ধর্ম ডেস্ক
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২১ পিএম
নবীজির মূল দায়িত্ব ছিল মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করা। ঈমান ও আমলের মাধ্যমে উম্মতের দুনিয়া ও আখেরাত সাফল্যমণ্ডিত করা। পাশাপাশি তিনি মানুষের সুস্থ থাকা নিয়েও কথা বলেছেন। আর তিনি যা কিছু বলেছেন সব আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তিনি মনগড়া কোনো কথা বলেন না। তা তো কেবল ওহি, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা।’ (সুরা নাজম ৩-৫)
সুতরাং রাসুলুল্লাহ (স.) মানুষের জন্য যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রতিষেধকের কথা বলেছেন, তাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওহি। আর একজন মুমিনের জন্য নবীজির প্রত্যেক দিক-নির্দেশনা মেনে চলা কর্তব্য। এখানে হাদিসের আলোকে বিভিন্ন রোগের পাঁচ প্রতিষেধকের নাম তুলে ধরা হলো।
১. কালোজিরা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘হাব্বাতুস সাওদা’য় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘সাম’ ব্যতীত। আর ‘সাম’ হলো মৃত্যু। ‘হাব্বাতুস সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ কালিজিরা)। (মুসলিম: ৫৬৫৯)
২. মধু
মধুর উপকারিতার কথা পবিত্র কোরআনে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার...। ’ (সুরা নাহল: ৬৮ ও ৬৯) হাদিসে এসেছে, আব্দুলাহ ইব্ন মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- তোমরা কোরআন ও মধু দিয়ে ব্যাধি নিরাময়ের ব্যবস্থা করবে।’ (ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা-১১৪২, হাদিস: ৩৪৫২)
আরও পড়ুন: রোগমুক্তিতে কার্যকর কোরআনের ৬ আয়াত
৩. হিজামা
হিজামা বা শিঙ্গা লাগানো একটি উত্তম প্রতিষেধক। হিজামা সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। এক হাদিসে আছে, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) অসুস্থ মুকান্নাকে দেখতে যান। এরপর তিনি বলেন, ‘আমি সরবো না, যতক্ষণ না তুমি শিঙা লাগাবে। কেননা আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এর (হিজামার) মধ্যে নিরাময় রয়েছে।’ (বুখারি: ৫৬৯৭) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুল (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত। শিঙা লাগানো, মধু পান করা এবং আগুন দিয়ে গরম দাগ দেওয়ার মধ্যে। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে গরম দাগ দিতে নিষেধ করি। (বুখারি: ৫৬৮১) আবু কাবশাহ আনমারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (স.) মাথার মাঝখানে এবং দুই কাঁধের মাঝে হিজামা করতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি নিজ শরীরের এ অংশে হিজামা করাবে, সে তার কোনো রোগের চিকিৎসা না করালেও কোনো ক্ষতি হবে না। (আবু দাউদ: ৩৮৫৯; ইবনে মাজাহ: ৩৪৮৪)
৪. জমজমের পানি
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) নবী (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘জমজম ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি ‘ (আলমুজামুল কাবির, তবারানি: ১১১৬৭; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫৭১২)
আরও পড়ুন: জমজমের পানি পানের পদ্ধতি ও দোয়া
৫. আজওয়া খেজুর
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘মদিনার উচ্চভূমিতে উৎপন্ন আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রথম ভোরে তা আহার করা বিষের প্রতিষেধক।’ (মুসলিম: ৫১৬৮; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৩৫৩৯) হজরত সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৫৪৪৫; মুসলিম: ২০৪৭-১৫৫; আবু দাউদ: ৩৮৭৬)
হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উল্লেখিত নববি চিকিৎসা ও প্রতিষেধক গ্রহণ করার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।