১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:১৯ পিএম
বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। বর্তমানে তারা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধরত। এরই মধ্যে উভয় পক্ষে নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। মহানবী (স.) এই ইহুদিদের সঙ্গে মুসলিমদের যুদ্ধ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানগণ ইহুদি সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলমানগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে- হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইহুদি আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু ’গারকাদ’ গাছ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইহুদিদের গাছ। (সহিহ মুসলিম: ৭০৭৫)
যুগে যুগে ইহুদিদের অপকর্ম ও শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে, তারা আল্লাহর নাফরমানির সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে। পবিত্র কোরআন ঘোষণা করেছে, ইহুদিরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী জাতি। ‘যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা জমিনে ফিতনা ফাসাদ ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা মায়েদা: ৬৪) ‘...তারা ছিল নাফরমান ও সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা বাকারা: ৬১)
নবীগণ তাদের সতর্ক করলে তারা ওই নবীদের হত্যা করতে থাকে। (তাফসিরে বয়ানুল কোরআন: ২/৩৬৭-৩৬৮)
হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ইহুদিদের অশ্লীল কার্যকলাপের বিরোধিতা করলে তারা তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে কতল করে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, বনি ইসরাইল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম: ১/১২৬)
আরও পড়ুন: কোরআনের বর্ণনায় ইহুদি সম্প্রদায়
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যায়, ইউরোপ থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করা হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর তারা ১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ইউরোপ থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে ঠাঁই নেয়। সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিনিয়তই মুসলমানদের জমি দখল করে এবং অবৈধভাবে গড়ে তুলে স্থাপনা। এভাবে ভূখণ্ড দখলের মধ্যদিয়ে তারা রাষ্ট্র গঠন করে। নিজেদের আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করে চলেছে অদ্যাবধি।
তবে রাসুল (স.) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, কেয়ামতের আগে অবশ্যই এ ইহুদি জাতি মুসলিমদের হাতে পরাস্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ: ২৬৩৪৩)
মসজিদুল আকসার ভূমি তথা ফিলিস্তিন মুসলমানদের কাছে খুবই মর্যাদাপূর্ণ। অসংখ্য নবী-রাসুলের পূণ্যভূমি ফিলিস্তিন। কোরআনের ভাষায় এ অঞ্চলের নাম বিলাদ আশ-শাম। বর্তমানের সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ড প্রাচীন মুলকে শামের অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের কাছে বায়তুল মুকাদ্দাস মক্কা ও মদিনার পরে সবচেয়ে পবিত্রতম স্থাপনা। (সহিহ বুখারি: ১১১৫) এছাড়াও প্রিয়নবী (স.) ওহি লাভ ও নবুয়ত প্রকাশের সময় বায়তুল মুকাদ্দাসই মুসলমানদের কিবলা ছিল। (সুরা বাকারা: ১৪২-১৫১) মহানবী (স.) বায়তুল মুকাদ্দাস থেকেই মেরাজে গমন করেছিলেন। (সুরা বনি ইসরাইল: ১)
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন নিয়ে কোরআন-হাদিসে যা আছে
কিন্তু বর্তমানে ইহুদিরা এই মসজিদ দখল করে রেখেছে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয়ে যায়। সেই থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস তাদের দখলে রয়েছে। যদিও তারাও এই স্থানকে মর্যাদার চোখে দেখে। তাদের কাছে এটি পবিত্র ভূমিখ্যাত ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা ‘ঈশ্বরের ঘর’। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে বায়তুল মুকাদ্দাসে কড়াকড়ি শুরু করে, বিধি-নিষেধ আরোপ করে, এমনকি মসজিদে গুলি করে রক্তাক্তও করেছে মুসলমানদের।
হাদিস শরিফ বলছে, এসবের একদিন শেষ হবে। মুসলমানদের একটি দল তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে এবং বিজয়ী হবে। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে। শত্রুর মনে পরাক্রমশালী থাকবে। দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো বিরোধী পক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর আদেশ তথা কেয়ামত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কোথায় থাকবেন? রাসুল (স.) বললেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস এবং তার আশপাশে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২১২৮৬)