শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যেসব কারণে কুকুর পালা জায়েজ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

যেসব কারণে কুকুর পালা জায়েজ

প্রাণীজগতের অন্যান্যা সদস্যের মতো কুকুরও আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। এই প্রাণীটি সম্পর্কে ইসলামের বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। সখের বশবর্তী হয়ে কিংবা বিজাতীয় ফ্যাশন অবলম্বনে কুকুর রাখা বা লালন-পালন করার অনুমতি ইসলামে নেই। বরং এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, لاَ تَدْخُلُ المَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ ‘যে ঘরে কুকুর থাকে অথবা কোনো ধরনের (প্রাণীর) ছবি থাকে সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৪৯)

কুকুর পালন যেসব কারণে জায়েজ
বিশেষ প্রয়োজনে কুকুর পালন বৈধ। যেমন শিকারের উদ্দেশ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, পাহারার জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করা বৈধ। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: খ. ১৮, পৃ-২৬৪/ ফতোয়ায়ে আলমগিরি: খ. ৪, পৃ-২৪২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নগ্ন হয়ে গোসল করা কি জায়েজ?

যেসব কারণে নাজায়েজ
শখ করে ঘরে কুকুর রাখা, মানুষের চেয়ে কুকুরের যত্ন বেশি নেওয়া, কুকুরের সঙ্গে মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদি পশু পাহারা অথবা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া— কুকুর লালন-পালন করে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তির দুই কিরাত পরিমাণ নেকি কমে যায়।’ (মুসলিম: ১৫৭৫; তিরমিজি: ১৪৮৭)

হাদিসে এসেছে ‘এক কিরাত হলো, উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৬৫০)

কুকুর কি নাপাক?
হানাফি মাজহাবমতে, কুকুরের শরীর নাপাক নয়। তাই কুকুর কারো শরীর বা কাপড় স্পর্শ করলে তা নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। কুকুর মুখ দিয়ে কারো জামা টেনে ধরলে যদি কাপড়ে লালা লেগে যায়, তাহলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে; অন্যথায় নাপাক হবে না। (আল-বাহরুর রায়েক: ১/১০১; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৪৮; আদ্দুররুল মুখতার: ১/২০৮)
তবে কুকুরের গোশত খাওয়া সম্পূর্ণভাবে হারাম। এমনকি আসমানি সব ধর্মমতেও জায়েজ নেই।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: চুরির পণ্য কেনা কি জায়েজ?

কুকুর হত্যার হুকুম
শিকারির জন্য রাখা কুকুর ও পাহারার জন্য রাখা কুকুর মেরে ফেলা— সর্বসম্মতিক্রমে জায়েজ নেই। তবে পাগলা কুকুর ও কষ্টদায়ক কুকুর মেরে ফেলা— সব আলেমের মতে বৈধ। সাধারণ অবস্থায় থাকা কুকুর নিধন করা কিংবা মেরে ফেলা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। (কুয়েতভিত্তিক ইসলামি বিশ্বকোষ ‘আল-মওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা, খণ্ড: ৩৫, পৃষ্ঠা-১৩২-১৩৩)

কুকুরকে পানাহার করানোর হুকুম
সম্ভব হলে কুকুরকে খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া, কুকুর কোথাও পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করা ইসলামের দৃষ্টিতে সওয়াবের কাজ। পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে ব্যভিচারী নারীকেও জান্নাত দেওয়া হয়েছে বলে হাদিসে এসেছে। (বুখারি: ৩৪৬৭)

ঘরে কুকুর রাখা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ
কুকুরের লালা যেহেতু নাপাক, তাই কোনো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে তা তিন বা সাতবার ধৌত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশের পেছনে কয়েকটি যুক্তি আছে—
প্রথমত: কুকুরের মধ্যে শয়তানের প্রভাব বেশি। তাই আজানের সময় কুকুর আওয়াজ করে। 
দ্বিতীয়ত: কুকুর মনিবভক্ত হলেও তার মধ্যে খারাপ স্বভাব বেশি। যেমন—অন্যকে সহ্য না করা, সব সময় দৌড়-ঝাঁপে লিপ্ত থাকা, পচা ও নিকৃষ্ট খাবার খাওয়া, যেখানে-সেখানে অশ্লীল কাজে লিপ্ত থাকা, খাবার দেখলে লালায়িত হওয়া ইত্যাদি। ‘সঙ্গীর প্রভাবে মানুষ প্রভাবান্বিত হয়’—এর আলোকে কুকুরের সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। 
তৃতীয়ত: কুকুর যেন মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য কুকুরের সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। কেননা কুকুরের নখ ও মুখে বিষাক্ত জীবাণু রয়েছে। কুকুরের ওপর আস্থা রাখা যায় না। যেকোনো সময় সে মানুষের ক্ষতি করতে পারে। এতে জলাতঙ্কসহ নানা রোগ হতে পারে। 
চতুর্থত: আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, নিজ ঘরে, বিছানায় কুকুর রাখলে অ্যালার্জি, ভাইরাস সংক্রমণসহ বিভিন্ন বিপত্তি ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন: যেসব গুনাহের কারণে আল্লাহ রাগ করেন

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. ইউসুফ আল-কারাজাভি ‘আল-হালালু ওয়াল হারামু ফিল ইসলাম’ শীর্ষক বইয়ে কুকুর নিয়ে জার্মান ও লন্ডনের বিভিন্ন গবেষকের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিচার করলে কুকুর পালা ও তার সঙ্গে হাস্যরসিকতায় যে বিপদ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের ওপর ঘনীভূত হয়ে আসতে পারে, তাকে সামান্য ও নগণ্য মনে করা কিছুতেই উচিত নয়। অনেক লোক নিজের অজ্ঞতার কারণে ভারি মাসুল দিতে বাধ্য হয়। তার কারণ- কুকুরের দেহে এমন এমন জীবাণু রয়েছে, যা এমন রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা স্থায়ী এবং যা চিকিৎসা করে সারানো যায় না। কত লোক যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন দিতে বাধ্য হয় তা গুণে শেষ করা যায় না। 

এসব জীবাণু মানুষের কলিজায় প্রবেশ করে। আর সেখানে নানাভাবে আত্মপ্রকাশ করে। তা অনেক সময় ফুসফুসে, ডিম্ব, তিল্লি, গুর্দা ও মস্তকের ভেতরে প্রবেশ করে। তখন এগুলোর আকৃতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এমন অবস্থা দেখা দেয় যে বিশেষজ্ঞরাও তা ধরতে ও চিনতে অক্ষম হয়ে পড়েন। যা-ই হোক, এ জীবাণুর কারণে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, তা দেহের যে অংশেই হোক না কেন, স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর ও মারাত্মক।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামি নিয়মনীতি অবলম্বনের মাধ্যমে পশু-পাখি লালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর