ধর্ম ডেস্ক
০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
শীতের তীব্রতা এখন শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, শহর অঞ্চলেও বেড়েছে। এ অবস্থায় নিদারুণ কষ্ট সহ্য করছেন ঘরহীন ও উষ্ণ বস্ত্রহীন মানুষগুলো। তাদের কষ্ট উপলব্ধি করা এবং তাদের পাশে থাকার শিক্ষা রয়েছে ইসলামে। কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, সহায়-সম্বলহীন মানুষের কষ্ট লাঘব করতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সামর্থ্যবান মানুষেরও দায়িত্ব রয়েছে। অন্তত পুরনো পোশাক দিয়ে হলেও শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন মহানবী (স.)।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ: ১৬৮২)
আরও পড়ুন: শীতকালে যেসব ইবাদত বিশেষ ফজিলতপূর্ণ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে কাপড় দান করলে যতক্ষণ ওই কাপড়ের টুকরা তার কাছে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৪৮৪)
শীতজনিত প্রাদুর্ভাব যেমন—সর্দি-কাশি, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে সুচিকিৎসা পান না অর্থের অভাবে। তাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত। প্রভাবশালী হাসপাতাল মালিকরা অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসা সহায়তা দিতে পারেন। এর অনেক সওয়াব রয়েছে। রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তাআলা তার আখেরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯)
আরও পড়ুন: কনকনে শীতে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যায়?
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করে থাকেন’। (সহিহ মুসলিম: ২১৪৮) এ প্রসঙ্গে অপর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৪১৯)
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড শীতে মুখ ঢেকে নামাজ পড়া যাবে?
দরিদ্রদের শীতকালীন প্রয়োজন পূরণে যারা সহায়তার ইচ্ছা রাখেন বা নিয়ত করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে হাদিসের আরেকটি নসিহত হলো- দ্রুততার সঙ্গে যথাসময়ে উপহারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। কেননা এতে শীতার্তদের কষ্ট কম হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসুল (স.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (স.)! কোনো দানে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? তিনি বলেন, সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার দান করা, যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। দান করতে এ পর্যন্ত বিলম্ব করবে না, যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি: ১৪১৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।