ধর্ম ডেস্ক
১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪০ পিএম
ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু মুনাফিক। তাদের শাস্তি কঠিন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘‘হে নবি! আপনি কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম এবং তা কতই না নিকৃষ্ট ঠিকানা।’ (সুরা তাওবা: ৭৩)
আরও ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।’ (সুরা তাওবা: ৬৮)
সাহাবিরা এবং তাঁদের পর সালফে সালেহিনরা নিফাককে কঠিন ভয় করতেন। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি যখন সালাতে তাশাহহুদ পড়ে শেষ করতেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট নিফাক হতে পরিত্রাণ কামনা করতেন এবং তিনি বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তাঁর অবস্থা দেখে একজন সাহাবি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি ব্যাপার হে আবু দারদা! তুমি নিফাককে এত ভয় কর কেন? তখন সে বলল, আমাকে আপন অবস্থায় থাকতে দাও। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, একজন লোক মুহূর্তের মধ্যেই তার দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। ফলে সে দ্বীন হতে বের হয়ে যায়।’ (সিয়ারে আ-লামুন নুবালা: ৬/৩৮২, আল্লামা জাহাবি বলেন, হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ)
আরও পড়ুন: জবাবদিহিতাকে যেভাবে ভয় করতেন সালাফরা
হানজালা (রা.) নিজের মধ্যে নিফাক বাসা বেঁধেছে কি না সেই ভয়ে অস্থির থাকতেন। একদিন আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, হানজালা মুনাফিক হয়ে গেছে। আবু বকর (রা.) ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুল (স.)-এর দরবারে থাকি রাসুল (স.) আমাদের জান্নাত ও জাহান্নামের কথা আলোচনা করে তখন আমরা যেন জান্নাত ও জাহান্নামকে দেখতে পাই। আর যখন আমরা রাসুল (স.)-এর দরবার থেকে বের হয়ে আসি এবং স্ত্রী, সন্তান ও দুনিয়াবি কাজে লিপ্ত হই, তখন আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই।
তখন আবু বকর (রা.) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদের অবস্থাও তোমার মতোই। তারপর তাঁরা দুজনই রাসুল (স.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি খুলে বললেন। তখন রাসুল (স.) তাঁদের বললেন, আমি ওই সত্ত্বার শপথ করে বলছি, যাঁর হাতে আমার জীবন, যদি আমার নিকট থাকা অবস্থায় তোমাদের যে অবস্থা হয়, সে অবস্থা যদি তোমাদের সবসময় থাকতো, তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের সাথে তোমাদের বিছানায় ও চলার পথে সরাসরি মুসাফা করত। তবে হে হানাজালা! কিছু সময় এ অবস্থা হবে, আবার কিছু সময় অন্য অবস্থা হবে। (অর্থাৎ এ নিয়ে তোমাদের ঘাবড়ানোর কিছু নাই। এতে একজন মানুষ মুনাফিক হয়ে যায় না।) (সহিহ মুসলিম: ২৭৫০)
খলিফাতুল মুসলিমিন ওমর (রা.) যাকে দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ দেওয়া হয়েছে, তিনিও নিফাককে ভয় করতেন। হুজাইফা (রা.) বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘একবার ওমর (রা.)-কে একটি জানাজায় হাজির হতে দাওয়াত দেওয়া হলে, তিনি তাতে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অথবা বের হওয়ার ইচ্ছা করেন। আমি তাঁর পিছু নিয়ে তাকে বললাম! হে আমিরুল মুমিনিন আপনি বসুন! কারণ, আপনি যে লোকের জানাজায় যেতে চান সে ওই সব মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি! তুমি বল তো আমি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, না। তোমার পর আমি আর কাউকে এভাবে দায়মুক্ত ঘোষণা করব না।’ (ইবন আবি শাইবা এটি বর্ণনা করেছেন, আল-মুসান্নাফ: ৮/৬৩৭)
আরও পড়ুন: সালফে সালেহিন কারা, এত মর্যাদা কেন তাঁদের?
চিন্তা করুন, নিজের মধ্যে কপটতার ভয়ে কী রকম অস্থির থাকতেন সাহাবিরা। ইবনে আবি মুলাইকা (রহ) বলেন, আমি রাসুল (স.)-এর ৩০ জন সাহাবিকে স্বচক্ষে দেখতে পেয়েছি, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নফসের ওপর নিফাকের আশংকা করেন। তাদের কেউ এ কথা বলেনি: তাঁর ঈমান জিবরাইল বা মিকাইলের ঈমানের মতো মজবুত। (সহিহ বুখারি: ১/২৬)
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহ) বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, কাওমের লোকদের অন্তর ঈমান ও নিফাকের কঠিন ভয়ে ভরে গেছে। তাদের ছাড়া অনেক এমন আছে যাদের ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করেনি। অথচ তারা দাবি করে তাদের ঈমান জিবরাইল ও মিকাইলের ঈমানের মতো। (মাদারেজুস সালেকিন: ১/৩৫৮)
তাদের উল্লিখিত উক্তির অর্থ এ নয় যে, তারা ঈমানের পরিপন্থী আসল নিফাক বা বড় নিফাককে ভয় করছে। বরং তারা ভয় করছে ঈমানের সাথে যে নিফাক একত্র হতে পারে তাকে। অর্থাৎ ছোট নিফাক। সুতরাং এ নেফাকের কারণে সে মুনাফিক মুসলিম হবে মুনাফিক কাফির হবে না। (এহইয়াউ ‘উলুমুদ্দিন: ৪/১৭২)
অতএব, মনের অজান্তে আমরা নিফাকি লালন করছি কি না সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, নিফাক মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংস করে দেয়। উপরন্তু সমাজে সে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের নিফাক থেকে হেফাজত করুন। আমিন।