শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী

মহামারির মতো ঈমান হারাবে মুসলমান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০১:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

মহামারির মতো ঈমান হারাবে মুসলমান
প্রতীকী ছবি

ঈমান মুসলমানের সর্বোত্তম সম্পদ। ঈমান না থাকলে কোনো নেক আমলেরই মূল্য নেই। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। শুধু তারা ব্যতীত; যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।’ (সুরা আসর: ১-২)

শেষ জামানার একটি নিদর্শন হলো—রিদ্দা বা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মহামারি আকার ধারণ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের টুকরোগুলোর মতো (যা একটার পর একটা আসতে থাকে) ফেতনা আসার আগে নেকির কাজ দ্রুত করে ফেলো। মানুষ সেসময় সকালে মুমিন থাকবে এবং সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে অথবা সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। নিজের দ্বীনকে দুনিয়ার সম্পদের বিনিময়ে বিক্রি করবে।’ (মুসলিম: ১১৮; তিরমিজি: ২১৯৫, আহমদ: ৭৯৭০, ৮৬৩১, ৮৮২৯)


বিজ্ঞাপন


অর্থাৎ কেয়ামতের আগে মানুষ এতটাই দুনিয়ামুখী হবে যে তারা দুনিয়ার বিনিময়ে ইসলামকে বিক্রি করে দেবে। দুনিয়া হাসিলের স্বার্থে কুফরি কাজ করবে বা কুফরি কথা বলে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। অর্থের বিনিময়ে ইসলামের বিরোধিতা করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালাগালি করবে। পার্থিব স্বার্থে কাফেরদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে। টাকা-পয়সার লোভে মদ, জেনা, সুদ, ঘুষ ইত্যাদি হারাম জিনিসকে হালাল বলে ফতোয়া দেবে। এভাবে আর্থিক লোভ-লালসার শিকার হয়ে একশ্রেণির মানুষ দ্বীনকে বিক্রয় করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। 

হাদিস অনুযায়ী, মানুষ জানতেও পারবে না যে সে আর মুসলিম নেই। অথচ সে নিজেকে মুসলিম দাবি করবে। আমাদের চারপাশেই এরা ঘুরবে, ফিরবে। একই টেবিলে বসে খাবে। আমাদের মেয়ে বোনদের সঙ্গে তাদের বিয়ে হবে। অথচ তারা মুসলিম নয়।

এসব বেদ্বীনের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দেওয়া হয় অথচ সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? অবশ্যই আমি (আল্লাহ) অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’ (সুরা আস-সাজদাহ: ২২)

বিভিন্ন কারণে মানুষ ঈমানহারা হয়। যেমন আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আনিত বিধানকে অপছন্দ করা, দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, জাদু করা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফের-মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা ইত্যাদি। (দেখুন- সুরা নিসা: ৪৮, ৬৫; সুরা সাজদাহ: ২২; সুরা তওবা: ৬৫-৬৬; সুরা বাকারা: ১০২; সুরা তাওবা: ২৩; সুরা নিসা: ১৪; সুরা নিসা: ৬০; সুরা মায়েদা: ৫১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন
ছোট-বড় শিরক চেনার ও আত্মরক্ষার উপায়
আল্লাহ ‘সফল’ ঘোষণা করেছেন যাদের

দ্বীনের পথে অবিচল থাকার জন্য প্রিয়নবী (স.) সবসময় এই দোয়া করতেন—‘ইয়া মুকাল্লিবাল ক্বুলুব সাব্বিত ক্বালবি আলা দীনিক’ অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তোমার দীনের উপর অটল রাখো।’ (তিরমিজি: ৩৫২২)

প্রিয় পাঠক! আমরা এখন হয়ত সেই যুগেই পদার্পণ করছি। পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে মানুষ। এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আমাদের ফিরে যেতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.)-এর দেখানো পথে। হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুই বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ তা ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত।’ (মুয়াত্তা মালিক: ১৬০৪)

আরও পড়ুন: গুনাহ মাফ ছাড়াও ইস্তেগফারের ৬ বিস্ময়কর উপকার

হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা মুসলিমদের জামাত ও ইমামের সঙ্গে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, ‘তাহলে সেসব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে, যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আঁকড়ে থাকো এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।’ (মুসলিম: ৪৬৭৮)

ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রিয়নবী (স.) স্বীয় উম্মতকে দোয়াও শিক্ষা দিয়েছেন। একটি দোয়া হলো— উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফিতানি, মা জহারা মিনহা ওয়া মা বাতানা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল ফিতনা থেকে পরিত্রাণ চাই।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৭৭৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই ফেতনার জামানায় বেঈমান ও মুরতাদের মিছিলে শামিল হওয়া থেকে হেফাজত করুন। যে ঈমান হারিয়ে গেলে সব আমলই অর্থহীন হয়ে যাবে সেই ঈমানটুকু নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর