ধর্ম ডেস্ক
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:০১ পিএম
ইসলামে টিকটিকি মারা জায়েজ। অনেক হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে। ফাকিহা ইবনুল মুহিরার মুক্ত দাসী সাইবা থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করে একটি বর্শা রক্ষিত দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মুমিনিন! আপনারা এটা দিয়ে কী করেন? তিনি বলেন, আমরা এই বর্শা দিয়ে এসব টিকটিকি হত্যা করি। কারণ আল্লাহর নবী (স.) আমাদের অবহিত করেছেন যে, ইবরাহিম (আ.)-কে যখন অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলো তখন পৃথিবীর বুকে এমন কোনো প্রাণী ছিল না, যা আগুন নিভাতে চেষ্টা করেনি, টিকটিকি ব্যতীত। বরং সে আগুনে ফুঁ দিয়েছিল। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) এটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩২৩১,মুসনাদে আহমদ: ২৪৫৩৪)
টিকটিকিকে প্রথম আঘাতে মারতে পারলে বেশি সওয়াবের কথা রয়েছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রথম আঘাতে যে ব্যক্তি কাকলাস (টিকটিকি) মেরে ফেলবে, তার জন্য রয়েছে এত এত পরিমাণ সওয়াব। আর যে ব্যক্তি দুই আঘাতে তাকে মেরে ফেলবে, তার জন্য এত এত পরিমাণ সওয়াব, প্রথমবারের চাইতে কম। আর যদি তৃতীয় আঘাতে মেরে ফেলে, তাহলে তার জন্য এত এত পরিমাণ সাওয়াব তবে দ্বিতীয়বারের চাইতে কম। (সহিহ মুসলিম: ৫৬৫১)
অন্য হাদিসে এসেছে, প্রথম আঘাতে কাকলাস (টিকটিকি) হত্যা করার সওয়াব একশ’, আর দ্বিতীয় আঘাতে এর চেয়ে কম আর তৃতীয় আঘাতে তার থেকে কম। (সহিহ মুসলিম: ৫৬৫২)
আরও পড়ুন: বিষধর প্রাণীর ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া
টিকটিকি হত্যা জায়েজ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো- এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। শরিয়তের মূলনীতি হলো—‘আদ-দারারু ইয়ুজালু’ অর্থ— ‘ক্ষতি দূর করা হবে’। সুতরাং যেকোনো ক্ষতিকর প্রাণী মেরে ফেলা জায়েজ।
টিকটিকি খাদ্যসামগ্রীর ওপর চলাচল করতে পারে। খাবারে লালা ফেলতে পারে, এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও টিকটিকির লেজের মধ্যে ক্ষতিকর মাদকতা রয়েছে। আমরা জানি যে, নেশাখোররা এর লেজ আগুনে পুড়িয়ে নেশা করে। ইবনুল মালেক (রহ) বলেন, টিকটিকি একটি কষ্টদানকারী ও বিষাক্ত প্রাণী। শয়তান একে ইবরাহিমের অগ্নিকুণ্ডে ফুঁক দেওয়া ছাড়াও অন্যান্য পাপের কাজে ব্যবহার করে থাকে। (মিরকাত: ৪১১৯-এর ব্যাখ্যা ইসলামি সওয়াল-জবাব ফতোয়া নং: ২৮৯০৫৫)
ইবনুল মালিক বলেন, খাবার নষ্ট করা টিকটিকির নেশা। বিশেষ করে লবণ। যদি সে পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা না পায় তাহলে ঘরের কোঠায় উঠে যায় এবং তার ঠিক নিচ বরাবর বিষ্ঠা নিক্ষেপ করে। হাদিসের বিবরণ থেকে বুঝা যায়, এটি সৃষ্টিগতভাবে ক্ষতিকারক। (মিরকাতুল মাফাতিহ: ৭/২৬৭১)
আরও পড়ুন: যেসব কারণে কুকুর পালা জায়েজ
আমাদের সমাজে টিকটিকির পরিবর্তে গিরগিটি মারার প্রচলন রয়েছে। যদিও গিরগিটি ক্ষতির কারণ হলে মারতে সমস্যা নেই। কিন্তু আয়েশা (রা.) টিকটিকি মারার জন্যই ঘরে বর্শা রাখতেন। টিকটিকিকে আরবিতে ওয়াজাগ বলা হয়। হাদিসেও ওয়াজাগ শব্দটি এসেছে। অর্থ টিকটিকি।
গিরগিটি মুহূর্তেই গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে; এজন্য মানুষ এটি মারতে বেশি উদ্যত হয়। তাছাড়া বাংলা অনুবাদ মেশকাতে এবং ‘আল-কাওছার’ আরবি-বাংলা অভিধানে ‘আল-ওয়াজাগ’ অর্থ গিরগিটি লেখা হয়েছে, যা শুদ্ধ নয়। মূলত গিরিগিটির আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘আল-হিরবাউ’। (বিস্তারিত দেখুন: আল-কামুস; আল-মুজামুল ওয়াসিত, পৃ-১০২৯; আরবি-বাংলা অভিধান (ঢাকা: বাংলা একাডেমি), ৩/২৫৫৪ পৃ; মিছবাহুল লুগাত পৃ-১৪৪; আল-মুনজিদ পৃ-১৯৮; ফরহঙ্গ-এ-জাদিদ, পৃ-৬৯১; ফ‘রহঙ্গ-ই-রববানি, পৃ: ৫০৭-৮)
আরও পড়ুন: খাঁচায় পাখি পালন কি জায়েজ?
তবে টিকটিকি মারার বিষয়টি নবীজির জরুরি নির্দেশ নয় বা অপরিহার্য বিষয় নয়। সুতরাং, এটাকে খুঁজে খুঁজে মারতে হবে—বিষয়টি এমন নয়। ক্ষতিকর হওয়ার কারণে প্রয়োজনবোধে মারা যাবে এবং এতে সওয়াব রয়েছে।