শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শয়তান যেভাবে নামাজে বিঘ্ন ঘটায়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২, ০৩:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

শয়তান যেভাবে নামাজে বিঘ্ন ঘটায়

শয়তান আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়াকে গ্রহণ করেছে। মুমিনের পেছনে লেগে থাকাই তার আসল কাজ। মহান আল্লাহর সামনে মানবজাতিকে সত্যচ্যুত করার অঙ্গীকার করেছিল সে। আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘আল্লাহ তাকে লানত করেন এবং সে বলে, আমি অবশ্যই আপনার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেবো।’ (সুরা নিসা: ১১৮)

শয়তান থেকে দূরে থাকতে, তার ধোঁকা থেকে বাঁচতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেছেন এভাবে— ‘শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ করো।’ (সুরা ফাতির: ৬)

শয়তান বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হলো, মুমিনের নামাজ নষ্ট করা। কারণ ‘যারা নামাজের হেফাজত করে, তারাই সম্মানিত হবে জান্নাতে।’ (সুরা মাআরিজ: ৩৪-৩৫)

নামাজে মনোযোগ নষ্ট করে শয়তান

শয়তান নামাজিদেরকে নামাজে অমনোযোগী করার চেষ্টা করে। নামাজি মুসল্লির মনে বিভিন্ন দুনিয়াবি চিন্তা প্রবেশ করিয়ে দেয়। ফলে নামাজে মুসল্লির মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আজানের শব্দ না শোনে। যখন আজান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন নামাজের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পোঁছে যে, সে কয় রাকাত নামাজ আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না। (বুখারি: ৬০৮)

নামাজে উদাসীনতা সৃষ্টি করে


বিজ্ঞাপন


শয়তান কখনো কুমন্ত্রণা দিয়ে নামাজির মনে উদাসীনতা এনে দেয়। নামাজে উদাসীনতা বলতে যথাসময়ে নামাজ আদায় না করা, যখন মন চায় তখন পড়া, নম্র ও একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ না পড়া অথবা মোটেই না পড়াকে বোঝানো হয়েছে। যা একজন মুমিনকে ধ্বংস করে দেয়। পবিত্র কোরআনে সেসব নামাজির ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, কাজেই দুর্ভোগ সে নামাজ আদায়কারীদের, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন। (সুরা মাউন: ৪-৫)

নামাজে এদিক-ওদিক তাকানোর কুমন্ত্রণা শয়তানের

আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (স.)-কে নামাজে এদিক-ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, এটা এক ধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার নামাজ থেকে বিশেষ অংশ ছিনিয়ে নেয়। (বুখারি: ৭৫১)

নামাজির মনে লৌকিকতা সৃষ্টি করা

শয়তান কখনো নামাজির মনে অহংকার, লৌকিকতা এনে নামাজির নামাজ ছিনতাই করে। তখন লোক দেখানো উদ্দেশ্য হওয়ার কারণে সেই নামাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়াকে মুনাফিকদের কাজ বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। ‘যখন তারা (মুনাফিকরা) নামাজে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে, শুধু লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে।’ (সুরা নিসা: ১৪২)

নামাজ ও কেরাতে যারা বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং নামাজির মনে সংশয় তৈরি করে, তারা খিনজাব শ্রেণির শয়তান। তাদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় হলো বামদিকে তিনবার থুথু ফেলা। হজরত উসমান বিন আবিল আস (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, শয়তান আমার নামাজ ও কেরাতের মাঝে এসে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং আমার মনে সংশয় সৃষ্টি করে। অতঃপর নবী কারিম (স.) বললেন, এটি খিনজাব নামক শয়তানের কাজ। যখন তুমি এর প্রভাব অনুভব করবে, তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে এবং বামদিকে তিনবার থুথু ফেলবে। আমি তাই করলাম এবং আল্লাহ তাআলা তাকে আমার থেকে বিতাড়িত করলেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২২০৩)

প্রসঙ্গত, শয়তান দুই প্রকার। মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান। মানুষ শয়তানের খপ্পর থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলা নবী (স.)-কে তাদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন, সুকৌশলে ও উত্তমভাবে তাদের মোকাবেলা করতে বলেছেন। আর জিন শয়তানের অনিষ্ট হতে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। কারণ সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে বলে বাহ্যিকভাবে তার মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

শয়তানকে মোকাবেলা করার উপায়

শয়তানের মোকাবেলায় এমন শক্তির প্রয়োজন, যিনি তার লাগাম ধরে টান দিতে সক্ষম, তার চক্রান্তকে ব্যর্থ করতে সক্ষম। তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন-

‘যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তুমি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করো, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা হা-মিম সাজদাহ: ৩৬)

‘আপনি বলুন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তানদের সব অমঙ্গল ও অনিষ্টতা থেকে।’ (সুরা মুমিনুন: ৯৭)

শয়তানের যাবতীয় অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে নবী করিম (স.) সাহাবাদেরকে বিভিন্ন আমল ও দোয়া শিখিয়েছেন। একটি দোয়া হলো-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদির। অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সহিহ বুখারি: ৩২৯৩)

সারাদিন শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে কার্যকরী আরেকটি দোয়া হচ্ছে—

أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ‘আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বিওয়াজহিল কারিম ওয়া সুলত্বানিহিল কাদিমি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’ অর্থ: ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে; তাঁর মহানুভব চেহারার কাছে; তাঁর অনাদি-অনন্ত কর্তৃত্বের কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মুসনাদে আহমাদ, বুখারি ও মসলিম)

আল্লাহ তালা মুসলিম উম্মাহর সকল নামাজিকে এবং মুমিন বান্দাদেরকে শয়তানের যাবতীয় অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর