নামাজ পড়ার পূর্বশর্ত হলো অজু। অজু ছাড়া নামাজ হয় না। সুন্দরভাবে অজু করার গুরুত্ব, সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি। অজু ভাঙার কারণ কয়টি ও কী কী তা জেনে রাখা জরুরি। এছাড়াও কিছু কারণে বাহ্যিকভাবে মনে হয় অজু ভেঙে গেছে, বাস্তবে ভাঙে না। এখানে অজু ভাঙার কারণ ও যেসব কারণে অজু ভাঙে না, তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
মৌলিকভাবে অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি। সেগুলো হলো—
১) পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)
২) শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)
৩) মুখ ভরে বমি করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১২২১)
৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৩৩০)
৫) চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ: ২০২)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: অজু করে ঘুমানোর যত উপকার
৬) পাগল, মাতাল ও বেহুঁশ হলে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৪৯৩; বুখারি: ৬৪৬; তিরমিজি: ৭২)
৭) নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসি দিলে। (সুনানে দারা কুতনি: ৬১২)
যেসব কারণে অজু ভাঙে না
১) যদি বমি হয়, কিন্তু তা মুখ ভরে না হয়। (আল আসার লি আবি ইউসুফ: ৩৪)
২) নিজের লজ্জা স্থান স্পর্শ করলে। (নাসায়ি: ১৬৫)
৩) নারীর শরীর স্পর্শ করলে। (নাসায়ি: ১৭০)
বিজ্ঞাপন
৪) ঘুমের ঘোরে নাক ডাকলে। (মুআত্তা মালেক: ৩৬)
৫) শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত বের হলে অজু ভাঙে না, যদি গড়িয়ে না পড়ে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৩৭)
৬) কোনো ক্ষত স্থান অথবা কান থেকে পোকা বের হলে। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক: ১/৬২৯)
৭) কফমিশ্রিত বমি হলে। কারণ কফ বের হওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় ‘হাদাস’ বলা হয় না। ‘হাদাস’ হলেই অজু ওয়াজিব হয়, অন্যথায় নয়। (মুসনাদে আহমদ: ৯৩০১)
৮) নিতম্বদ্বয় জমিতে ঠেসে লেগে থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লে। (আবু দাউদ: ১৭২)
৯) যদি শরীরের গোশত ঝরে পড়ে; কিন্তু রক্ত বের না হয়। যেমন—ইরকে মাদানি। এটা এক ধরনের ফোসকা বিশেষ, যা চামড়ার উপরিভাগে ওঠে এবং একসময় তা গোশতসহ শরীর থেকে ঝরে পড়ে; কিন্তু রক্ত বের হয় না। মূল কথা হলো গোশত পাক। তাই গোশত ঝরে পড়লে অজু ভাঙে না। যদি এর সঙ্গে রক্তও প্রবাহিত হয়, তাহলে প্রবাহিত রক্তের কারণে অজু ভেঙে যাবে। (দারাকুতনি: ৫৮১, ৫৯১, শরহে বেকায়া: ১/৩৭)
১০) নামাজরত ব্যক্তির ঘুমের দরুন অজু ভাঙে না। চাই তা দাঁড়ানো অবস্থায় হোক অথবা বসা, রুকু বা সেজদা অবস্থায় হোক। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ৬০৯)
উল্লেখিত কারণে অজু ভেঙে যায় মনে হলেও এগুলো অজু ভাঙার কারণ নয়। আবার শুরুতে উল্লেখিত ৭ কারণের একটি কারণ পাওয়া গেলেও অজু ভেঙে যাবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের সকল নির্দেশনা ও মাসয়ালা জানার, বুঝার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

