ধর্ম ডেস্ক
০৯ মে ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
হজের অন্যতম আমল হলো কোরবানি তথা পশু জবাই করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি ওমরাসহ হজ পালন করবে, তবে যে পশু সহজ হয়, তা জবাই করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৯৬)
কিরান ও তামাত্তু হজ আদায়কারীদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। যেহেতু তারা একই সফরে ওমরাসহ হজ পালন করে থাকেন। এখানে উল্লেখ্য, এটি ঈদুল আজহার ওয়াজিব কোরবানি নয়; বরং হজের দমে শোকর বা হজের কোরবানি। আর ইফরাদ হজ আদায়কারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তবে করলে ভালো। (মানাসিকে মোল্লা আলি কারি, পৃষ্ঠা-৪৭৮)
আরও পড়ুন: হজ কত প্রকার ও কী কী
কিরান ও তামাত্তু হজকারীকে অবশ্যই কোরবানি করতে হবে। কিন্তু তাদের যদি কোরবানি করার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে কোরবানির পরিবর্তে ১০টি রোজা রাখতে হবে। ১০ তারিখের আগে তিনটি রোজা রাখতে হবে, বাকি সাতটি হজ থেকে পরিপূর্ণরূপে অবসর হয়ে সুযোগমতো যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে রাখতে পারবে। (সুরা বাকারা: ১৯৬)
আর ১০ তারিখের আগে যদি তিনটি রোজা না রাখা হয় তাহলে কোরবানি করাই নির্ধারিত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ১০ তারিখ কোরবানির কোনো ব্যবস্থা না হলে কোরবানি না করেই সে হলক করে হালাল হয়ে যাবে। এরপর যখন সক্ষম হবে তখন হারামের সীমানার মধ্যে দুটি পশু জবাই করতে হবে। একটি হজের কোরবানির জন্য, আরেকটি কোরবানি না করে হালাল হওয়ার দম হিসেবে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা-২৬৫, ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/২৬৪)
১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় কোরবানি করলে কোরবানির ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে ১০ তারিখ বড় শয়তানকে পাথর মারার আগে কোরবানি করলে দম ওয়াজিব হবে। তাই বলা যায়, হাজিদের জন্য কোরবানির সময় শুরু হয় ১০ তারিখ বড় শয়তানকে পাথর মারার পর থেকে। কোরবানির পশু জবাই হওয়া নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল হলক করে হালাল হতে পারবে, কোরবানির পূর্বে হলক করে ফেললে কাফফারাস্বরূপ আরেকটি পশু জবাই করতে হবে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা-২৬৩)
আরও পড়ুন: হজে যাওয়ার আগে দেশে কোরবানির ব্যবস্থা করা জরুরি?
হজের কোরবানির পশু ও কাফফারা তথা জরিমানার পশু হারামের সীমার মধ্যে জবাই করা আবশ্যক। হারামের বাইরে জবাই করলে কোরবানি ও কাফফারা কোনোটাই আদায় হবে না। হারামের যেকোনো স্থানেই কোরবানি করা যায়। মিনায় কোরবানি করা জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার: ২/৫৩২)
ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর গুণাগুণ সম্পর্কে যেসব বিবরণ ও শর্ত আছে, হজের কোরবানির পশুর ক্ষেত্রেও সেই শর্তগুলো প্রযোজ্য। উট, গরু ও মহিষ দুই বছরের এবং বকরি, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে এক বছর বয়সী হতে হবে। আর পশুটি কোরবানি শুদ্ধ না হওয়ার মতো সব সংকট থেকে মুক্ত হতে হবে। উট, গরু ও মহিষের মধ্যে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার থাকতে পারবে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা-৪৭৮)
যার সামর্থ্য আছে তার জন্য একাধিক কোরবানি করা উত্তম। হাদিস শরিফে হজের মধ্যে বেশি বেশি তালবিয়া পড়তে ও কোরবানি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। তা ছাড়া নবীজি (স.) বিদায় হজের সময় ১০০টি উট কোরবানি করেছিলেন। (সহিহ বুখারি: ১৭১৮)
আরও পড়ুন: হজের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো কী
হজের কোরবানির গোশতের বিধান ঈদুল আজহার কোরবানির গোশতের মতোই। নিজেও খেতে পারবে, অন্যকেও খাওয়াতে পারবে, দান-সদকাও করতে পারবে, সংরক্ষণও করতে পারবে। তবে জরিমানাস্বরূপ যে দম দেওয়া হয় তার গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে না, বরং দরিদ্রদের সদকা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৩/৬৩৬)
হজ আদায়কারী ব্যক্তি যদি মক্কায় পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলে সে মুসাফির। মুসাফিরের ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি আবশ্যক হয় না। তাই এমন হজযাত্রীর জন্য মক্কা অথবা নিজ দেশে কোরবানি আদায়ের আবশ্যকতা থাকবে না।
তবে যদি হজপালনকারী মক্কায় পনের দিন থাকার নিয়ত করে, তাহলে সেই হাজি শরিয়তের দৃষ্টিতে মুকিম। তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার জন্য ঈদুল আজহার কোরবানি করা আবশ্যক। এই কোরবানি সে চাইলে মক্কায় অথবা নিজ দেশেও আদায় করতে পারবে। কিন্তু হজের দমে শোকর মক্কাতেই করতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ৮/৪৩৪, আল-আল বাহরুর রায়েক: ৮/৩১৮, আল-জাওহিরাতুন-নাইয়িরাহ: ২/২৬৭)