাদিস কী বলে

ধর্ম ডেস্ক

১৮ মে ২০২৫, ০৮:২১ পিএম

সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক অমূল্য নেয়ামত। ইসলামের দৃষ্টিতে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কোরআন ও হাদিসে সময়ের গুরুত্ব ও অপচয়ের পরিণতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

কোরআনের দৃষ্টিতে সময়ের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলার কাছে সময় অনেক মূল্যবান বিষয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘শপথ সময়ের, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, তবে তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে, একে অপরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা আল-আসর: ১-৩)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সময়ের শপথ করেছেন। এতেই বোঝা যায়, সময় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এই আয়াতের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে, সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়। যারা সময়কে কাজে লাগায় এবং সৎকর্ম করে, তারাই সফলকাম।

মানব জীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার 

‘আল্লাহ রাত ও দিনকে একে অপরের পশ্চাৎপদ করে দেন। এতে চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।’ (সুরা নূর: ৪৪) এই আয়াতে আল্লাহ রাত ও দিনের পরিবর্তনকে মানুষের জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যাতে মানুষ সময়ের মূল্য উপলব্ধি করতে পারে এবং সময়কে কাজে লাগাতে পারে।

আরও পড়ুন: পরকালে ৫ কারণে মুমিন আফসোস করবে

হাদিসের দৃষ্টিতে সময়ের মূল্যায়ন

হাদিস শরিফে সময়কে নেয়ামত বলে অভিহিত করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, দুটি নেয়ামতের মূল্যায়ন না করে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; একটি সুস্থতা অপরটি অবসর। (সহিহ বুখারি: ৬০৪৯)

এখানে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, স্বাস্থ্য ও অবসর—এই দুটি নেয়ামত সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

অসংখ্য হাদিসে সময়কে মূল্য দেওয়ার এবং জীবনের গুরুত্ব প্রদানের তাগিদ রয়েছে। এক হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের আগমনের আগে গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩৫৪৬০) 

এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) সময়কে মূল্যায়ন করে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পর্যায়কে কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন।

সময়ের অপচয় ও এর ক্ষতি

ইসলামের দৃষ্টিতে সময়ের অপচয় করা মানে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে অবহেলা করা। অলসতা, অপ্রয়োজনীয় কাজ, ফেসবুক বা টিভিতে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করা, এবং অযথা কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া—এসবই সময়ের অপচয়। কেয়ামতের দিন সময়ের এসব অপব্যবহারের হিসাব দিতে হবে।

হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার পা এক জায়গা থেকে সরবে না যতক্ষণ না সে চারটি প্রশ্নের জবাব দেবে: জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছিল? যৌবনকাল কীভাবে কাটিয়েছিল? সম্পদ কোথায় উপার্জন করেছিল এবং কোথায় ব্যয় করেছিল? যে জ্ঞান অর্জন করেছিল, তা কতটুকু আমল করেছিল?’ (তিরমিজি: ২৪১৭)

আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি কেমন

সময়ের গুরুত্ব নিয়ে মুসলিম মনীষিদের বক্তব্য

ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, ‘সময়ের ব্যাপারে ছাড়ের প্রবণতা আত্মঘাতি। কারণ সময় অতি দ্রুত অতিবাহিত হয়। কারো জন্য অপেক্ষা করে না। আর ফিরে আসে না। সব শ্রেণির কাছে সময় সবচেয়ে সম্মানিত বস্তু। ইবাদতকারী নির্ধারিত সময়ে ইবাদত ও জিকিরে কাটিয়ে থাকেন। আল্লাহমুখী কাজে সময় ব্যয় করেন। তাই নির্ধারিত সময় চলে গেলে তা ফিরে পাওয়া অসম্ভব। কারণ পরবর্তী সময়েরও নির্ধারিত কাজ রয়েছে। কেউ সময় অতিবাহিত করলে তা আর ফিরে পায় না।’ (মাদারিজুস সালিকিন, পৃষ্ঠা-৪৯)

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘আমি সুফিদের সান্নিধ্যে ছিলাম। তাদের থেকে আমি দুটি কথা ছাড়া কিছুই শিখিনি। তাদের একটি কথা হলো, সময় হলো তরবারি। তুমি তাকে না কাটলে সে তোমাকে কেটে ফেলবে। আরেকটি কথা হলো, তুমি নিজেকে সত্যের কাজে ব্যস্ত না রাখলে তুমি মিথ্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। (আল-জাওয়াবুল কাফি, পৃষ্ঠা-২০৮) 

আরও পড়ুন: মৃত্যুর কথা ভুলে থাকার পরিণাম

সময়ের সঠিক ব্যবহারে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলামে যেসব আমলে সময়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয় সেগুলো হলো- 
১. ইবাদত ও দোয়া: নিয়মিত নামাজ পড়া ও আল্লাহর জিকির করা।
২. জ্ঞান অর্জন: কোরআন, হাদিস ও উপকারী জ্ঞান অর্জনে সময় ব্যয় করা।
৩. উপকারী কাজ: সমাজসেবা, দান-সদকা ও কল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকা।
৪️. পরিকল্পনা ও সময় ব্যবস্থাপনা: দৈনন্দিন কাজের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করা।

ইসলাম সময়কে আল্লাহর দেওয়া অমূল্য সম্পদ হিসেবে গণ্য করে। সময়ের অপচয় শুধু দুনিয়াতে নয়, আখেরাতেও ক্ষতির কারণ হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জান্নাতিদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস থাকবে না। শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস হবে, যা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অনর্থক কথা বা কাজে অতিবাহিত হয়েছে।’ (বায়হাকি: ৫০৯)

তাই সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে ইবাদত, জ্ঞানার্জন এবং কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।