ধর্ম ডেস্ক
২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০২:২১ পিএম
রাগ সহজাত মানবীয় ত্রুটি হলেও একে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। যারা তা করতে সক্ষম হবে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হবেন। রাগ দমনকারীদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, (তারাই মহসিন বা সৎকর্মশীল) বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)
কঠিন রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাকে প্রকৃত বীরত্ব বলে ঘোষণা করা হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (বুখারি: ৬৮০৯)
হাদিসে রাগ দমনকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তুমি রাগ করবে না, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত’ (তিবরানি: ২১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (স.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)
আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ-শান্তির বর্ণনা
শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার প্রভাবে রাগ হতে পারে। পাশাপাশি অনিদ্রার কারণেও রাগ সৃষ্টি হয়। এ থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অথচ এই পরামর্শ প্রিয়নবী (স.) সাহাবিদের দিতেন। নবীজি (স.) অহেতুক রাতজাগা পছন্দ করতেন না। বারজাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর (না ঘুমিয়ে) গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন।’ (বুখারি: ৫৬৮)
কখনো কখনো মানসিক কারণেও মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। যে কারণে মানুষ কথায় কথায় মেজাজ হারিয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য নিচের আমলগুলো করা যেতে পারে।
তাউজ পড়া: দুই ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর কাছে বসে পরস্পর গালাগাল করছিলেন। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে তাহলে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। সে বাক্যটি হলো- أعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাঝিম।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই’। (মুসলিম: ৬৮১২)
আরও পড়ুন: শয়তান যেভাবে নামাজে বিঘ্ন ঘটায়
চুপ থাকা: রাগের সময় চুপ থাকার কথাটি প্রিয়নবী (স.) তিনবার বলেছেন। চুপ থাকলে রাগ দমন হয়। রাগের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো; কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৭৮৬)
শুয়ে পড়া: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (আবু দাউদ: ৪৭৮৪)
অজু করা: রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয়ই পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (আবু দাউদ: ৪৭৮৬)
প্রচণ্ড রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা হাদিস অনুযায়ী বীরপুরুষের পরিচয় বহন করে। সুতরাং, রাগের সময় উপরোল্লিখিত সুন্নতের উপর আমল করা উম্মতের সবার জন্য জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাগমুক্ত থাকতে সুন্নতের আমলে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।