images

ইসলাম

ঈসা (আ.) এখন কোথায় কীভাবে আছেন?

ধর্ম ডেস্ক

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১১ পিএম

images

হজরত ঈসা (আ.) একজন সম্মানিত নবী ও রাসুল। তাঁর প্রতি আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাবের নাম ইঞ্জিল। ঈসা (আ.)-এর জন্ম পৃথিবীবাসীর জন্য এক নিদর্শন। অলৌকিকভাবে কোনো পুরুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বিয়ের আগে গর্ভবতী হওয়া নিয়ে মা মরিয়ম (আ.)-এর বিরুদ্ধে মানুষের অপবাদের জবাবে নবজাতক ঈসা (আ.) আল্লাহর কুদরতে কথা বলা শুরু করেছিলেন।  

তিনি বলেন- ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে। আর আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি দাম্ভিক, হতভাগ্য। আমার প্রতি শান্তি, যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব। এই হচ্ছে মরিয়ম পুত্র ঈসা। এটাই সঠিক বক্তব্য, যে বিষয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করছে। (সুরা মরিয়ম: ১৬-৩৪, তাফসিরে ইবনে কাসির: ১৪-খণ্ড, ১৪৬)

নবী ঈসা (আ.) আসমানি কিতাব নিয়ে এলেও তিনি পূর্বের আসমানি কিতাব তাওরাতের সত্যায়ন করেছেন। কিন্তু ইহুদিরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাঁকে শূলে চড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। যদিও তারা সফল হয়নি। এর আগেই আল্লাহ তাআলা তাকে তুলে নিয়েছেন।

এখন কোথায় আছেন তিনি? এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা: ১৫৮)

আরও পড়ুন: দামেস্কের যে মসজিদে ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন

এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তাআলা নিজের অলৌকিক শক্তি দ্বারা ঈসা (আ.)-কে জীবিত অবস্থায় সশরীরে আসমানে তুলে নিয়েছেন। ঠিক কোন জায়গায় কীভাবে আছেন, কী করছেন—এসব স্পষ্ট বর্ণনা না থাকলেও তিনি জীবিত আছেন এবং মহান আল্লাহর নিরাপত্তায় আছেন, এতে সন্দেহ নেই। অনেক আলেমের মতে, আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা (আ.)-কে জীবিত অবস্থায় দ্বিতীয় আসমানেই বিশেষ নিরাপত্তায় রেখেছেন।

আসলে ঈসা (আ.) জন্ম-মৃত্যু সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিরাপত্তালাভকারী নবী। তাই তাঁর ক্ষতি করা অসম্ভব ছিল। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় নবী ঈসা (আ.) বলেছেন, ‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হবো।’ (সুরা মারিয়ম: ৩৩)

আলোচ্য আয়াতে তাঁর বিশেষ নিরাপত্তাপ্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে, যে নিরাপত্তা তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করেছেন। তিন স্থানে মানুষের সর্বাধিক নিরাপত্তা প্রয়োজন। এক. জন্মের সময়। দুই. মৃত্যুর সময়। তিন. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের পর। মহান আল্লাহ ঈসা (আ.)-কে এই তিন স্থানেই নিরাপত্তা দান করেছেন। কেয়ামতের দিনও বিশেষ নিরাপত্তা লাভ করবেন।

মূলত ঈসা (আ.)-কে হত্যা করা হয়েছে বলে ইহুদি-নাসারারা যে দাবী করে, তা অমূলক। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে ইরশাদ করেন- ‘অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। (সুরা নিসা: ১৫৭)

আরও পড়ুন: যে স্থানে যেভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঈসা (আ.)

আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যখন ঈসা (আ.) ইহুদিদের হত্যা করার চক্রান্তের কথা জানতে পারলেন, তখন তাঁর ভক্ত ও সহচরবৃন্দকে এক স্থানে সমবেত করলেন, যাদের সংখ্যা ১২ অথবা ১৭ ছিল। এবং তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার স্থানে নিহত হুতে প্রস্তুত আছ? যাকে আল্লাহ তাআলা আমার মতো আকার-আকৃতি দান করবেন। তাঁদের মধ্যে একজন যুবক প্রস্তুত হয়ে গেলেন। এরপর ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর ইচ্ছায় আসমানে উঠানো হল। এরপর ইহুদিরা এসে ওই যুবককে নিয়ে গেল এবং ক্রুসবিদ্ধ করল, যাঁকে মহান আল্লাহ ঈসা (আ.)-এর মতো আকৃতি দিয়েছিলেন। আর ইহুদিদের ধারণা হলো যে, তারা ঈসাকেই ক্রুসবিদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ তিনি ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না; বরং তাঁকে জীবিত অবস্থায় সশরীরে নিরাপদে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল কাদির, ইবনে কাসির)

অন্যান্য বর্ণনায় দেখা যায়, ঈসা (আ.)-এর মতো আকৃতিবিশিষ্ট লোকটিকে হত্যা করার পর ইহুদিদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়; একদল বলে, ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্য একদল বলে, ক্রুসবিদ্ধ ব্যক্তি ঈসা নয়; বরং অন্য কোনো ব্যক্তি। আবার অন্য একদল বলে, তারা ঈসা (আ.)-কে আসমানে চড়তে স্বচক্ষে দেখেছে। মুফাসসিরা বলেন, মূলত তারা চরম বিভ্রান্তির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে শুধু অনুমান করে বিভিন্ন উক্তি ও দাবি করছিল। কোরআনের বর্ণনানুযায়ী তারা ঈসা (আ.)-কে নিয়ে মতবিরোধ, সংশয় ও সন্দেহের শিকার।

অসংখ্য হাদিসের আলোকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে কেয়ামতের আগে ঈসা (আ.) আবার পৃথিবীতে আসবেন। কোরআনেও এর ইঙ্গিত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আহলে কিতাবের যত শ্রেণি রয়েছে, তারা সবাই (কেয়ামতের আগে) তার মৃত্যুর আগে তার (ঈসা আ.) ওপর ঈমান আনবে এবং কেয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা নিসা: ১৫৯)

এ আয়াতের দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথম ব্যাখ্যা হলো, প্রত্যেক ইহুদিই তার অন্তিমমুহূর্তে যখন পরকালের দৃশ্যাবলী অবলোকন করবে তখন ঈসা (আ.)-এর নবুয়তের সত্যতা উপলব্ধি করবে। কিন্তু তখনকার ঈমান তাদের আদৌ কোনো উপকারে আসবে না। এর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, কেয়ামতের নিকটবর্তী যুগে ঈসা (আ.) আবার পৃথিবীতে আগমন করবেন। তখন ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনেকে মুসলমানদের মতো বিশুদ্ধ বিশ্বাস নিয়ে ঈমানদার হবে। আর যারা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে, তাদের নিশ্চিহ্ন করা হবে। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন)