images

ইসলাম

অজু কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী

ধর্ম ডেস্ক

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম

অজু পবিত্রতা অর্জন ও নামাজ আদায়ের মাধ্যম। হাদিসে অজুকে নামাজের চাবি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অজুর আভিধানিক অর্থ- সৌন্দর্য, পরিষ্কার ও স্বচ্ছতা। শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে বিশেষ নিয়মে পানি ব্যবহার করাকে অজু বলে। অজুর বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমাদের মুখ ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং মাথা মাসেহ করবে আর পা টাখনু (গ্রন্থি) পর্যন্ত ধৌত করবে...।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

অজু তিন প্রকার। যথা—ফরজ, ওয়াজিব ও মোস্তাহাব।

ফরজ অজু
ফরজ অজু ওই অজুকে বলা হয় যে কারণে অজু করা ফরজ। ইসলামি শরিয়তে চার কারণে অজু করা ফরজ। 
১. নামাজ আদায়ের জন্য, যদি নফল নামাজও হয়। (বুখারি: ১৩২) 
২. জানাজার জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ৪৩৫) 
৩. সেজদায়ে তেলাওয়াতের জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ৪৩৫) 
৪. পবিত্র কোরআন স্পর্শ করার জন্য। অনুরূপভাবে অজু ছাড়া ব্যক্তি যদি পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা দেয়াল, কাগজ, টাকা—যেটাই ছুঁতে চাইবে, তার জন্য অজু করা ফরজ। (সুরা ওয়াকিয়া: ৭৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১১৩) 

আরও পড়ুন: কোরআন স্পর্শে পবিত্রতা জরুরি কেন?

ওয়াজিব অজু
শুধু একটি বিষয়ের জন্য অজু করা ওয়াজিব। তা হলো- কাবা ঘরের তাওয়াফ করা। (তিরমিজি: ৮৮৩)

মোস্তাহাব অজু
♦ পবিত্রতার সঙ্গে ঘুমানোর জন্য। (বুখারি: ২৩৯) 
♦ ঘুম থেকে জাগ্রত হলে। তখন শুধু মোস্তাহাবই নয়, বরং সুন্নত (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ৫৮৫) 
♦ সবসময় অজু অবস্থায় থাকার জন্য। (ইবনে মাজাহ: ২৭৩) 
♦ সাওয়াবের নিয়তে অজু থাকা অবস্থায় অজু করা। 
♦ গিবত ও মিথ্যা কথার আশ্রয় নেওয়ার পর। (মুসলিম: ৩৬০) 
♦ মন্দ ও অশ্লীল কবিতা পাঠের পর। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৩৫) 
♦ নামাজ ছাড়া অন্য অবস্থায় অট্টহাসি দেওয়ার পর। (মুসনাদে আহমদ: ৯৩০১) তবে নামাজে অট্টহাসি দিলে অজু ভেঙে যায়। (দারাকুতনি: ৬১৫) 
♦ মৃতকে গোসল দেওয়ার পর। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ১৫১৬) 
♦ মৃতের লাশ ওঠানোর জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ১৫০৩) 
♦ প্রতি নামাজের জন্য নতুন অজু করা। (মুসনাদে আহমদ: ৭৫০৪, বুখারি: ২০৭) 
♦ ফরজ গোসল করার আগে। (বুখারি: ২৪০) 
♦ গোসল ফরজ হয়েছে, এমন ব্যক্তির খাওয়া, পান করা ও ঘুমানোর আগে। (মুসলিম: ৪৬১) 
♦ রাগের সময়। (আবু দাউদ: ৪১৫২) 
♦ কোরআন তিলাওয়াতের সময়। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ৪৩৫) 
♦ হাদিস পড়া ও বর্ণনা করার সময়। (আদাবুল উলামা ওয়াল মুতাআল্লিমিনি: ১/৬) 
♦ ইসলামী জ্ঞান অর্জনের সময়। (তিরমিজি: ২৭২৩) 
♦ আজান দেওয়ার সময়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/২১১) 
♦ ইকামত দেওয়ার সময়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/২১১) 
♦ খুতবা দেওয়ার সময়। (তিরমিজি: ২৭২৩) 
♦ মহানবী (সা.)-এর কবর জিয়ারতের সময়। (সুরা নিসা: ৬৪) 
♦ অকুফে আরাফা তথা আরাফায় থাকা অবস্থায়। (বুখারি: ১৪২৪) 
♦ সাফা ও মারওয়ায় সায়ি করার সময়। (বুখারি: ১৫১০)

আরও পড়ুন: যেসব কারণে অজু ভেঙে যায় যেসব কারণে ভাঙে না

অজুর আদব
অজুতে এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো আদায় করলে সওয়াব হবে, কিন্তু আদায় না করলে কোনো গুনাহ হবে না। বিষয়গুলোকে অজুর আদব বা মোস্তাহাবও বলা যায়। সেগুলো হলো—
♦ অজু করার সময় উঁচু স্থানে বসা, যাতে পানির ছিটা গায়ে না আসে। (আল ফিকহুল ইসলামি: ১/৩৫২) 
♦ কিবলার দিকে বসে অজু করা। (আল ফিকহুল ইসলামি: ১/৩৫২) 
♦ অজু করার সময় অন্যের সাহায্য না নেওয়া। (মুসনাদে আবি ইয়ালা: ১/২০০) 
♦ প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা (আল ফিকহুল ইসলামি: ১/৩৫২) 
♦ অজু করার সময় রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত দোয়া পড়া। (সুনানে কুবরা লিননাসায়ি: ৯৯০৮) 
♦ নিয়ত মুখে ও অন্তরে একসঙ্গে করা। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৮৭) 
♦ উভয় কান মাসেহের সময় কানের ছিদ্রে ভেজা আঙুল প্রবেশ করানো। (আবু দাউদ: ১১২) 
♦ প্রশস্ত আংটি নাড়াচাড়া করা। (ইবনে মাজাহ: ৪৪৩) 
♦ যদি আংটি প্রশস্ত না হয়, তাহলে অজু বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য তা নাড়াচাড়া করা আবশ্যক। (ইবনে মাজাহ: ৪৪৩, আবু দাউদ: ১৪৯) 
♦ নাকের ময়লা দূর করার জন্য বাঁ হাত ব্যবহার করা। (আবু দাউদ: ৩১) 
♦ যদি মুসল্লি এমন অপারগ না হয়, যার ফলে প্রতি ওয়াক্তে অজু করা আবশ্যক, তাহলে ওয়াক্ত আসার আগে অজু করা। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১০২) 
♦ অজু শেষ হওয়ার পর কেবলামুখী হয়ে এই দোয়া পাঠ করা—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহাদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাউওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বহহিরিন।’অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী বানিয়ে দিন। (তিরমিজি: ৫০)

আরও পড়ুন: অজু করে ঘুমানোর বিস্ময়কর ফজিলত

অজুতে যেসব কাজ করা মাকরুহ
♦ পানির অপব্যয় করা। (ইবনে মাজাহ: ৪১৯, আবু দাউদ: ৮৮) 
♦ পানি ব্যবহারে অত্যধিক কার্পণ্য করা। (আবু দাউদ: ১১৬, মুসলিম: ৩৫৪) 
♦ মুখের ওপর জোরে পানি মারা। (কানজুল উম্মাল: ৯/৪৭৩) 
♦ দুনিয়াবি কথা বলা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি: ১/৯৮) 
♦ অন্যের সাহায্য নেওয়া। (মুসনাদে আবি ইয়ালা: ১/২০০) তবে অপারগ অবস্থায় অন্যের সাহায্য নেওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। (আল মুজামুল কাবির: ৩৮৫৭) 
♦ তিনবার মাথা মাসেহ করা এবং প্রতিবার পানিতে হাত ভেজানো। (আবু দাউদ: ১১৬, কানজুল উম্মাল: ২৭০২৪)

অজুর চার ফরজ
অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য চারটি কাজ অপরিহার্য। সেগুলো হলো— 
১. পূর্ণ মুখমণ্ডল বা চেহারা একবার ধৌত করা। (সুরা মায়েদা: ৬) মুখমণ্ডলের সীমানা হলো, দৈর্ঘ্যে চুলের উৎপাদনস্থল থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত, প্রস্থে এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত। (আল কামুসুল ফিকহি: ১/৩৭৩)
২. উভয় হাত কনুইসহ একবার ধৌত করা। (সুরা মায়েদা: ৬, বুখারি: ১৮০)
৩. মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা। (মুসলিম: ৪১২)
৪. উভয় পা টাখনুসহ একবার ধৌত করা। (সুরা মায়েদা: ৬, বুখারি: ১৮০)

আরও পড়ুন: যেভাবে অজু করলে নবজাতকের মতো নিষ্পাপ

অজুর ১৮ সুন্নত
অজুতে নিম্নল্লিখিত কাজগুলো সুন্নত। 
১. অজুর শুরুতে নিয়ত করা। (বুখারি: ০১) 
২. বিসমিল্লাহ পড়া। (আবু দাউদ: ৯২) 
৩. উভয় হাতকে কবজি পর্যন্ত ধৌত করা। (মুসলিম: ৩৩১, মুসনাদে আহমদ: ১৬২২৫)
৪. মেসওয়াক করা। (সুনানে কুবরা: ১৮১, আবু দাউদ: ৪২) 
৫. কুলি করা। (মুসলিম: ৩৩১)
৬. নাকে পানি দেওয়া। (মুসলিম: ৩৩১) 
৭. যদি রোজাদার না হয়, তাহলে ভালোভাবে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া। (তিরমিজি: ৭১৮, আবু দাউদ: ১২৩)
৮. প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া। (মুসলিম: ৩৩১) 
৯. দাড়ি খিলাল করা। (আবু দাউদ: ১২৩) 
১০. আঙুল খিলাল করা। (তিরমিজি: ৭১৮)
১১. পুরো মাথা মাসেহ করা। (আবু দাউদ: ৯৭) 
১২. উভয় কানের ভেতরে ও বাইরে মাসেহ করা। (আবু দাউদ: ১১৬) 
১৩. মাথার সামনের অংশ থেকে মাসেহ শুরু করা। (মুসলিম: ৩৪৬) 
১৪. গর্দান মাসেহ করা। (কানজুল উম্মাল: ২৬১৪২; শরহে ইহয়া লিজজুবাইদি: ২/৩৬৫, আততালখিসুল হাবির: ১/২৮৮)
১৫. ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোকে মেজে-ঘষে ধোয়া। (আবু দাউদ: ১২৭) 
১৬. প্রথম অঙ্গ শুকানোর আগেই পরের অঙ্গ ধৌত করা। (বুখারি: ১৩৭, দারাকুতনি: ৩৯২, আততালখিসুল হাবির: ১/২৯০) 
১৭. অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় তারতিব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমণ্ডল, তারপর হাত ধোয়া, এরপর মাথা মাসেহ করা এবং পা ধোয়া। (সুরা মায়েদা: ০৬)
১৮. বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান হাত ধৌত করা এবং বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান পা ধোয়া। (নাসায়ি: ১১১)