images

ইসলাম

সাহাবিরা কি সত্যের মাপকাঠি?

ধর্ম ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম আকিদা হলো- সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। এ ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- فَاِنۡ اٰمَنُوۡا بِمِثۡلِ مَاۤ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖ فَقَدِ اهۡتَدَوۡا ۚ وَ اِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا هُمۡ فِیۡ شِقَاقٍ ۚ فَسَیَکۡفِیۡکَهُمُ اللّٰهُ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ‘অতএব তারা যদি ঈমান আনে তোমাদের (সাহাবিদের) ঈমান আনার মতো, তাহলে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: ১৩৭)

এই আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে হেদায়াত প্রাপ্তির মাপকাঠি ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন যে, মহান প্রভুর দরবারে ওই ঈমানই গ্রহণযোগ্য যা রাসুল (স.) এবং সাহাবায়ে কেরাম এনেছিলেন। অতএব, যে ব্যক্তির ঈমান তাঁদের ঈমানের চেয়ে এদিক ওদিক হবে, তার ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়।’ (মারেফুল কোরআন উর্দু: ১:২৯৬)

আরও পড়ুন: সালফে সালেহিন কারা, এত মর্যাদা কেন তাঁদের?

সত্যের মাপকাঠি বলতে বুঝানো হয়- দ্বীন ও ঈমানের ক্ষেত্রে সত্যের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। যা দ্বীনে হক বুঝার মানদণ্ড। আর সেই মানদন্ড হলেন আল্লাহর রাসুল ও সাহাবায়ে কেরাম। যা উল্লেখিত আয়াতেই সুস্পষ্ট। সুতরাং আল্লাহর রাসুল ও সাহাবিরা যেভাবে দ্বীনকে বুঝেছেন, যেভাবে পালন করেছেন, কেয়ামত পর্যন্ত সেভাবেই মুসলিম উম্মাহকে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে সত্যপথে টিকে থাকতে হবে।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-  وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمۡ اٰمِنُوۡا کَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوۡۤا اَنُؤۡمِنُ کَمَاۤ اٰمَنَ السُّفَهَآءُ ؕ اَلَاۤ اِنَّهُمۡ هُمُ السُّفَهَآءُ وَ لٰکِنۡ لَّا یَعۡلَمُوۡنَ ‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা (সাহাবিরা) যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মতো! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না।’ (সুরা বাকারা: ১৩)

মুফাসসিরে কেরাম বলেন যে, এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, কোনো ব্যক্তির ঈমানের দাবী সঠিক কি-না, তা যাচাই করার মাপকাঠি হচ্ছে সাহাবায়ে কেরামের ঈমান। সুতরাং যার ঈমান কোনো বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের ঈমানের সঙ্গে মিলবেনা, তার ঈমান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (স.) দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। (মারেফুল কোরআন উর্দু ১:৭৩)

আরও পড়ুন: মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে আমাদের আকিদা কী হবে?

হাদিস শরিফে এসেছে, নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরকায় বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। সেগুলোর মধ্য হতে একটি ফিরকা ছাড়া অবশিষ্ট ৭২টি ফিরকা জাহান্নামি হবে। সাহাবা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন উক্ত নাজাতপ্রাপ্ত ফিরকাভুক্ত কারা হবে? মহানবী (স.) ইরশাদ করলেন- ‘আমি এবং আমার সাহাবগণ যে তরিকার উপর রয়েছি, সেই তরিকার উপর যারা অটল থাকবে তারাই নাজাতপ্রাপ্ত দল।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৬৪১)

বিখ্যাত সাহাবি হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি সঠিক তরিকা অবলম্বন করতে চায় সে যেন ওই সমস্ত সাহাবিগণের তরিকা অবলম্বন করে, যারা ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করেছেন। অর্থাৎ শেষ জীবন পর্যন্ত ইসলাম ত্যাগ করেনি। (মৃত্যুবরণের কথা এজন্য বলা হয়েছে যে, জীবিত মানুষ যেকোনো মুহূর্তে গোমরাহ হয়ে যেতে পারে।) তাঁরা (সাহাবিরা) নবী (স.)-এর সহচর্যে ধন্য হয়েছিলেন। তাঁরা এ উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন। সবচেয়ে নেকদিল ওয়ালা ছিলেন। সবচেয়ে গভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিশেষভাবে নির্বাচন করেছিলেন স্বীয় নবীর সহচার্যলাভে ধন্য হওয়ার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়েমের জন্য। হে দুনিয়ার মানুষ! তোমরা তাদের মর্তবা অনুধাবন করো এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। সাধ্যানুযায়ী তাঁদের আখলাক-চরিত্রকে আঁকড়ে ধর। কারণ তারা সিরাতে মুস্তাকিমের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। (মেশকাত: ১:৩২)

 আরও পড়ুন: মহানবী (স.)-কে যেভাবে অনুসরণ করতেন সাহাবিরা

সাহাবায়ে কেরামের সত্যের মাপকাঠি হওয়ার ব্যাপারে এরকম অনেক প্রমাণ রয়েছে কোরআন-হাদিসে। আসলে সাহাবায়ে কেরাম হলেন আল্লাহর এমন সুপথপ্রাপ্ত বান্দা যাঁদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট আছেন বলে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।’ (সুরা মুজাদালা: ২২)

উল্লেখ্য, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে, সাহাবিরা নির্ভুল ছিলেন না কিংবা মাসুম ছিলেন না, বরং মাগফুর ছিলেন। তাই সাহাবিদের কারো কোনো ভুল বা গুনাহ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ভুলের ব্যাপারে অধিকাংশ সাহাবির ভিন্নমত ছিল এবং তা শরিয়তের বিচারে মীমাংসিত। সেই মীমাংসিত সত্যকে ধারণ করার মাধ্যমে সাহাবিদের অনুসরণ করতে হবে; ভুলকে নয়। মনে রাখতে হবে- আল্লাহ আয়াত নাজিলের মাধ্যমে নবীজিকেও সংশোধন করেছিলেন। সেই সংশোধিত বিষয়কেই সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হয় উম্মতকে।

শেষ কথা হলো- সাহাবিরা সত্যের মাপকাঠি হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত এবং সত্যের আলোকবর্তিকা। এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর রাসুল (স.) ও সাহাবায়ে কেরামের পথ আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। নিত্যনতুন ফেতনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।