images

ইসলাম

জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া কী

ধর্ম ডেস্ক

১৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম

images

জান্নাত পরকালীন পুরস্কার। মুমিনের আকাঙ্ক্ষিত ও সর্বশেষ ঠিকানা। জাহান্নাম হলো পরকালীন কঠিন শাস্তির জায়গা। জান্নাত লাভের জন্য এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য ঈমান-আমলের পাশাপাশি দোয়ার শিক্ষা রয়েছে হাদিসে। এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো— اللهم اني اسالك الجنة واعوذ بك من النار উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আঊযুবিকা মিনান্নার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ 

হাদিসে জান্নাত চাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়ার কথা এসেছে। বলা হয়েছে, দোয়াটি পড়লে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো— رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا ، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا ، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا উচ্চারণ: ‘রাদিতু বিল্লাহি রব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা’। অর্থ: ‘আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ (স.)-কে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি।’ আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন— যে ব্যক্তি দোয়াটি পড়বে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ হাদিসে আছে, এই কথাটি শোনে আবু সাইদ (রা.) আনন্দে বিস্মিত হয়ে যান। (আবু দাউদ: ১৫২৯)

আরও পড়ুন: উত্তম রিজিকের জন্য কোরআন-হাদিসে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া

অন্য এক হাদিসে মুনাইজির (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি- যে সকালে ‘রাদিতু বিল্লাহি রব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা’ পড়বে— আমি তার হাত ধরে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেবো। (মুজামুল কবির: ৩৫৫/২০; সিলসিলাতুস সহিহা: ২৬৮৬)

হাদিসে আরেকটি দোয়ার কথা এসেছে, যেটি পড়লে জান্নাতে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। দোয়াটি হলো— سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি।’ জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এই দোয়া পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়। (তিরমিজি: ৩৪৬৪)

প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লেও নিশ্চিত জান্নাত। আয়াতুল কুরসি হলো- اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুজুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।’ অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’ 

আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তাকে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু জান্নাতে যেতে বাধা দিতে পারবে না। (তাবরানি: ৭৫৩২; সহিহুল জামে: ৬৪৬৪)

সাইয়িদুল ইস্তেগফারের প্রতিদান হিসেবেও জান্নাতের অঙ্গিকার রয়েছে। সাইয়িদুল ইস্তেগফার হলো-اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবু-উ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ লাকা বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো।’ 

আরও পড়ুন: জরুরি দোয়াগুলো জেনে নিন

হজরত শাদ্দাদ ইবনুল আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই ইস্তেগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে ব্যক্তি জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দোয়া পড়ে নেবে আর ভোর হওয়ার আগে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)

অজুর পর কালেমা শাহাদাতের সঙ্গে এই দোয়া পড়লেও জান্নাত লাভ হবে— اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ ‘আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বহহিরিন।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।’ 

উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার পর বলে, ‘আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ’ পড়ে উল্লেখিত দোয়া পড়বে, তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামতো যেকোনো দরজা দিয়েই তাতে যেতে পারবে।’ (তিরমিজি: ৫৫)

উল্লেখ্য, জান্নাত লাভের জন্য এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করার ফজিলত অনেক বড়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোনো লোক আল্লাহ তাআলার নিকট তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করলে জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোনো লোক তিনবার জাহান্নাম হতে পানাহ (আশ্রয়) চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহ তা’আলার নিকট বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। (সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২)

অতএব, উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে সবসময় জান্নাত কামনা করব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।