ধর্ম ডেস্ক
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩৬ পিএম
অমুসলিমদের দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ জিম্মাদারি হলেও মুসলিমদের আকিদা-কর্মের পরিশুদ্ধতার জন্যও তাবলিগ করা যায়। যেমন কোনো খাস আমল ও বিধানের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাবলিগ হতে পারে, শিরক-বিদআত ও নাস্তিকতার ব্যাপারে সতর্কতা তৈরির জন্যও তাবলিগ হতে পারে।
অনেকে তাবলিগ জামাতের সমালোচনা করে বলে থাকেন যে, বর্তমানের তাবলিগ জামাত শুধু মুসলমানদের তালিম দেয়, অমুসলিমদের কাছে তাবলিগ করে না। এটি সঠিক কথা নয়। না জেনে এধরণের কথা বলা থেকে সতর্ক হওয়া উচিত। অন্যথায় মুসলমানের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার গুনাহ নিজের আমলনামায় নিতে হবে।
মূলত তাবলিগওয়ালারা যেমন দ্বীন থেকে ছিটকে পড়া মুসলিমদের খাঁটি মুসলিম হওয়ার দাওয়াত দেন, তেমনি অমুসলিমদের মাঝেও দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করে থাকেন। আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশে অনেক অমুসলিম তাবলিগের নিসবতে মুসলমান হয়েছেন। ভারতের মাওলানা কালিম সিদ্দীকীর হাতে অসংখ্য মানুষ মুসলমান হয়েছেন এবং হচ্ছেন। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কালিম সিদ্দীকীর কাছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বলবীর সিং, যিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নিজের নাম রাখেন মুহাম্মদ আমির। একটি মসজিদ ধ্বংসের বদলে মুহাম্মদ আমির প্রায় ১০০টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: দাওয়াত ও তাবলিগ কেন গুরুত্বপূর্ণ
তাছাড়া অমুসলিমদের কাছে দ্বীন পৌঁছে দেওয়া যেমন তাবলিগ, তেমনি মুসলমানদের কাছে দ্বীনের কথা পৌঁছে দেওয়ার নামও তাবলিগ। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- فَلْيُبْلِغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ ‘ফাল-ইয়ুবাল্লিগিশ শাহিদুল গায়িব’ তথা ‘উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৭৩৯)
হাদিসে দেখুন তাবলিগ শব্দটি এসেছে মুসলমানদের ক্ষেত্রে। নবীজি উপস্থিত মুসলমানদের বলেছেন, অনুপস্থিত যারা, তাদের কাছে তাবলিগ করতে। আর এ কথা তো জানাই যে, বেশকিছু মুসলমান সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সুতরাং এখানে মুসলিম ও অমুসলিম সবার কাছেই তাবলিগ করার কথা পরিষ্কার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে স্থায়ী হলো যেভাবে
এটি ঠিক যে, তাবলিগ জামাত শুধু অমুসলিমদের দাওয়াত দেন না, বরং মুসলিমদের আকিদা-কর্ম সঠিক করার মেহনতও করে থাকেন। নবী কারিম (স.)-এর অনুসরণেই তা করা হয়। নবীজি (স.) প্রথমে এক আল্লাহর দাওয়াত দিতেন, যারা দাওয়াত কবুল করতেন তাদের গড়ে তুলতেন দ্বীনের তালিম-তাজকিয়ার মাধ্যমে। এসবকিছুই দাওয়াত-তাবলিগের মূল কাজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَة ‘মুমিনদের ওপর আল্লাহ বড় অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে এমন একজন রাসুল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের সামনে আল্লাহর কালাম তেলাওয়াত করে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমতের তালিম প্রদান করেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬৪)
আরও পড়ুন: তাবলিগ জামাতের ৬ মূলনীতি
তাবলিগ অর্থ পৌঁছানো। ইসলামের কল্যাণের বিষয়গুলো মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া হলো তাবলিগ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً ‘বাল্লিগূ আন্নী ওয়ালাউ আ-য়াহ’ অর্থ: আমার পক্ষ থেকে একটি মাত্র আয়াত হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌছে দাও। এই দাওয়াত ও তাবলিগ মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা মানুষদের সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায়মূলক কাজ থেকে বাধা প্রদান করবে এবং আল্লাহ ওপর ঈমান আনবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দাওয়াত ও তাবলিগের পথে থাকার তাওফিক দান করুন। সঠিক কথা বলার তাওফিক দান করুন। আমিন।