images

ইসলাম

আছরের নামাজ আদায়কারীর পুরস্কার

ধর্ম ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১১ পিএম

মুমিনদের ওপর দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। কোনো ওয়াক্তই না পড়া বা কাজা করার সুযোগ নেই। তবে আছরের নামাজের আলাদা গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা সব নামাজ এবং মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি যত্নবান হও।’ (সুরা বাকারা: ২৩৮)

এখানে মধ্যবর্তী নামাজ বলতে আছরের নামাজকেই বোঝানো হয়েছে। কারণ এই নামাজের আগেও দুই ওয়াক্ত নামাজ রয়েছে, পরেও দুই ওয়াক্ত নামাজ রয়েছে। মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, আছর নামাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো- সাধারণত এ সময় মানুষ কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে। ফলে নামাজ আদায়ে গাফিলতি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এই সময়টা আল্লাহ তাআলার কাছে দামী। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে কিছু জিনিসের কসম করেছেন, সেখানে আছরের কসমও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আছরের কসম’ (সুরা আছর: ১)

উল্লিখিত দুটি আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার কাছে আছরের নামাজ কত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া আরেক আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘আপনার রবের প্রশংসা করুন সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগে।’ (সুরা ত্ব-হা: ১৩০) এই আয়াতে সূর্যোদয়ের আগে মানে ফজর এবং সূর্যাস্তের আগে মানে আছর, এই দুই নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: জীবনে অনেক নামাজ কাজা হয়েছে, করণীয় কী

এছাড়া হাদিসে এই নামাজের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ফেরেশতারা পালাবদল করে তোমাদের মধ্যে আগমন করেন। একদল দিনে, একদল রাতে। আছর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্র হয়। তারপর তোমাদের মধ্যে রাত যাপনকারী দলটি যখন উঠে যায়, তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় দেখে এলে? অবশ্য তিনি নিজেই বান্দাদের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত। জবাবে ফেরেশতারা বলেন, আমরা তাদের নামাজরত দেখে এসেছি। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাজরত ছিল। (সহিহ মুসলিম: ৬৩২)

সুতরাং যে ব্যক্তি নিয়মিত ফজর ও আছরের নামাজ জামাতে আদায় করেন, ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার কাছে তার ব্যাপারে প্রতিদিন বলছেন- আমরা যখন পৃথিবীতে গিয়েছি, তাকে নামাজরত দেখেছি। যখন পৃথিবী থেকে এসেছি, তখনও তাকে নামাজরত দেখেছি।

আরেক হাদিসে এসেছে, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমরা একবার নবীজির কাছে বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, অচিরেই তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেভাবে চাঁদ দেখতে পাচ্ছো। আল্লাহকে দেখতে কোনো ধরনের ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। যদি এ নিয়ামত লাভ করতে চাও, তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগের (ফজর ও আছর) নামাজের প্রতি যত্নবান হও। (সহিহ বুখারি: ৪৮৫১)

আরও পড়ুন: ইশরাক ও চাশতের নামাজ কখন পড়তে হয়, ফজিলত কী?

পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও এই নামাজ ফরজ ছিল। আবু বাসরা গিফারি (রা.) বলেন, (একবার) রাসুলুল্লাহ (স.) ‘মুখাম্মাস’ নামক স্থানে আমাদের নিয়ে আছরের নামাজ আদায় করলেন। (এবং) বলেন, এই নামাজ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের কাছে পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর মর্যাদা রক্ষা করেনি। যে ব্যক্তি ওই নামাজ যথাযথ আদায় করবে, সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। তার (আছর) পর শাহিদ উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো সালাত নেই। শাহিদ (অর্থ) তারকারাজি। (নাসায়ি: ৫২১)

অবশ্য আছরের নামাজের ব্যাপারে শুধু ফজিলতই নয়, হাদিসে ধমকিও এসেছে। নবীজি (স.)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আছরের নামাজ ছেড়ে দিল, তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৩) আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তির আছরের নামাজ ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। (বুখারি: ৫৫২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের আছরের নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।