images

ইসলাম

ইসলামে মাদক যে কারণে নিষিদ্ধ

ধর্ম ডেস্ক

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:০২ পিএম

ইসলামে সবরকম মাদক ও নেশাদ্রব্য হারাম। মাদকদ্রব্য শুধু শক্তি ও অর্থ-বিত্ত ধ্বংস করে না, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানারকম জঘন্য অপরাধেরও জন্ম দেয়। ফলে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সমাজ, সভ্যতা ও যুবশক্তির জন্য হুমকি এই হারাম বস্তুর পরিচয় দিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যই মদ আর যাবতীয় মদ হারাম।’ (সুনানে নাসায়ি: ৫৫৮৬)

মাদকে কোনো কল্যাণ রাখা হয়নি। বরং তা সবরকম অকল্যাণের চাবি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মদ পান করো না। কেননা তা সকল অকল্যাণের চাবিকাঠি।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৩৭১) অন্য হাদিসে নবীজি (স.) বলেন, ‘তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা অশ্লীল কাজের মূল।’ (সুনানে নাসায়ি: ৫৬৬৭)

মাদক গ্রহণকারীরা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সর্বদা মদ পানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৩৭৬)

হাদিসে ৭টি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
শরীরে ট্যাটু আঁকা: ইসলাম যা বলে
ঘুষ খাওয়ার কঠিন পরিণতি

মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট—এমন ১০ শ্রেণির লোকের প্রতি রাসুল (স.) অভিশাপ করেছেন- ১. যে লোক মদের নির্যাস বের করে, ২. প্রস্তুতকারক, ৩. মদপানকারী, ৪. যে পান করায়, ৫. মদের আমদানিকারক, ৬. যার জন্য আমদানি করা হয়, ৭. বিক্রেতা, ৮. ক্রেতা, ৯. সরবরাহকারী, ১০. এর লভ্যাংশ ভোগকারী। (মেশকাতুল মাসাবিহ: ২৭৭)

মদ একসময় নিষিদ্ধ ছিল না। ইসলাম হুট করে তা নিষিদ্ধও করেনি, বরং ধারাবাহিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে। প্রথমে মদের মন্দ দিকগুলো নিয়ে সচেতন করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন! এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)

দ্বিতীয় পর্যায়ে নামাজের সময় মদ পান হারাম করা হয়। আল্লাহ নির্দেশ দেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাকো, তখন নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।’ (সুরা নিসা: ৪৩)

চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে মদ পুরোপুরি হারাম করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরগুলো শয়তানের কাজ ছাড়া কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?’ (সুরা মায়েদা: ৯০-৯১)

১০টি কঠিন গুনাহ হয় শুধু মুখের কারণে
কানাঘুষা যে কারণে ইসলামে নিষিদ্ধ
৮ গুরুতর হারাম কাজে মানুষের অবাধ বিচরণ

হারাম ঘোষণার পর যার হাতে যতটুকু মদ ছিল, তা তারা সেখানেই ফেলে দিয়েছিলেন। কোরআনের ঘোষণা কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে মদের পাত্র ভেঙে ফেলেছিলেন। আনাস (রা.) এক মজলিসে মদ পরিবেশন করছিলেন। আবু তালহা, আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবাই বিন কাব, সুহাইল (রা.) প্রমুখ নেতৃস্থানীয় সাহাবিরা সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকারীর ঘোষণা কানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন, এবার সমস্ত মদ ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাঁড়ি ভেঙে ফেলো। (সহিহ মুসলিম: ৩৬৬২; সহিহ বুখারি: ৬৭১২)

এরপর থেকে মুসলমানদের কাছে মদ ঘৃণিত ও হারাম বস্তু। মদপান করলে ইবাদত কবুল হয় না বলে সতর্কতা রয়েছে হাদিসে। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করবেন না। (সুনানে নাসায়ি: ৫৬৬৪)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’। (বুখারি: ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; মুসলিম: ৫৭; আবু দাউদ: ৪৬৮৯; ইবনে মাজাহ: ৪০০৭)

তবে, কেয়ামতের আগে উম্মতের মধ্যে মাদকসেবনের প্রবণতা আবারও বেড়ে যাবে। কেউ এটিকে তখন অপরাধ মনে করবে না। আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইলম উঠে যাবে, মূর্খতা, ব্যভিচার ও মদ্যপান বেড়ে যাবে। পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। এমনকি ৫০ জন মহিলার পরিচালক হবে একজন পুরুষ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৩৮৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাদকদ্রব্য থেকে হেফাজত করুন। মাদের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন