সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে আমাদের আকিদা কী হবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০৫:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে আমাদের আকিদা কী হবে?
প্রতীকী ছবি

মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রা.) একজন উঁচু মাপের সাহাবি। তিনি কাতিবে অহি বা অহি লেখক ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) মুয়াবিয়া (রা.)-এর জন্য দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, মুয়াবিয়াকে কিতাব ও হিসাব শিক্ষা দিন। তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।’ (কানজুল উম্মাল: ৩৩৬৫৬)

মুয়াবিয়া (রা.) ১৬৩টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে চারটি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম উভয় গ্রন্থে এসেছে। পৃথকভাবে ইমাম বুখারি (রহ.) চারটি ও ইমাম মুসলিম (রহ.) পাঁচটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। (সিয়ারুল আলামুন নুবালা: ৩/১৬২)


বিজ্ঞাপন


মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে সাহাবিদের বড় একটি অংশ উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁকে ‘ফকিহ’ (ইসলামি আইনজ্ঞ) আখ্যা দেন। (সহিহ বুখারি: ৩৭৬৪; আন নিহায়া আনিত তানি আমিরিল মুমিনিনা মুয়াবিয়া, পৃষ্ঠা-৪১)

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন সহনশীল, বিচক্ষণ, বিনয়ী, আল্লাহভীরু ও কল্যাণকামী। (সহিহ আলবানি: ১৭১৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় মুয়াবিয়ার চেয়ে বেশি উত্তম আখলাকের পরিচয় দিতে কাউকে দেখিনি।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ১১/৪৩৯)

তাই নবীজির উম্মত হিসেবে আমাদের উচিত- মুয়াবিয়া (রা.)-এর সমালোচনা না করা এবং গালাগালি না করা।


বিজ্ঞাপন


আমিরে মুয়াবিয়া (রা)-এর সন্তান ছিল ইয়াজিদ, যার নির্দেশে হজরত হুসাইন (রা.)-কে শহীদ করা হয়েছিল। এজন্য অনেক ভাই মুয়াবিয়া (র.)-কে গালিগালাজ করে থাকেন। প্রিয় ভাই বিনয়ের সাথে প্রশ্ন থাকবে, ছেলে গুনাহ করলে কি বাবার গুনাহ হবে? যদি তাই হয় তাহলে নুহ (আ.) নবী ছিলেন কিন্তু তাঁর ছেলে কেনান তো কাফের ছিল।

রাসুল (স.) সাহাবাদের সম্পর্কে বলেন-আমার সাহাবিরা তারকাতুল্য। তোমরা যারই অনুসরণ করবে হেদায়েত পেয়ে যাবে। (কানুযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল:১০০২, জামেউল আহাদিস: ২৪৩৫৫)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি এবং যেসব মুসলমান আপনার সঙ্গে রয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট।’ (সুরা আনফাল: ৬৪)

আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন ‘তোমরা আমার সাহাবিদের গাল-মন্দ করো না। কেননা তারা এমন শক্তিশালী ঈমান ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী যে, তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ (৩ ছটাক প্রায়) কিংবা অর্ধমুদ যব খরচের সমান সাওয়াবে পৌঁছুতে পারে না।’ (বুখারি: ৩৩৯৭)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘মুয়াবিয়া (রা.) খেলাফতের দাবি করেননি, আলী (রা.) শহীদ হওয়ার আগে তিনি খলিফা হিসেবে নিজের আনুগত্যের শপথও নেননি। তিনি আলী (রা.)-এর তুলনায় খেলাফতের বেশি যোগ্য ছিলেন না। তিনি তা স্বীকার করতেন। কেউ এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি আলী (রা.)-এর যোগ্যতার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও দিতেন।’ (মাজমুউল ফতোয়া: ৩৫/৭২)

৬০ হিজরির রজব মাসে মুয়াবিয়া (রা.) ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তিনি ইয়াজিদকে মুসলিম উম্মাহর রক্তপাত বন্ধের অসিয়ত করেন। (তারিখুত তাবারি: ৬/২৪১ ও ২৪৫)

হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর ব্যাপারে উল্লেখিত বিষয়গুলোর ওপর মুসলিম হিসেবে আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখা উচিত। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর