সুস্থতা-অসুস্থতা দুটিই আল্লাহর নেয়ামত। সুস্থ হলে মানুষ বেশি করে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। শোকর আদায় করতে পারে। আর অসুস্থতার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, গুনাহ ক্ষমা করেন। যেকোনো অসুস্থতায় চিকিৎসা নেওয়া সুন্নত। কেননা ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বুখারি, খণ্ড-২য়, পৃ-৮৪৮, হাদিস -৫২৭৬; তাফসিরে কুরতুবি, খণ্ড-১০ম, পৃ-২৩৫)
পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দোয়া ও কোরআনের কিছু আয়াতের ওপর আমল করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। এই শিক্ষা মুমিনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম বায়হাকি (রহ.) বলেন, পবিত্র কোরআনে যেমন আত্মার যাবতীয় রোগ এবং মন্দ প্রবণতার চিকিৎসা রয়েছে, তেমনি দেহের যাবতীয় রোগ-ব্যাধিরও চিকিৎসা রয়েছে। তাফসিরে কুরতুবিতে রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের মাধ্যমে আরোগ্য তালাশ করে না, তার কোনো শেফা নেই।’ (তাফসিরে কুরতুবি, খণ্ড-১০ম, পৃ-২৩৫)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইসলামে বদনজর সত্য, পরিত্রাণের উপায়
এখানে পবিত্র কোরআনের এমন ছয়টি আয়াত তুলে ধরা হলো যার ওপর একনিষ্ঠভাবে আমল করলে যেকোনো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ ‘ওয়া ইয়াশফি ছুদু-রা ক্বাওমিম মু’মিনি-ন।’ অর্থ: ‘এবং আল্লাহ মুমিনদের (মুসলমানদের) অন্তরসমূহ শান্ত করে দেন।’ (সুরা তাওবা: ১৪)
২. وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ ‘ওয়া শিফাউ’ল লিমা- ফিচ্ছুদু-রি ওয়া হুদাও ওয়া রাহমাতুল লিল মু’মিনি-ন।’ অর্থ: ‘এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।’ (সুরা ইউনুস: ৫৭)
বিজ্ঞাপন
৩. يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ ‘ইয়াখরুঝু মিমবুতু-নিহা- শারা-বুম মুখতালিফুন, আলওয়ানুহু- ফি-হি শিফা-উ লিন্না-সি।’ অর্থ: ‘তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার।’ (সুরা নাহল: ৬৯)
আরও পড়ুন: কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেজা কীভাবে?
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ ‘ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল ক্বুরআ’নি মা হুয়া শিফাউও ওয়া রাহমাতিুল লিলমু’মিনি-ন।’ অর্থ: আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮২)
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ ‘ওয়া ইজা মারিদতু ফা হুয়া ইয়াশফি-ন।’ অর্থ: ‘এবং যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা আশ শুআরা: ৮০)
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ‘কুল হুওয়া লিল্লাযীনা আ-মানূ হুদাওঁ ওয়া শিফাউন।’ অর্থ: ‘বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়াত ও রোগের প্রতিকার।’ (সুরা হা-মিম সাজদা: ৪৪)
উল্লেখিত প্রত্যেকটি আয়াতেই দেখবেন, মুমিনদের জন্য ‘শেফা’, ‘রহমত’ আরোগ্য প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ রয়েছে। বুজুর্গ, সৎ-নিষ্ঠাবান আলেমরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলে থাকেন, পানিভর্তি পাত্র হাতে নিয়ে মুখের সামনে রেখে আয়াতগুলো পড়ে দম করে পানি পান করলে আল্লাহ তাআলা সহজেই রোগ থেকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অসুস্থতার সময় উল্লেখিত আমল করার তাওফিক দান করুন এবং এর বিনিময়ে রোগ দূর করে দিন। আমিন।