images

ইসলাম

কোরবানির নিয়ত কীভাবে করতে হয়

ধর্ম ডেস্ক

১৬ মে ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম

ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যেখানে কোরবানি একটি বিশেষ ইবাদত। সামর্থ্যবানদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানির নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন— فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

তবে কোরবানির নিয়ত সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। এখানে কীভাবে সঠিক নিয়তে কোরবানি করা যায়, তা তুলে ধরা হলো।

কোরবানির নিয়ত কীভাবে করবেন

নিয়ত মূলত আল্লাহর জন্য কোরবানির বিষয়টি ইচ্ছাশক্তিতে ও অন্তরে থাকা উচিত। কোরবানি করার সময় একজন মুসলমান যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানির ইচ্ছা করেন এবং মনে মনে নির্দিষ্টভাবে সেই উদ্দেশ্য ঠিক করেন, সেটিই নিয়ত হিসেবে যথেষ্ট। তবে কোরবানির নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে চাইলে এটি পড়তে পারেন— إِنِّي وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرض حنيفا وما أنا من المشركين، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، بسم الله الله أكبر

উচ্চারণ: ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ ইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।...বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি দৃঢ়ভাবে সেই মহান সত্তার অভিমুখী হলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্গত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ—সবই বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি এ কাজের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের একজন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর।’ (আবু দাউদ: ২৭৮৬; ইবনে মাজাহ: ৩১২১)

অথবা সংক্ষিপ্তভাবে এভাবে নিয়ত করতে পারেন- اللهم مِنكَ وَلَكَ بسم الله الله أكبر উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর। অর্থ: হে আল্লাহ, (এই কোরবানির পশু) তোমার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং তোমারই জন্য উৎসর্গকৃত, বিসমিল্লাহি আল্লাহুআকবর।

আরও পড়ুন: কোরবানির দোয়া

কোরবানি নিয়ত কি শুধুমাত্র মুখে করা জরুরি?

কোরবানির নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়, তবে মুখেও উচ্চারণ করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো- মুখে উচ্চারণ করলেও বিশুদ্ধ নিয়ত অন্তরে থাকা জরুরি। ধরেন কেউ মুখে নিয়ত উচ্চারণ করলো, কিন্তু অন্তরে আল্লাহর জন্য কোরবানি করছে না, তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ (সকল কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল) এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, যেকোনো কাজের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বা নিয়ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি মনে মনে করা যথেষ্ট। তাই কোরবানির নিয়ত শুধু শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য হৃদয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

কোরবানির নিয়ত কোথায় করতে হয়?

কোরবানি করার নিয়ত করার সময় এটি কোনো বিশেষ স্থানে বা মসজিদে করার প্রয়োজন নেই। ব্যক্তি যে স্থানেই কোরবানি করবেন, সেখানে সঠিক নিয়ত সহকারে কোরবানি করার ইচ্ছা জানানো উচিত। কিছু লোক মনে করেন যে কোরবানি করার জায়গায় গিয়ে কিংবা পশু জবাই করার আগে নির্দিষ্টভাবে নিয়ত করতে হবে, তবে শরিয়তের দৃষ্টিতে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একমাত্র বিষয় হলো, কোরবানি করার আগে আল্লাহর জন্য ইচ্ছা থাকা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: শরিকদের কেউ কম টাকা দিলে কোরবানি শুদ্ধ হবে?

একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানির নিয়ত

জবাইকারী শুধু পশুটির মালিকদের নামে কোরবানি করছেন- এতটুকু মনের মাঝে রেখে জবাই করলে কোরবানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই নাম বলা নিয়ে জবাইকারীকে পেরেশানি করার প্রয়োজন নেই। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৫/৫১৭; বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৭১)

আসলে কাদের পক্ষ থেকে পশু কোরবানি করা হচ্ছে, সেটি পশু ক্রয়ের সময়ই নির্ধারিত হয়ে গেছে। তাই কোরবানিদাতার নাম যে উচ্চারণ করতেই হবে তা নয়। তবে, চাইলে সবার নাম একে একে উচ্চারণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে এভাবেও নিয়ত করতে পারেন যে, আমরা অমুক বলছি, আমাদের কোরবানি কবুল করুন, অথবা সবার তরফ থেকে কোরবানি কবুল করুন। (তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি: ৫৫৫৮,সহিহ মুসলিম: ১৯৬৬)

নিয়ত না করলে কি কোরবানি শুদ্ধ হবে?

কোরবানি করার জন্য নিয়ত করা জরুরি। যদি কেউ মনে মনে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত না করেন, তার কোরবানি আদায় হবে না। শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী, যেকোনো ইবাদত বা কাজ করার আগে নিয়ত থাকা আবশ্যক। যদিও মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়, তবে অন্তরের নিয়তের সাথে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। 

আরও পড়ুন: নিয়ত করতে ভুলে গেলে নামাজ শুদ্ধ হবে?

কোরবানি করার নিয়ত সুন্নত নাকি ওয়াজিব

কোরবানি করার নিয়ত মূলত ওয়াজিব (অবশ্যক)। কারণ, কোরবানি আল্লাহর জন্য সম্পাদিত একটি বিশেষ ইবাদত, এবং যেকোনো ইবাদত শুরু করার জন্য নিয়ত থাকতে হবে। নিয়ত ছাড়া কোরবানি শর্ত পূর্ণ হবে না, তাই তা ওয়াজিব বা জরুরি।

কোরবানির নিয়ত করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

কোরবানি করা যাবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য বা সামাজিক ভাবমূর্তি অর্জনের জন্য কোরবানি করা ইসলামসম্মত নয়।
নিয়ত সহকারে কোরবানি করা জরুরি। নিয়তটি মুখে বলুন বা না বলুন, অন্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টির ইচ্ছা থাকা জরুরি।
নিয়ত বিশুদ্ধ কিনা নিশ্চিত করুন। কোরবানি করার পর যদি কেউ মনে করেন যে, তার কোরবানির উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির বাইরে অন্যকিছু, তবে তার কোরবানির বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে।


আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। কোরবানির নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার পাশাপাশি অন্তরের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।