০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৩ পিএম
ইসলামের চূড়ান্ত কালেমা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ বা উপাস্য নেই।’ এটি মানবজীবনের পরম বাক্য। আল্লাহর কাছে এই ছোট্ট বাক্যটির মর্যাদা আসমান-জমিনের চেয়েও বেশি। হাদিসে এই বাক্যটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির বলা হয়েছে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো-لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর সর্বোত্তম দোয়া হলো- الْحَمْدُ للهِ আল-হামদুলিল্লাহ। (মেশকাত: ২৩০৬; তিরমিজি: ৩৩৮৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮০০; মুসতাদরাকে হাকিম: ১৮৩৪)
এই কালেমার ওজন সম্পর্কে মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসা (আ.) একবার আল্লাহর কাছে আরজ করেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যার মাধ্যমে আমি আপনার জিকির করব এবং আপনার কাছে প্রার্থনা করব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন- হে মুসা! তুমি (শুধু) বলো- لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, হজরত মুসা (আ.) বললেন, হে আল্লাহ! আপনার সব বান্দাই তো এই জিকির করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন (আবারও) বললেন, তুমি বলো- لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’হজরত মুসা (আ.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’কিন্তু আমি চাইছি আমাকে বিশেষ একটি দোয়া শিখিয়ে দেবেন; যা কেবল আমার জন্য হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন, হে মুসা! আমি ছাড়া সাত আসমান, সাত জমিন ও তার মাঝে যা রয়েছে সবকিছু যদি এক পাল্লায় থাকে আর (শুধু) لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্য পাল্লায় থাকে, তাহলে لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লা ভারি হবে।' (মুসতাদরাকে হাকেম)
তবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ শুধু মুখে বললেই দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং তার প্রকৃত অর্থ ও মৌলিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা জরুরি, যেমন শিরক প্রত্যাখ্যান করা, সকল ইবাদতের মালিকানা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা, কালেমার সংশ্লিষ্ট বিষয়কে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। এভাবে বান্দা প্রকৃত মুসলিম ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর পরিবারভুক্ত হয়।
আরও পড়ুন: মহামারির মতো ঈমান হারাবে মুসলমান
অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শুধু মৌখিক স্বীকারোক্তিতে মুসলমান হওয়ার সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি জিজ্ঞাসা করুন, তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে কে রুজি দান করেন? কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কে মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! আপনি বলুন, তারপরও কি তোমরা ভয় করবে না? (সুরা ইউনুস: ৩১)
কোরআন মাজিদে এরকম আয়াত আরও অনেক রয়েছে যে, সে যুগের অবিশ্বাসীরা মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর স্বীকৃত ঠিকই দিত, কিন্তু কাজ করত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর বিপরীত। তাই তারা তারা মুসলমান হয়ে যায়নি। কেননা তারা কালেমায়ে তাইয়েবা যেই উলুহিয়াতের দাবী জানায়, তা অস্বীকার করেছিল।
সুতরাং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর মর্মকথা হলো- সত্য এবং হক উপাস্য বলতে যে ইলাহকে বুঝায় তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ, যার কোনো শরিক নেই এবং তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার অধিকারী। অর্থাৎ শুধু তাঁরই ইবাদত করতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁরই হুকুম মেনে নিতে হবে। এ মহান কালেমার অর্থে এটাও অন্তর্ভুক্ত যে, তিনি ব্যতীত যত উপাস্য আছে সব অসত্য এবং বাতিল, তাই তারা ইবাদত পাওয়ার অযোগ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, আমাকে এরূপ আদেশই দেওয়া হয়েছে যে, আমি যেন কেবল আল্লাহর ইবাদত করি এবং তার সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত না করি। আমি যেন কেবল তার দিকেই দাওয়াত দেই এবং তার কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন’। (সুরা রাদ: ৩৬)
আরও পড়ুন: সব নবী কি মুসলিম ছিলেন?
এই কালেমার সংরক্ষকরা ইহকালে পরম মর্যাদার অধিকারী। পরকালেও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বিশেষ সুপারিশে ধন্য হবেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আবু হুরায়রা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না। কেননা, আমি দেখেছি হাদিসের প্রতি তোমার বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠ চিত্তে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের স্বীকারোক্তি দেবে।’ (সহিহ বুখারি: ৯৯)
লা ইলাহা এর ওজন ও শক্তি সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর নবী নুহ-এর ইন্তেকালের সময় উপস্থিত হলে তিনি তাঁর পুত্রকে বলেন, আমি তোমাকে একটি উপদেশ দিচ্ছি। দুটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি এবং দুটি বিষয় নিষেধ করছি। আমি তোমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর নির্দেশ দিচ্ছি। কেননা সাত আসমান ও সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় তোলা হয় এবং অপর পাল্লায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তোলা হয়, তবে সেই তাওহিদের পাল্লাই ভারী হবে। সাত আসমান ও সাত জমিন যদি একটি জটিল গ্রন্থির রূপ ধারণ করে, তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি’ তা চুরমার করে দেবে। কেননা তা প্রত্যেক বস্তুর নামাজ এবং সবাই এর বদৌলতে রিজিক লাভ করে থাকে। আর আমি তোমাকে বারণ করছি শিরক ও অহংকারে লিপ্ত হতে....।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫৫০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ মনে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেওয়ার তাওফিক দিন। বেশি বেশি কালেমার জিকির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।