ধর্ম ডেস্ক
০২ মে ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
তাওয়াফ অর্থ ঘোরা বা প্রদক্ষিণ করা। ইসলামি পরিভাষায় তাওয়াফের নিয়তে হাজরে আসওয়াদের কোনা থেকে শুরু করে পবিত্র কাবাঘরের চারপাশে সাত বার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়। তাওয়াফ হজ ও ওমরার অপরিহার্য আমল। তাওয়াফের ৭টি প্রকার রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
১. তাওয়াফে কুদুম
মক্কার বাইরে থেকে এসে যে ব্যক্তি ইফরাদ হজ বা কিরান হজ করবেন তার জন্য মক্কায় প্রবেশের পর বায়তুল্লায় গিয়ে প্রথমে তাওয়াফ করা সুন্নত। এটিকে তাওয়াফে লিকা বা সাক্ষাতের তাওয়াফও বলে। এ তাওয়াফ আরাফায় অবস্থানের পূর্বে করতে হবে। এ তাওয়াফে কুদুম হজে তামাত্তুকারী বা শুধু ওমরাকারীর জন্য প্রযোজ্য নয়। মক্কার ভেতরের লোকদের জন্যও এটি প্রযোজ্য নয়।
২. তাওয়াফে ওমরা
যারা শুধু ওমরা করেন কিংবা তামাত্তু হজ করেন তাদের প্রথমে মক্কায় প্রবেশের পর তাওয়াফ করতে হয়। এটি ওমরার ক্ষেত্রে ফরজ। এই ওমরার তাওয়াফে প্রথম ৩ চক্করে রমল অর্থাৎ বীরদর্পে জোরে জোরে হাঁটা সুন্নত। ইহরামের কাপড় ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের ওপর রাখা যাকে ইজতিবা বলে, এটা করাও সুন্নত।
আরও পড়ুন: এক সফরে একাধিক ওমরা নাকি বারবার তাওয়াফ করা উত্তম?
৩. তাওয়াফে জিয়ারত বা হজের তাওয়াফ
১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বে হজের উদ্দেশ্যে তাওয়াফ করতে হয়। এটি হজের ক্ষেত্রে ফরজ। এ তাওয়াফ না করলে হজ আদায় হবে না। এটি ওমরার হজের মতোই। তবে এ তাওয়াফের পরবর্তী সাঈ আরাফার দিনের পূর্বেই আদায় করে নেওয়ার সুযোগ আছে। যদি অগ্রিম সাঈ করা হয়ে থাকে তাহলে তাওয়াফে জিয়ারতের পর সাঈ করতে হয় না। তাওয়াফে কুদুমের পর অগ্রিম সাঈ করা না হলে তাওয়াফে জিয়ারতের পর সাঈ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাওয়াফে ইজতিবা ও রমল করতে হবে।
৪. বিদায়ী তাওয়াফ
যারা মক্কার বাইরে থেকে এসে হজ করেন, তাদের হজের পর মক্কা থেকে বের হওয়ার সময়ে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়। এ তাওয়াফ করা ওয়াজিব। যারা মক্কায় থেকে যাবেন তাদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব নয়। তবে তারাও এ বিদায়ী তাওয়াফ করতে চাইলে করতে পারবেন।
৫. নফল তাওয়াফ
মক্কায় থাকা অবস্থায় যখনই সুযোগ পাওয়া যায় তখনই নফল তাওয়াফ করা যায়। অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় নফল তাওয়াফ করা বেশি বাঞ্ছনীয়। নফল তাওয়াফে ইজতিবা বা রমল নেই। নফল তাওয়াফ ইহরামের কাপড়ে নয়, বরং সাধারণ কাপড়ে হবে। ৭ চক্কর শেষ হলে একটি তাওয়াফ হিসেবে গণ্য হবে। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, স্ত্রী-সন্তানের জন্য মোটকথা যে কারও পক্ষ থেকে নফল তাওয়াফ করা যায়। এতে যার পক্ষ থেকে তাওয়াফ করা হবে আশা করা যায় তার আমলনামায় এর সাওয়াব লেখা হবে।
আরও পড়ুন: তাওয়াফের নিয়ম ও দোয়া
৬. মান্নত তাওয়াফ
কেউ যদি তাওয়াফ করার মান্নত করে তাহলে তার জন্য তাওয়াফ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
৭. তাওয়াফে তাহিয়্যা
মসজিদে প্রবেশের পর মসজিদের সম্মানে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। আর কাবা ঘরে হাজির হলে মসজিদুল হারামের সম্মানার্থে একটি তাওয়াফ করা মোস্তাহাব। তবে মসজিদে হারামে প্রবেশের পর অন্য কোনো তাওয়াফ করলেও তাতে তাওয়াফে তাহিয়্যা আদায় হয়ে যাবে।
হজ বা ওমরার অংশ হিসেবে বা নফল হিসেবে হোক, প্রতিটি তাওয়াফের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে। এটি এমন একটি আচার যা বান্দাকে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি হজযাত্রীর উচিত, মনোযোগ ও নিষ্ঠার সাথে তাওয়াফের ধরণ ও তাৎপর্য অনুধাবন করা এবং ইসলামের অন্যতম পবিত্র ঐতিহ্য ও আহ্বানের দিকে পূর্ণ আনুগত্যের সাথে সাড়া দেওয়া। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি যখন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলে, পাপ থেকে এমনভাবে বের হয়ে গেলে যেমন আজই তোমার মাতা তোমাকে জন্ম দিল।’ (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৯১১০)